বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায় না: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে। এ জন্য নির্বাচনের দিকেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের পর বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করতে চায় না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা আন্দোলন করেছে, তাদের সবাইকে নিয়েই সরকার গঠন করতে চায়।’
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাত ৯টায় যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ও আজকের প্রেক্ষিত নাগরিক ভাবনা’ বিষয়ে মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সামনে বিরাট ক্রান্তিকাল। ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদকে হটিয়েছি। সেই ঐক্যকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক দেশ নির্মাণ করতে হবে। অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আবার বিবেধ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৬ বছরের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, ৭শ’ নেতাকর্মী গুম হয়েছে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে খুন, পঙ্গু করা হয়েছে। গ্রামেগঞ্জে নেতা-কর্মীরা রাতে বাড়িতে থাকতে পারেনি, ধানখেতে, গাছের ওপরে ঘুমিয়েছে। দীর্ঘ এই আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শেষে গোলটা ভালোভাবে করতে পেরেছে ছাত্ররা। সেজন্য তিনি ছাত্রদের স্যালুট জানান। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ গনতান্ত্রিক দল না। তারা কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে সময়, পরে ও গত ১৬ বছরে তারা সেটা প্রমাণ করেছে।
সভায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ‘কেমন বাংলাদেশ চাই, সেটা বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাগরিকদের কাছ থেকে শুনতে চায়। এই সভায় নাগরিকদের মতামত নোট করে নেওয়া হচ্ছে। যা বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হবে। জন–আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যা ভূমিকা রাখবে।’
সভায় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে শ্যামল দাস বলেন, বিগত সরকারের সময়ে তিন লাখ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে লুট হয়েছে। সেই আর্থিক ক্ষতি পূরণ করতে ব্যাংকঋণের ওপর ১৪-১৫ শতাংশ সুদ নেবেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে বছরে সাত হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা দেওয়া হয়। সেখান থেকে ২০ শতাংশ টাকা বন্দরের উন্নয়নে ব্যয় করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বাড়বে। যশোর শিল্পাঞ্চল বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ যশোর শাখার সভাপতি দীপংকর দাস বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুবিষয়ক বিএনপির একটি ‘গবেষণা সেল’ থাকা দরকার। যেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও অগ্রগতির বিষয়ে গবেষণা করা হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে ব্যবসায়ী চিন্ময় সাহা বলেন, ‘৩০০ আসনে আপনারা নির্বাচন করবেন। এর মধ্যে অন্তত ১০০ আসনে তরুণদের মনোনয়ন দেবেন। করপোরেট ব্যবসায়ী হাউসের মালিকদের দলীয় মনোনয়ন দেবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটকে (বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলবেন। যশোরে একটি মেডিকেল কলেজ আছে। কিন্তু সেখানে কোনো হাসপাতাল নেই। হাসপাতাল ছাড়া মেডিকেল কলেজ হতে পারে, এটা আমার জীবনে কখনো শুনিনি। আপনারা যশোর মেডিকেল কলেজের সঙ্গে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল স্থাপন করবেন।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নার্গিস বেগম। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান, মানবাধিকার সংগঠক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, কওমি মাদ্রাসা কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুল মান্নান, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান প্রমুখ।
আরটিভি/এমকে
মন্তব্য করুন