শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি মেধাবী শিক্ষাথী আব্দুল্লাহর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আব্দুল্লাহর শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ করে মা-বাবার দায়িত্ব নেওয়া হলো না তার। দীর্ঘ ৩ মাসেরও বেশি সময় মা-বাবা ছেলে আব্দুল্লাহর সঙ্গে হাসপাতালে অবস্থান করলেও তাকে বাঁচাতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) ঢকা সিএমএইচে মৃত্যুবরণ করেন মেধাবী এই শিক্ষার্থী। আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার বাড়ি বড়আঁচড়াসহ গোটা বেনাপোলে। যশোর প্রতিনিধি বি এম ফারুক এর রিপোর্ট।
যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া মাঠপাড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল জব্বাবের ছেলে মেধাবী ছাত্র আব্দুল্লাহ। মা মাবিয়া বেগম। তারা তিন ভাই ও এক বোন। আব্দুল্লাহ ছিল সবার ছোট। তিনি রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই আবদুল্লাহ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। প্রথমে তাকে মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার মাথা থেকে গুলি বের করা হয়। তবে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকলেও তাকে হাসপাতাল থেকে ১০ আগস্ট জোরপূর্বক ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর তাকে বেনাপোলে নিয়ে আসেন স্বজনরা। বাড়িতে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে ১১ আগস্ট রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় ডাক্তাররা দ্রুত আবারও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। গত ১২ আগস্ট সকাল ৭টায় তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান যা তরল প্লাজমার মতো গলে গলে পড়তে থাকে। আবারও তার অপারেশন করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২২ আগস্ট তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন মেধাবী এই শিক্ষার্থী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই আবদুল্লাহ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া করে এতদুর পর্যন্ত গিয়েছিলেন তিনি। মেধা ও আচরণের কারণে গ্রামে সবার প্রিয় ছিলেন আব্দুল্লাহ। এলাকায় সুপরিচিত ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ। সবার প্রিয় পাত্র আব্দুল্লাহ এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে কেউই ভাবেনি। বন্ধু সহপাঠী সকেউই মানতে পারছে না আব্দুল্লাহ আর নেই।
নিহত আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার পেশায় একজন শ্রমিক। অর্থাভাবে কোন ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তিনি। আব্দুল্লাহ ছোট থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আব্দুল্লাহ। তাকে ঘিরে আকাশসম স্বপ্ন ছিল দরিদ্র বাবা-মা ও ভাই-বোনদের। তাকে হারিয়ে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে পরিবারটির।
আব্দুল্লাহর পরিবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন। সেই সাথে নিহত ঘটনায় তদন্ত স্বাপেক্ষে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেছেন।
আরটিভি/এসএপি
মন্তব্য করুন