• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

মেহেরপুরে চড়া দামেও মিলছে না টিএসপি ও ডিএপি সার

মেহেরপুর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৩০
ছবি : আরটিভি

মেহেরপুরের চাষিরা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে পাচ্ছেন না টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) ও ডিএপি (ডাই এ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার। ডিলার ও সাব ডিলার পর্যায়ে সার সংকটের কথা বলা হলেও বেশি টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে সার। সার সংকটের ক্ষেত্রে বিএডিসি ডিলারদেরকে দায়ী করেছেন কৃষকরা। সার উত্তোলন ও বিক্রির ক্ষেত্রে লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘন করে কাল বাজারে বিক্রির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। সার সংকটের বিষয়ে কৃষি অফিসারের ওপর দায় চাপিয়েছেন বিএডিসি। তবে সার সংকট নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিস।

অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে বিচিত্র সব তথ্য। গাংনী উপজেলার নওপাড়া বাজারে সাজেদুর রহমানের মালিকানায় বিশ্বাস ট্রেডার্স নামে বিএডিসির লাইসেন্সধারী একটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা থাকলেও সেখানে নেই গুদাম এবং সার বিক্রির দোকান। গেল নভেম্বর মাসে এই প্রতিষ্ঠান বিএডিসি থেকে ১৬.২৫ মেট্রিক টন টিএসপি এবং ১৭.২৫ মেট্রিক টন এমওপি সার উত্তোলন করেছেন। অথচ নওপাড়া গ্রামের কোন চাষি তার কাছ থেকে সার পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

নওপাড়ার চাষি জামিরুলসহ কযেকজন জানান, বিশ্বাস ট্রেডার্স বিগত ১০ বছরেও এখানে কোন সার বিক্রি করেনি। স্থানীয় বাজারে দোকান দেখিয়ে লাইসেন্স নেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। এ ডিলার তার লাইসেন্স অন্যকে দিয়ে অন্য জায়গাতে ব্যবসা করান। বিনিময়ে একটা লাভ্যংশ পান তার কাছ থেকে। কৃষি অফিস কোন পর্যবেক্ষণ করেন না।

এদিকে চাষিদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বিএডিসি ডিলার সাজেদুর রহমানের পিতা সৈয়দ আলীর কথায়। তিনি বিষয়টি স্বীকার করে জানান, লাইসেন্সটি অন্যের কাছে লীজ দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে কিছু কমিশন পান।

শুধু বিশ্বাস ট্রেসার্ড নয়, এর মত জেলার বিএডিসি লাইসেন্সধারী অনেক প্রতিষ্ঠান কাগজে কলমে সার উত্তোলন ও বিক্রির হিসেব দেখালেও বাস্তবে তাদের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি। নিজে বিনিয়োগ না করে সার বরাদ্দের কাগজ অন্য জায়গায় বিক্রির মাধ্যমে বিনা পুঁজিতে কিছু টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এসব ডিলাররা। ফলে সার সংকট আর সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে সার বিক্রির কারসাজি শুরু হচ্ছে এখান থেকেই।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বিএডিসি ডিলারের সংখ্যা মোট ১০০ জন। নভেম্বর মাসে এ সকল ডিলাররা বিএডিসি থেকে টিএসপি ১ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন এবং ১ হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন এমওপি সার উত্তোলন করেছেন।

একইসঙ্গে আমদানীকারকদের কাছ থেকে বিসিআইসির ৩৫ জন ডিলার ডিএপি সার তুলেছেন ১ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন। চলতি ডিসেম্বর মাসে জেলার ১ হাজার ১৮১ মেট্রিক টন টিএসপি, ১ হাজার ৪৪২ মেট্রিক টন ডিএপি এবং ১ হাজার ৫২৭ মেট্রিক টন এমওপি সার বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দের এই সারগুলো ডিলারদের মাধ্যমে জেলায় আসতে শুরু করেছে তবুও সার সংকট কমছে না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ডিলাররা সার উত্তোলন করলেও চাষিরা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ সার। মাঠ পর্যায়ে আলু, গম, শীতকালীন সবজি ও ভুট্টাসহ রবি ফসল আবাদের ভরা মৌসুমে সার সংকটে ভুগছেন কৃষকরা। এতে দেশের খাদ্যে জোগানের প্রধান মৌসুম রবিতে এবার ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ধানখোলা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ফিরোজ বলেন, সময়মত সারের জোগান দিতে না পারলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি দেশের সার্বিক খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

পূর্ব মালসাদহ গ্রামের হালিম ও সাহারবাটি গ্রামের হাসিবুল জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের মানুষের খাদ্য জোগান দিয়ে থাকেন কৃষকরা। সময়মত সারের জোগান দিতে না পারলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি দেশের সার্বিক খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করে নিরবচ্ছিন্ন সার প্রাপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

বিএডিসির সার ডিলারদের কারসাজি বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসি কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক মহিউদ্দীন মিয়া দায় চাপালেন কৃষি অফিসের ওপর।

তিনি জানান, একজন ডিলার সার তুলে বিক্রির পর কৃষি অফিস থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে আসেন। ডিলারের দোকান, গুদাম আছে কি না এবং সার সঠিকভাবে কৃষকদের কাছে বিক্রি করেছেন কি না তার প্রত্যয়ন দেয় কৃষি অফিস। এ প্রত্যয়ন সাপেক্ষে তাদের পরবর্তী মাসের সার বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার।


আরটিভি/এএএ

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সংকটাপন্ন পাপিয়া সারোয়ার, নেওয়া হয়েছে ভেন্টিলেশনে
দেশের বাজারে জিক্সার ২৫০ সিসির নতুন মোটরসাইকেল, দাম কত
তিন দেশ থেকে ৬৬১ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার
শমী কায়সারের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন