ময়মনসিংহে আহত প্রেমিকের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ময়মনসিংহ নগরীতে প্রেমঘটিত ঘটনায় ফয়সাল খান শুভ (৩০) নামে এক যুবক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করছেন।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত ফয়সাল খান শুভ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর এলাকার সেলিম খানের ছেলে। তিনি কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডের বোন জামাইয়ের বাসায় বসবাস করে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।
এর আগে গত ১০ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডের একটি বাসার ছাঁদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন ফয়সাল।
নিহত ফয়সালের স্বজনরা জানান, ফয়সাল খান শুভর সঙ্গে একই গ্রামের সুলতান উদ্দিনের মেয়ে সাদিয়া তাহসিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দীর্ঘ ৪ বছর চলে দুজনের প্রেম। সম্প্রতি সাদিয়া তাহসিনের ঢাকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এসএএস সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবে অডিটর পদে চাকরি হয়। সেখান থেকে সাদিয়া তাহসিন এক ট্রেনিংয়ে গিয়ে তার ব্যাচ-মেটের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান এবং ফয়সাল খান শুভর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
এ দিকে সাদিয়া তাহসিনের সঙ্গে তার ব্যাচ-মেটের বিয়ে ঠিক হয়। সেই বিয়ে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) হওয়ার কথা ছিল। বিষয়টি ফয়সাল জানতে পেরে সাদিয়া তাহসিনের প্রেমিকের সঙ্গে মোবাইল যোগাযোগ করে তাদের চার বছরের সম্পর্কের কথা জানায় ও কিছু ছবি-ভিডিও তার কাছে পাঠায়। এ অবস্থায় সাদিয়া তাহসিনের বাবা সুলতান আহমেদ গত ১ নভেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ থানায় ফয়সাল খান শুভসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে পর্নোগ্রাফি আইনে অভিযোগ দায়ের করেন।
এ ঘটনার পর গত ১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিবি পুলিশ নগরীর কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউজ রোডে তার বোন জামাইয়ের বাসায় অভিযানে যায়। অভিযানের সময় ডিবি পুলিশের সঙ্গে সাদিয়া তাহসিনের বাবা সুলতান আহমেদ খান ও তার দুই ছেলে আসিফ রহমান খান অপু ও আহনাফ আব্দুল্লাহ খান অনির্বাণ সঙ্গে ছিল। ডিবি পুলিশ বাসায় ঢুকতে চাইলে নিহত ফয়সালের বোন জামাই মোহসিন কেচি গেইট খুলে দিলে পুলিশ বাসার দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায়।
তবে ফয়সালকে বাসার দ্বিতীয় তলায় খুঁজে না পেয়ে সাদিয়া তাহসিনের বাবা সুলতান আহমেদ খান ও তার দুই ছেলে আসিফ রহমান খান অপু ও আহনাফ আব্দুল্লাহ খান অনির্বাণ বাসার ছাঁদে উঠে ফয়সাল খানকে হত্যা ও খুন করার উদ্দেশ্যে প্রায় ৬০ ফুট নিচে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে প্রায় ১৫ মিনিট পর প্রতিবেশীরা ফয়সালকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে ফয়সাল মারা যায়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাদিয়া তাহসিনের পরিবারের লোকজন পলাতক থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে বাসায় গিয়েছি। আমরা বাসায় গেলে ফয়সালের বোন জামাই কেঁচি গেট খুলে দিলে ভেতরে প্রবেশ করি। ফয়সালকে না পেয়ে আমরা বের হয়ে চলে এসেছি। ফয়সাল ছাঁদ থেকে পড়েছে নাকি অন্য কিছু বিষয়টি আমার জানা নেই।
কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ফয়সালের মরদেহ ঢাকায় ময়নাতদন্ত হয়েছে। এই ঘটনায় মেয়ের পরিবারের কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা কি জানা যাবে। এর আগে কিছু বলা যাবে না।
আরটিভি/এমকে
মন্তব্য করুন