অপমান সইতে না পেরে স্কুলশিক্ষকের আত্মহত্যা
টাঙ্গাইলের সখীপুরে অপমান সইতে না পেরে গলায় ফাঁসি লাগিয়ে নুরুল ইসলাম (৫৫) নামের এক স্কুলশিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এর আগে সোমবার (৪ নভেম্বর) রাতে তিনি রান্না ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। সখীপুর থানার ওসি মো. জাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নুরুল ইসলাম বড়চওনা ইউনিয়নের দাড়িপাকা গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ডের আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি উপজেলার দাড়িপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করেছেন, এমন অভিযোগ তুলে গত ২৮ আগস্ট ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করা হয়। ওই দিন বিকেলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় দেলদুয়ার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌর চন্দ্রকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। মঙ্গলবার তদন্তের জন্য তার ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা ছিল।
এদিকে সোমবার দুপুরে ওই শিক্ষকের ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন খাইরুল ইসলাম (২৬) নামে এক শিক্ষার্থী। এরপর বিকেলে দাড়িপাকা বাজারে লোকজনের সামনে শিক্ষককে অপমান করেন। ফেসবুক পোস্টে খাইরুল লেখেন, ‘এই কুকুরকে চিনে রাখেন। শিক্ষকতার নামে প্রাইমারি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়ানোর নামে বিকৃত যৌনাচার করত। এর শাস্তি অবধারিত। এর আগে পেছনে যারা সাহায্য করছে। তাদের লিস্ট করা হচ্ছে।’
খাইরুল ইসলাম ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা করে চাকরি খুঁজছেন। তিনি ওই শিক্ষকের সরাসরি ছাত্র ছিলেন।
ওই শিক্ষকের স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, খাইরুল তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে শিক্ষকসমাজে তাকে কলুষিত করেছেন। তার স্বামী তাকে বলেছিলেন, ‘এই মুখ আমি কাউরে দেখাব না।’
ওই শিক্ষকের মেয়ে বলেন, ‘বাবাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে ওরা। ওরা বাবার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। এটা আত্মহত্যা নয়, হত্যা। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
এ বিষয়ে খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন তিনি মারা গেছেন। ওনার বিরুদ্ধে এখন আমার কোনো অভিযোগ নেই। তিনি যে আত্মহত্যা করবেন, তা আমার জানা ছিল না। আমি তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌর চন্দ্র দে বলেন, একটি লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আজ তদন্ত হওয়ার কথা ছিল। সকালে ওই শিক্ষকের মৃত্যুর খবর পেয়ে আর যাওয়া হয়নি। কারণ, মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয় না।
এ বিষয়ে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, ওই শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরটিভি/এফএ/এসএ
মন্তব্য করুন