চমেকে বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরীকে অপমান
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) গিয়ে বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী অপমানিত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বজনরা।
১৯৪১ সালে জন্ম নেয়া রমা চৌধুরী এখন একাধিক রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। এ অবস্থায় অসুস্থ হয়ে চমেক হাসপাতালে গেলে এই ঘটনা ঘটে।
রমা চৌধুরীর সহকারী ও বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, গেলো ২৪ ডিসেম্বর রাতে রমা চৌধুরীকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই।
একজন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়ার পরও তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়।
চিকিৎসা না দিয়ে আড়াই ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়। পরে অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে ভর্তি করালেও নোংরা একটি বেডে তাকে মেঝেতে থাকতে দেয়।
সেবা না পেয়ে ক্ষোভে ও অপমানে ২৪ তারিখ রাত ১টায় হাসপাতাল ছেড়ে নগরীর মেডিকেল সেন্টারে তাকে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আলাউদ্দিন খোকন।
এখন ওই মেডিকেল সেন্টারে রমা চৌধুরীর চিকিৎসা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রমা চৌধুরীর ছেলে জহর লাল চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে মাকে নিয়ে গিয়ে অবহেলার শিকার হয়েছি। চিকিৎসা না দিয়ে তাকে হাসপাতালের বেডে ফেলে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
জহর লাল আরো বলেন, মা বাঁচতে চায়। একাত্তর সালে মা পরাজিত হয়নি। স্বাধীন দেশে রোগ ও অর্থের কাছে মা পরাজিত হতে চায় না।
তিনি বলেন, মা ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ অনেক রোগে আক্রান্ত। গেলো জুন মাস থেকেই গুরুতর অসুস্থ। চট্টগ্রামের ডায়াবেটিস হাসপাতালে ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হলে তাকে বাসায় নিয়ে যাই, কিন্তু বাসায় যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে হঠাৎ পড়ে গিয়ে কোমরে ও পায়ে ব্যথা পান।
জহর লাল আরো বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। কোথায় থেকে এতো টাকা আসবে বুঝতে পারছি না। তবে সাধারণ মানুষ কিছু সাহায্য করছে এ দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করাচ্ছি। কেউ এখনো আমার মাকে দেখতে আসে নাই। চট্টগ্রামে অনেক রাজনীতিবিদ আছে। আমার মা যে আট মাস ধরে বিছানায় পরে আছে কেউ খোঁজ নেয়নি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন আরটিভি অনলাইনকে বলেছেন, আমাকে তাৎক্ষণিক কেউ এ ঘটনা জানায়নি।
যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা যদি নির্দিষ্টভাবে রমা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা বলতে পারেন তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকি। হাসপাতালে এসে একজন বীরাঙ্গনা অবহেলার শিকার হয়ে ফিরে যাবেন তা খুবই দুঃখজনক।
রমা চৌধুরী ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর তিনি বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন।
প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা মিলিয়ে ১৮টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন বরেণ্য এই লেখিকা।
এসএস/জেবি
আরও পড়ুন-
- মসজিদে তাবলিগ জামাতের অবস্থান নিয়ে উত্তেজনা
- চমেকে বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরীকে অপমান
- মহেশখালীতে যুবলীগকর্মী খুন
মন্তব্য করুন