চার খাটিয়া রাখা উঠানে, লাশের অপেক্ষায় স্বজনরা
সাভারে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স ও দুইটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) মরদেহের জন্য বাড়ির উঠানে রাখা আছে চার খাটিয়া। স্বজনরা অপেক্ষায় আছেন লাশ আসবে কখন। একই পরিবারের চারজনকে হারিয়ে নিহতের স্বজনরা হতবাক। এদিকে বাড়ির ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী (১১) এখনও জানে না তার বাবা, মা, বড় ভাই এবং খালা আর বেঁচে নেই।
নিহতেরা হলেন- ভবন দত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচ ফারুক সিদ্দিকী, তার স্ত্রী মহসিনা খন্দকার, ছেলে মহায়মিন সিদ্দিকী ফুয়াদ ও স্ত্রীর বড় বোন সীমা খন্দকার।
পরিবারের সদস্যরা জানান, বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী কিছুদিন থেকে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। চিকিৎসার জন্য গত রাতে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকীসহ পরিবারের চার সদস্য অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। গত রাত তিনটার দিকে সাভারে বাসের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষ হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা একই পরিবারের চারজন নিহত হয়।
ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান তালুকদার বলেন, লাশ এখনো ঢাকায় রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে।
নিহত ফারুখ হোসেন সিদ্দিকীর ছোটভাই মামুন সিদ্দিকী বলেন, তারা তিন ভাই এক বোন। বোন সবার বড়। ইতালি প্রবাসী। বড়ভাই ফারুখ সিদ্দিকী ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী স্থানীয় ভবনদত্ত গণ উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। হঠাৎ করেই কিছুদিন থেকে সে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। তবে থ্যালাসেমিয়া নয়। ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর জন্য গত রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা থেকে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী ও তার বোনকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যোগে রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন ফারুখ সিদ্দিকী।
মামুন সিদ্দিকী জানান, রাতে তার কাছে ফোন করে সবাইকে দোয়া করতে বলেন। এরপর আর কোন কথা হয়নি।
ফারুখ সিদ্দিকীর সহকর্মী মো. রুবেল মিঞা বলেন, প্রধান শিক্ষক খুব নীতিবান ছিলেন। একজন নীতিবান মানুষের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমরা সবাই চলে এসেছি। এমন শিক্ষক আর হবে না। আমাদের সবসময় আগলে রাখতেন।
নিহত ফারুখ সিদ্দিকীর আরেক সহকর্মী তার চাচাতো বোন সোমা সিদ্দিকা বলেন, স্যারের ছোট ফাহিম সিদ্দিকী (১১) হোস্টেলে থেকে মাদরাসায় পড়ে। সে এখনো জানে না তার বাবা মা আর ভাই পৃথিবীতে নেই।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হেপলু জানান, রাতে তিনি ফারুখ সিদ্দিকীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাড়ি আসেন। একসঙ্গে চা পান করেছেন। ফারুখ সিদ্দিকীর মতো ভালো মানুষ আর হবে না।
আরটিভি/এএএ/এস
মন্তব্য করুন