মালয়েশিয়ায় পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জনকে উদ্ধার, আটক ২
কক্সবাজারের টেকনাফে ‘বেড়াতে গিয়ে অপহরণের শিকার’ যুবকের তথ্যে অভিযান চালিয়ে পাহাড়ী এলাকার গোপন আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জনকে উদ্ধার এবং দুই দালালকে আটক করেছে র্যাব।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) রাত ১০টায় এ তথ্য জানান র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) দেবজিত পাল।
আটককৃতরা হলেন উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পানখালী এলাকার মৃত অছিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ আনোয়ার (৪৪) এবং টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী এলাকার মৃত মোহাম্মদ রফিকের ছেলে মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৬)।
উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ২৬ জন রোহিঙ্গা ও ৫ জন বাংলাদেশি। এদের মধ্যে ৫ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও শিশু ২৩ জন।
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিরা হলেন মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের কায়কোবাদ এলাকার আব্দুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (২৭) ও নজির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ শহিদ (১৭), একই ইউনিয়নের সাদেকেরকাটা এলাকার মো. ফরিদের ছেলে মো. গিয়াস উদ্দিন (২২), চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মকশেট আজম এলাকার আবুল কালামের ছেলে আতিকুর রহমান (২২) এবং টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার মো. সাব্বিরের ছেলে হাসনা বেগম (১৮)।
ভূক্তভোগীর বরাতে এএসপি দেবজিত পাল বলেন, গত ১২ নভেম্বর উখিয়া উপজেলার মোছাখোলা এলাকার এখলাছ মিয়া ও তার এক চাচাতো ভাইসহ ২ থেকে ৩ জন বন্ধু মিলে টেকনাফে বেড়াতে যায়। এক পর্যায়ে তারা বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে যায়। বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে মেরিন ড্রাইভে ছবি তোলার সময় ৬ থেকে ৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি অস্ত্রের মুখে তাদের জিন্মি করে চোখ বেঁধে ফেলে। এ সময় তাদের স্থানীয় একটি পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছোট একটি খুপড়ি ঘরে আগে থেকে ৪০ থেকে ৪৫ জন নারী, পুরুষ ও শিশুর অবস্থান দেখতে পায় জিম্মি হওয়া যুবকরা।
ভুক্তভোগী এখলাছ মিয়ার বরাতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মানবপাচারকারীরা এখলাছকে মারধর করে নির্যাতন চালিয়ে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। একপর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় মানবপাচারকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে তাকেসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য পাহাড় চূড়ার খুপড়ি ঘর থেকে সাগরপাড়ের ট্রলারের কাছে নিয়ে যায়। এ সময় সে কৌশলে পালিয়ে গিয়ে বিষয়টি র্যাবকে অবহিত করে।
এ তথ্যের ভিত্তিতে রোববার মধ্যরাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকায় পাহাড়ে র্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। এতে সন্দেহজনক ৫ থেকে ৬ জন দৌঁড়ে পালানোর সময় দুজনকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব। পরে ঘটনাস্থল থেকে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য জড়ো করা ৩১ জনকে উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃতদের বরাতে এএসপি দেবজিত পাল জানান, সাগরপথে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে মানবপাচারকারীরা তাদের কচ্ছপিয়া এলাকার পাহাড়ের চূড়ায় জিম্মি করে রাখে। পরে স্বজনদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ আদায় করে। যারা মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের মালয়েশিয়া পাচারের নামে অন্য কোথাও জিম্মি রাখতে ট্রলারযোগে নিয়ে যাচ্ছিল।
আটক দালালদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে টেকনাফ থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান দেবজিত।
আরটিভি/এমএ-টি
মন্তব্য করুন