তিন দিন নিখোঁজের পর ৭ টুকরো লাশ মিলল শিল্পপতির
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি লেক থেকে পলিথিন ব্যাগে মোড়ানো এক ব্যক্তির সাত টুকরা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশে ৫ নম্বর সেক্টর থেকে তিনটি পলিথিন ব্যাগে লাশের খণ্ডাংশ উদ্ধার করা হয়। পরে মধ্যরাতে দাড়ি, নখ ও পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন স্বজনরা।
নিহত জসিম উদ্দিন মাসুম (৫৯) একজন শিল্পপতি। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। জড়িতদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য মিলেছে।
নিহতের বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বলেন, দাড়ি, নখ ও বাঁ পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে বাবার মরদেহ শনাক্ত করি। গত ১০ নভেম্বর বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছি। সেরা করদাতা হিসেবে আমার বাবা একাধিকবার কর বাহাদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি একজন শিল্পপতি। চাঁদ ডায়িং ফ্যাক্টরিসহ আমাদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাবার সঙ্গে কারও শত্রুতা রয়েছে বলে জানা নেই।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ নভেম্বর বিকেলে বাসা থেকে গাড়িতে করে বের হয়ে গুলশান যান জসিম উদ্দিন। এর পর ব্যক্তিগত গাড়িচালককে ছেড়ে দেন। চালককে জানিয়েছিলেন অন্য গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় যাবেন। তবে রাতে বাসায় না ফেরায় ও মোবাইল বন্ধ থাকায় পরদিন গুলশান থানায় জিডি করেন তার বড় ছেলে।
জিডির তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মো. রাশেদ বলেন, শিল্পপতি জসিম উদ্দিনের সর্বশেষ লোকেশন কাফরুলে দেখা গিয়েছিল। এরপর আর তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্রে জানা যায়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একাধিক ব্যক্তি এই হত্যায় জড়িত। ঢাকায় কোনো একটি বাসায় হত্যার পর তার মরদেহ রূপগঞ্জে নিয়ে ফেলা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে একজন নারী থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বুধবার রাতে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেপ্তারে বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযানও চালিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, সাত টুকরা লাশ উদ্ধারের পর প্রথমে পুলিশ বলেছিল, তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। পরে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর দেখা গেছে, তার বয়স ৫৯। স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, সকালে কাঞ্চন-কুড়িল সড়কের পাশে লেকের পানিতে হাত ধোয়ার সময় দুর্গন্ধ পান এক রিকশাচালক। পরে তিনি স্থানীয় আরও কয়েকজনকে ডাক দিলে পলিথিনে মোড়ানো ব্যাগগুলো দেখতে পান তারা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে কালো রঙের তিনটি পলিথিন ব্যাগে মরদেহের খণ্ডাংশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, ওই ব্যক্তি অন্তত তিন দিন আগে মারা গেছেন বলে ধারণা করছি। হত্যার পর তার দেহের বিভিন্ন অংশ কেটে টুকরা করে পলিথিন ব্যাগে ভরে লেকে ফেলে দেওয়া হয়। তার শরীরের দুটি অংশ এখনও পাওয়া যায়নি। আমরা যথাসম্ভব খুঁজেও পাইনি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে সিআইডি ও পিবিআই সদস্যরা আলামত সংগ্রহ করেছেন। খণ্ডিত টুকরা পচে-গলে যাওয়ায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে মরদেহ শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পরে জিডির সূত্র ধরে মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হয়।
আরটিভি/এফআই-টি
মন্তব্য করুন