সংবাদ প্রকাশের জেরে হামলা, ৬ বছরেও সুস্থ হতে পারেননি সাংবাদিক আজাদ
শুরুতে হুমকি-ধমকি, পুলিশ দিয়ে হয়রানি, বাড়ি তল্লাশি শেষে হামলা। সংবাদ প্রকাশের জেরে ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতাকর্মীদের হামলার ৬ বছরেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেননি রাজবাড়ীর পাংশার সাংবাদিক এ কে আজাদ। হামলায় বাম হাতের ৮ অংশ, ডান হাতের কনুই-আঙ্গুলসহ দুপা ভেঙে যায়। এ ছাড়াও রয়েছে শরীরের বিভিন্ন অংশে রয়েছে শতাধিক আঘাতের চিহ্ন।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার ওপর এ হামলা হয়। হামলার কয়েকদিন আগে ‘টোকাই সম্রাজ্যে দিশেহারা মানুষ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে সাংবাদিক আজাদ। এরপর থেকে রাজবাড়ীর কালুখালি উপজেলার মদাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনু, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী ক্যাডার শহিদুল ইসলাম মারুফসহ বেশকয়েকজন নানাভাবে হুমকি-ধমকি ও নাজেহাল করে। এ ছাড়াও পাংশা মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ নিজেও নানাভাবে হয়রানি করে ভুক্তভোগী সাংবাদিককে। পরে ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে পাংশা পোস্ট অফিসের সামনে থেকে আজাদের ওপর হামলা করে মদাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজনু, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম মারুফ, পাংশা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দিপক কুন্ডু, ক্যাডার শফিক, আলি, কালুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আাতিউর রহমান নবাব, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন বিশ্বাসসহ ২০ থেকে ২৫ জন। সেসময় লোহার রড, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। হামলার সময় ৩ জনের কাছে পিস্তলও ছিল।
পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পাংশা হাসপাতাল, পরে ঢাকা পঙ্গুতে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে মৃত্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে কোনরকমে বেঁচে আছেন তিনি। হামলাকারীরা সবাই সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিমের আশীর্বাদপুষ্ট।
হামলার পর ২৫ জনের নামে রাজবাড়ী কোর্টে মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক এ কে আজাদ। তবে সেই মামলা লড়তে পারেননি তিনি। নানারকম হুমকি-ধমকি ও চাপে পড়ে তা তুলে নিতে বাধ্য হন। হামলার পর জীবন বাঁচাতে জমি বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসা করান সাংবাদিক এ কে আজাদের পরিবার। তবে সেই টাকায়ও সুস্থ্য হতে না পেরে পাংশা কৃষি ব্যাংক থেকে ২ লাখ ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকা লোন করেন। ৬ বছরে তুলনামূলক সুস্থ হতে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে সাংবাদিক একে আজাদ বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের জেরে হামলার শিকার হয়েছি। যার ক্ষত এখনও বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। তবে সুস্থ্য হতে পারিনি। স্বাভাবিক জীবনযাপনেও নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। হামলার ঘটনায় মামলা করার পর সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিমের হুমকি-ধমকিতে পরিবারের কথা চিন্তা করে তা তুলে নিতে বাধ্য হই। চিকিৎসা করাতে বসতভিটা বিক্রি করতে হয়েছে। সেই টাকাতেও হয়নি, পরে ব্যাংক থেকে লোন ও স্ত্রীর স্বর্ণের গহনা বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়ে জীবন বাঁচিয়েছি। বর্তমানে ব্যাংকের সুদ দিতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছি। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমার ওপর হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত, ব্যাংক লোন মত্তকুফ ও চিকিৎসা বাবদ আর্থিক সহযোগিতা করার দাবি করছি।’
দৈনিক কালবেলা পত্রিকার সাংবাদিক হামজা শেখ বলেন, ‘সাংবাদিক আজাদ এখনও সুস্থ হতে পারেননি। জমিজমা সবই বিক্রি করে দিয়েছে। আবার ব্যাংকে অনেক টাকা ঋণী। নিজের চিকিৎসা খরচসহ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এমন অবস্থায় তার পাশে কেউ না দাঁড়ালে পরিবার-পরিজন নিয়ে অথৈ সাগরে পড়বেন সাংবাদিক আজাদ।’
পাংশা বার্তার সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রঞ্জু বলেন, ‘দীর্ঘ ৪৫ বছরের সাংবাদিকতার জীবনে কোন সাংবাদিককে এত নির্যাতিত হতে দেখিনি। আর এরকম ঘটনাও শুনিনি। অসুস্থ শরীর নিয়ে জীবন পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন সাংবাদিক আজাদ। এই নির্যাতিত সাংবাদিকের পাশে এসে দাঁড়াতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করছি।’
আরটিভি/এমকে
মন্তব্য করুন