চাঁদপুরে ইলিশ শিকারে জেলেদের নদীতে নামার প্রস্তুতি
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে রোববার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাতে চাঁদপুরের অর্ধ লক্ষাধিক জেলে মাছ শিকারে নদীতে নামবেন। ইলিশ শিকারের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এখন জেলেরা। ইতোমধ্যে তারা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও সেরে নিয়েছেন। গত ১২ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর, ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের ছয়টি স্থানকে ইলিশের অভয়াশ্রম কেন্দ্র ঘোষণা করে সরকার। এ সময় নদীতে যে কোনো ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার সময় চাঁদপুরের নিবন্ধিত ৪৫ হাজার ৩৫ জন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সরকার।
চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার পদ্মা মেঘনা নদীতে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন অনেক জেলে নানান অভিযোগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২২ দিনের জন্য ২৫ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও দিয়েছে ১৭-১৮ আবার কেউ পেয়েছে ১৯ কেজি করে চাল। শুধু চাল দিলে কি আর সংসার চলে। সংসার চালাতে আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন আছে। তারা এর সঙ্গে নগদ অর্থ দেয়ারও দাবি জানান। তাদের অনেকে ঋণ করে নৌকা ও জাল মেরামত করেছে। সংসারের খরচ মিটিয়েছে। এখন নদীতে নেমে মাছ পেলে হয়তো কিছুটা ঘাটতি তারা পোষাতে পারবে।
সদরের আনন্দ বাজার এলাকার জেলে রতন ও মানিক মিয়া জানান, সরকার যে অভিযান দেয়, তা আমরা মানি। কিন্তু যে পরিমাণ খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। এই অবসর সময়ে আমাদের সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। কারণ বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেশী। তাছাড়া ঋণ করে এখন অনেকটা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। কিভাবে ঋণের টাকা শোধ করবো, তা নিয়ে চিন্তা করছি। মাছ পাওয়ার আশায় নদীতে নামলেও যদি মাছ না পাই, তাহলে মাথায় ঋণের বোঝা আরও বাড়বে।
গত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সচেতন জেলেরা নদীতে না নামলেও একশ্রেণির জেলে মা ইলিশ নিধনে তৎপর ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের অনেককেই আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে বেপরোয়া জেলেদের হামলায় বেশ কয়েকজন নৌ পুলিশ আহত হয়েছে। আবার অনেক নৌ পুলিশ তাদের আক্রমণের শিকার হয়ে নিজেদের ফাঁড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, এবারের অভিযান সফল হয়েছে। তাই ইলিশ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছি। তবে অভিযানকালে অসাধু জেলেদের আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও ১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এবার জেলা টাস্কফোর্স ৫০৩টি অভিযান, ৬৫টি মোবাইল কোর্ট, ২১২টি মামলা ও ১৮২ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। আর ১৫ লাখ ১৮৫ মিটার কারেন্টজাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে এবং ২৪৩১ মেট্রিক টন ইলিশ আটক করে গরিব-দুস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান আরও বলেন, ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ডিম ছাড়ার জন্য এই সময়টাতে মিঠাপানিতে ছুটে আসে। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার ২২ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স তা সর্বাত্মক সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। অভিযানকালে জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে জনপ্রতি ২৫ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও জেলা টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল হওয়ায় এবছর ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং জনসাধারণ ইলিশ কিনে খেতে পারবে।
এদিকে নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবারের অভিযান অনেক বেশি কার্যকর ছিল। ২২ দিনের এই অভিযানটি ছিলো যৌথ অভিযান। নৌ পুলিশের সাথে মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, জেলা পুলিশ, নৌ বাহিনী, সম্মিলিত ভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান চলাকালীন ৭০ লক্ষাধিক মিটার জাল, ২ হাজার ৪৩ কেজি ইলিশ মাছ, ১০৪টি মাছ ধরার নৌকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও নৌ পুলিশ ১৭২ জন জেলেকে আটক করে।
তিনি বলেন, অভিযানে জেলেদের আক্রমণে বেশ কয়েকজন নৌ পুলিশ আহত হয়।
আরটিভি/এএএ/এআর
মন্তব্য করুন