শ্রীপুরে স্কুলের দেড়শ বছরের পুরনো গাছ বিক্রির অভিযোগ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
গাজীপুরের শ্রীপুরের প্রহলাদপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে প্রায় দেড়’শ বছরের পুরনো দেবদারু গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। গাছের ছায়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকালে পিটি করতো এবং টিফিনের সময় গাছের নিচে বসে বিশ্রাম ও গল্প করতো। পুরনো গাছটি বিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবেও কাজ করতো। দেবদারু গাছটি বিদ্যালয় তথা এলাকার ঐহিত্য হিসাবে অনেকেই পরিচয় দিতো। প্রভাবশালীদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন কোনো কথা বলতেও সাহস পায় না। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযুক্তদের নাম দেওয়ার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিলে তিনিও ভয়ে তাদের নাম বলতে চাচ্ছেন না।
গত ২৫ অক্টোবর স্থানীয় প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এলাকার প্রভাবশালীরা দেড়শ বছরের পুরনো দেবদারু গাছটি কেটে ফেলে। গাছটি স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী জালাল মোল্লার কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় তারা। গাছের গোড়ার অংশ এখনো তোলা হয়নি। স্থানীয়রা বলেন পুরনো ওই গাছটি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যেতো। তবে বিক্রেতারা মাত্র ১৩ হাজার টাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দিয়ে রিসিট নিয়েছেন। বাকি ৭ হাজার টাকা গাছ কাটা বাবদ খরচ করা হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার, মিথি, মুন্নি, তুহীন হাসান, আজিজুল ইসলাম বলেন, গাছ থাকলে আমরা ছায়া পেতাম। গাছের ছায়ায় আমরা সকালে পিটি করতাম এবং টিফিনের সময় বিশ্রাম নিতাম। গাছ কেটে নেওয়ায় আমরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলাম।
মাঠের পাশের দোকানদার আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় দুই’শ বছরের পুরনো দেবদারু গাছ থেকে পাতা নিয়ে এলাকার মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠানে গেট তৈরি করতো। গাছটি মাঠের সৌন্দর্য বর্ধন করতো।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ বড় করার নামে দেড়শ বছরের পুরনো গাছটি কেটে ফেলার জন্য প্রভাবশালীরা অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এলাকার কিশোর কাইয়ুম হোসেন, কাউছার হোসেন, আনাছ, কচি, শওকত, রাখালিয়া গ্রামের মিনহাজ নিজেরাই মিটিং করে। একপর্যায়ে শিক্ষকদের চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অব্যাহতির হুমকি দিয়ে শিক্ষকদের চাপ প্রয়োগ করে বিদ্যালয়ের সামনের দেবদারু গাছ কাটার জন্য রেজুলেশন করিয়ে নেয়। তারা দেবদারু গাছ কাটার পক্ষে ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকার প্রায় শতাধিক লোকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন।
সরকারি নীতিমালা না মেনে অবৈধভাবে বন্ধের দিন শুক্রবার স্কুল মাঠের দেবদারু গাছ কেটে বিক্রি করে দেয়ায় বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, সাবেক ছাত্র এবং এলাকার সচেতন মহলে আলোচিত হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, রবিবার (২৭ অক্টোবর) শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে প্রভবশালী পাশের কদমা গ্রামের মমিন মোল্লা, জিয়াউর রহমান, নাজিম উদ্দিন মোল্লা, হালিম মোল্লা এবং কাঠ ব্যবসায়ী জালাল মোল্লা তাকে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।
অভিযুক্তের একজন নাজিম উদ্দিন মোল্লা জানায়, অত্র এলাকায় কোন খেলার মাঠ নেই। প্রতিদিন বিকেলে এলাকার ছাত্র-যুবকেরা এ মাঠেই খেলাধুলা করে থাকে। গাছটি পুরনো হলেও স্কুলের সামনে এবং মাঠের মধ্যে থাকায় খেলাধুলা করতে সমস্যা হয়ে থাকে। তাই এলাকার সকলের মতামতের ভিত্তিতে পুরনো এ গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে।
প্রতাপপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, শুক্রবার বন্ধের দিন গাছ কেটেছে। আমাকে স্থানীয় একজন ফোন দিয়ে বলে গাছ কেটে ফেলেছে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতিসহ এলাকার গণ্যমাণ্যদেরকে জানিয়েছেন। দুদিন পর রবিবার বিদ্যালয়ে এসে অন্যান্য শিক্ষকদের উপস্থিতিতে তারা আমার কাছে ১৩ হাজার টাকা জোড় করে জমা দিয়ে রিসিট নিয়ে যায়। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের (০১৭১২-২৮ ৪২৯৪) মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, আমাদের অনুমতি না নিয়েই গাছটি কেটে নেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী একত্র হয়ে প্রধান শিক্ষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে গাছটি কেটে নেয় বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছে। আমি উনাকে বলেছি যারা গাছ কেটে নিয়েছে তাদের নাম দেওয়ার জন্য। নাম দিলেই আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা করবো।
আরটিভি/এআর
মন্তব্য করুন