চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-ভাঙচুর
চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহন চালকরা। বিক্ষুব্ধ চালকরা রাস্তায় গাছ ফেলে রেখে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় দু-গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় প্রায় ১৫ জন চালক গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। একপর্যায়ে চালকরা ক্ষিপ্ত হয়ে টোলঘর ভাংচুর করেন। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের গাছতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সড়কে চলাচলকারী কয়েক হাজার যাত্রী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হন। এর কিছুক্ষণ পরই সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, সকালে টোলের টাকা না থাকায় এক সিএনজি চালককে মারধর করেন টোল আদায়কারীরা। এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন ক্ষুব্ধ চালক ও শ্রমিকরা। হামলায় আহত চালকরা প্রশাসনের কাছে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং স্থায়ীভাবে চাঁদপুর সেতুর টোল বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ জানায় চালকরা।
৫ আগস্টের পর সেতুর টোল আদায় বন্ধ করে দেয় ছাত্র-জনতা। পরে জেলা প্রশাসকের দেওয়া ৭ নির্দেশনা মেনে পুনরায় টোল আদায়ের অনুমতি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। যদিও সেতুর টোল আদায় বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন চালক ও শ্রমিকরা।
সিএনজির কয়েক জন চালক বলেন, বুধবার থেকে তারা আবার নতুন করে টোল আদায় শুরু করেছে। এ জায়গায় আর কোনো টোল আদায় চলবে না। আমরা গত ২০ বছর ধরে টোল বাবদ টাকা দিয়েছে। আর টাকা দিতে পারব না। আমাদের এক চালকের কাছে টোলের টাকা না থাকায় তাকে মারধর করেন টোল আদায়কারীরা। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বাহার মিয়া বলেন, চাঁদপুর সেতুর টোল আদায় বন্ধে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ যানবাহন শ্রমিক ও চালকরা। এতে ওই সড়কের রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে চলাচল স্বাভাবিক হয়। বর্তমানে টোল আদায় বন্ধ রয়েছে।
সম্প্রতি সেতুটিতে মোটরসাইকেল চলাচলে পাঁচ টাকা টোল ধার্য করে কর্তৃপক্ষ। পরে টোল বন্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন বাইকাররা। এর ধারাবাহিকতায় সাধারণ যানবাহনের চালকরাও স্থায়ীভাবে টোল বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।
২০০৫ সালে ডাকাতিয়া নদীর ওপর চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে নির্মাণ করা হয় চাঁদপুর সেতু। ২০০৫ সালে উদ্বোধন করা হয়। নির্মাণ ব্যয় ছিল ১৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। ২৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি ব্যবহার করে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। দীর্ঘ ১৯ বছরে সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের দ্বিগুণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হলেও বন্ধ হয়নি টোল আদায়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চালকরা। দাবি জানান টোল বন্ধের।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মারুফ হোসেন বলেন, এই সেতুতে টোল আদায়ে এবারও তিন বছরের ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর্থিক পরিমাণ ৯ কোটি টাকার বেশি। চালকরা টোল বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি বা চিঠি দিয়েছে। অনেক আগে চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত শামছুল হক ভূঁইয়া টোল বন্ধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
আরটিভি/এএএ/এআর
মন্তব্য করুন