মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক
নতুন বইয়ের অপেক্ষায় সুনামগঞ্জের আড়াই লাখ শিক্ষার্থী
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র জাহিদুল ইসলাম রাফি। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে আজ বুধবার সকালে বছরের প্রথম দিনে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। ভর্তি হলেও বই না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে।
শুধু রাফিই নয়, বছরের প্রথম দিনে বিদ্যালয়ে গিয়েও বই না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছে তার বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের লাখো শিক্ষার্থী। জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর কেউই নতুন বই পায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেলেও এই বছর সুনামগঞ্জের মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র-ছাত্রী একটি বইও পায়নি। বছরের প্রথম দিনে খুশি মনে বিদ্যালয়ে গেলেও খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে সবাই।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৩৩টি, এবতেদায়ী ও মাধ্যমিক পর্যায়ের মাদরাসা রয়েছে ৯২টি এবং কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে ১৫টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা আড়াই লাখ। এসব শিক্ষার্থীর জন্য বইয়ের চাহিদা পাঠানো হয়েছিল ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯০টি। কিন্তু ডিসেম্বর মাসে কোন শ্রেণির একটি বইও সুনামগঞ্জে পৌঁছেনি। যার কারণে বছরের প্রথম দিন নতুন বই পায়নি কোনো শিক্ষার্থী।
দোয়ারাবাজার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম রাফির বাবা আশিক মিয়া বলেন, বছরের প্রথম দিন প্রাইমারি ও হাই স্কুলের সব ছাত্র-ছাত্রীরাই নতুন বই পেয়ে থাকে। কিন্তু এই বছর ব্যতিক্রম হল। আমার ছেলে বছরের প্রথম দিনে স্কুলে গিয়ে নতুন শ্রেণিতে ভর্তি হলেও বই না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে। সময়মতো বই না পেলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেলার ধর্মপাশা উপজেলা সদরের জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক খান জানান, তার বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১২০০। বই বরাদ্দ না পাওয়ায় কাউকে বছরের প্রথম দিন বই দিতে পারেননি।
তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোদাচ্ছির আলম সুবল বলেন, আমার বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ৭০০। নতুন কোন বই পাওয়া যায়নি, তাই শিক্ষকদের বলেছি আপাতত পুরাতন বই দিয়ে পাঠদান চালাতে। বই না পাওয়ায় স্কুলের বার্ষিক খেলাধুলা এই মাসেই শেষ করে নিতে ছাত্র-ছাত্রীদের খেলাধুলা করানোর জন্য বলেছি।
জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমান বলেন, আমাদের ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৯০০। নতুন বই না পাওয়ায় বছরের প্রথম দিন কাউকে বই দেওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে জানানো হয়েছে গাড়িতে করে বই আসছে। হয়ত আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিতরণ করা যাবে। কিন্তু কতটি বই পাওয়া যাবে তা জানানো হয়নি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বললেন, নতুন কারিকুলামে বই ছাপানোর কারণে বই পেতে একটু বিলম্ব হয়েছে, যার কারণে প্রথম দিনে নতুন বই বিতরণ করা যায়নি। আশা করি আজ রাতের মধ্যেই গাড়ি চলে আসবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে রাতে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। আশা করি বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই আমরা পৌঁছে দিতে পারব। তবে কত সংখ্যক বই এসেছে তা জানাতে পারেননি তিনি।
আরটিভি/এএএ/এআর
মন্তব্য করুন