কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের অবৈধ স্থাপনায় পর্যটনের সৌন্দর্য নষ্ট
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধের অবৈধ স্থাপনা এখন বিনিয়োগকারীদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অবৈধ দখলদারদের দখল বাণিজ্যে চিন্তিত হয়ে পরেছে তারা। বিনিয়োগকারীদের ক্রয়কৃত জমি নানা অজুহাতে দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে অবৈধ দখলদাররা এমন অভিযোগ তাদের।
এসব অবৈধ দখলদারদের মধ্যে যাদের জমিজমা ঘরবাড়ি নাই তাদেরকে কুয়াকাটার নয়াপাড়া এলাকায় দেড় শতাংশ জমি দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেও সেখানে তারা যেতে রাজি নয়। অবৈধ দখলদাররা জমির মালিক বলে দাবি করে উল্টো বিনিযোগকারীদের হুমকি দিচ্ছেন। এসব অবৈধ দখলদারদের কারণে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি পর্যটনের পরিবেশ প্রতিবেশ নষ্টসহ সৌন্দর্য হানি হচ্ছে। এদেরকে উচ্ছেদ করে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি পর্যটনে বিনিয়োগকারীদের।
জানা গেছে, পর্যটন নগরী কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পাশে বেড়িবাঁধের ভিতরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে একাধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ দখলদাররা জমিজমা নেই এমন অজুহাতে জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় প্রথমে বেড়িবাঁধের ঢালে ছালা বস্তা দিয়ে বসবাস শুরু করলেও পরবর্তীতে টিনের বড় বড় ঘর নির্মাণ করে। বেড়িবাঁধ এসব অবৈধ স্থাপনার পিছনে বিনিয়োগকারীদের জমি রয়েছে। এসব বিনিযোগকারীরা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে বাঁধা দিলে তারা এখন নানা কৌশলে বিনিয়োগকারীদের জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ দখলদারদের অনেকেরই ব্যক্তিগত জমাজমি, ঘরবাড়ি থাকলেও তারা সেখানে বসবাস না করে বেড়িবাঁধের ঢালে এসে বসবাস করছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ সংস্কারের সময় ঢালে বসবাসকারীদের ঘর ভাঙার জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে এখনো তারা স্ব-স্থানে রয়ে গেছে।
কুয়াকাটা গ্রান্ড পার্ল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ জানান, তার জমির সামনে বেড়িবাঁধের ঢালে অবৈধভাবে বসবাসরত বাবুল পহলান, জাকির পহলান, আমির পহলান ও আ: আজিজসহ চারটি পরিবারকে সরাতে ১২ লাখ টাকা দিতে হয়েছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, তিনি জমি কিনে রিসোর্ট নির্মাণের সময় এসব দখলদারদের সরে যেতে বললে তারা এই জমির মালিকানা দাবি করে বসে। এসব বিষয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা না পেয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে তিনি টাকা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন।
আরেক বিনিয়োগকারী এডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান জানান, তার জমির সামনে বেড়িবাঁধের ঢালে আব্বাস, মনির, খালেক, মিজানুর স্থানীয় কাউন্সিলরের সহায়তায় ঘর নির্মাণ করে। এসময় বাঁধা দিলে স্থানীয় কাউন্সিলর মনির শরীফ বলেছেন যখন ভবনের কাজ ধরবেন তখন এরা চলে যাবে। এখন এসব অবৈধ দখলদাররা তাদের জমির কাগজ রয়েছে এমন দাবি করে উল্টো তার জমি দখল করে ঘর নির্মাণের পায়তারা চালাচ্ছে।
এমন অভিযোগ রয়েছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ওশান সিটি কর্তৃপক্ষেরও। ওশান সিটির প্রতিনিধি মো: জাহিদ হোসেন জানান, তাদের জমির সামনে বেড়িবাঁধের স্লপে পাউবোর অধিগ্রহণকৃত জমিতে আ: আজিজ, আব্দুর রব সহ তিনটি পরিবার বসবাস করেন। এসময় ঘর নির্মাণে বাঁধা দিলে তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় স্ট্যাম্পে লিখিত দেয়। তখন তারা বলেন, আমাদের থাকার কোন জায়গা নেই। আমরা এখানে থেকে সমুদ্রে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করবো। আপনারা যখন কাজ ধরবেন তখন আমরা চলে যাব। এখন তারা দাবি করছেন তাদের দলিল রয়েছে। উল্টো তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তার দাবী এসব অবৈধ দখলদারদের চলে যেতে বললে তারা মহিলা পুরুষ মিলে দা, ছেনা নিয়ে লাফিয়ে পরছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, এসব অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আ: আজিজ, আব্দুর রব, মিজানুরসহ অনেকেই বেড়িবাধ সংস্কারের সময় ঘর ভাঙার ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রত্যেকে দেড় থেকে তিন লাখ টাকা করে পেয়েছে। এরপরও তারা পাউবোর কতিপয় কর্মচারীদের ম্যানেজ করে সেখানেই রয়ে গেছে।
তারা আরও জানান, আ: আজিজের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের বৌলতলী এলাকায় ৩ কানি জমি রয়েছে। তার ছেলে আল আমিন, আবু সালেহর কুয়াকাটা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের পাঞ্জুপাড়ায় জমি এবং পাকা বাড়িঘর রয়েছে। আজিজের ভগ্নীপতি আব্দুর রবের লতাচাপলী ইউনিয়নের ডংকু পাড়ায় রেড ক্রসের ঘর রয়েছে। মিজানুরের ধুলাসার ইউনিয়নে জমি রয়েছে। মনিরের মায়ের নামে লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরায় রেডক্রসের ঘর রয়েছে। বেড়িবাঁধের স্লপে বসবাসরত প্রত্যেকরই বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি ও জমাজমি রয়েছে। সেখানে তারা বসবাস না করে বিনিয়োগকারীদের হয়রানি করতেই অন্য জায়গায় জমিজমা ঘরবাড়ি থাকতেও এখানে এসে অবৈধভাবে বসবাস করছে।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ সিডর পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরিবারকে সেনাবাহিনী ঘর নির্মাণ করে দেন। পাশাপাশি প্রত্যেককে তিন শতাংশ জমি দলিল করে দেয়া হয়। এসব ঘরবাড়ি ও জমি সমুদ্রের করাল গ্রাসে চলে যায়।
এখন তাদের মধ্যেই অনেকে ওই দলিল দিয়ে বেড়িবাঁধের ভিতরে দাবি করে বিনিয়োগকারীদের হুমকি দিচ্ছেন এবং তাদের ক্রয়কৃত জমির মধ্যে ঘরবাড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে এক শ্রেণির অসাধু ভূমি দালাল ও মামলাবাজরা দখলদারদের উস্কানি দিচ্ছে।
তবে অবৈধ দখলদার আব্বাস, আ. রব জানান, আমাদের ঘরবাড়ি সমুদ্রে ভেঙে গেছে। তাদের নামে দলিল রয়েছে। ওই দলিলের দাগ খতিয়ান অনুযায়ী ৭৮ দাগের জমির মালিক তারা। সরকার তাদের দলিল দিয়েছে। সেই জমি বুঝে নিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় জমির উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তারা দাবি করেন শীঘ্রই জমি দখলে নিবেন।
এ বিষয়ে মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আ ন ম মুরাদুল ইসলাম বলেন, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরিবারকে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে এবং প্রত্যেককে তিন শতাংশ জমি দলিল করে দেয়া হয়েছে। যা এখন সমুদ্রে গর্ভে চলে গেছে। ওই জমি অন্য কোথাও দাবি করার সুযোগ নেই।
তিনি জানান, যাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা নেই তাদের চিহ্নিত করে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নয়াপাড়ায় পুনর্বাসন করা হবে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে প্রত্যেককে দেড় শতক করে জমি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কৌশিক আহমেদ এবং কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম জানান, পর্যটনের সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের খুব শীঘ্রই উচ্ছেদ করা হবে। কোন বিনিয়োগকারীদের হয়রানি করার কোন সুযোগ নেই। এমন অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরটিভি/এএএ
মন্তব্য করুন