• ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১
logo

আসুন সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই: জামায়াত সেক্রেটারি

গাজীপুর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:২৬
আসুন সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাই: জামায়াত সেক্রেটারি
ছবি: সংগৃহীত

সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকালে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠে জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা রাজপথে ছিলাম, নেতৃত্ব দিয়েছি, রক্ত দিয়েছি, শহীদ হয়েছি, তাদের কাছে আমার মিনতি জুলাই অভ্যুত্থানের যে চেতনা, এই ঐক্যের আলোকে আসুন দেশ গড়ি। জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করে আমরা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন সেই সংস্কার টুকু করে আমরা নির্বাচনে যাই।

তিনি বলেন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশে যে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু করেছিলাম তা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডবে ম্লান করে দিয়েছিল। সেই ২৮ অক্টোবর থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের এ দেশীয় দালাল, সেবা দাস চক্ররা এ দেশের মসনদে বারবার বসার চেষ্টা করেছে। ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমরা একটি কালো অধ্যায় পার করেছি। এই সময় আমাদের কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, রাজনৈতিক অধিকার ছিল না, ভোটাধিকার ছিল না, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জাতিসত্তা পায়ের নিচে পিষে ফেলা হয়েছিল।

মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, আমরা একটি কালো যুগ পার করেছি বিগত ১৮টি বছর। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনি সন্ত্রাসী ফ্যাসিস্ট সমস্ত গুম, হত্যাকাণ্ড, রিমান্ড, ক্রসফায়ারের মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনার নির্দেশে পল্টনে লগি বৈঠা দিয়ে আমাদের সাতজন তরুণ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের মৃতদেহের ওপর উঠে ঘৃণ্য উল্লাস করেছিল। আমরা সেই ইতিহাস, ছবি ভুলে যাইনি।

তিনি বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে অর্থনীতিতে চলেছিল লুটপাট, জুডিশিয়ারি বিচার অঙ্গনে কোনো ন্যায় বিচার ছিল না, শাসন ক্ষমতা এই শেখ পরিবার এবং আওয়ামী পরিবার সিন্ডিকেট করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। কত মানুষ শহীদ হয়েছে, কত মানুষ আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ কারা বরণ করেছে। কত শিশু, কত বৃদ্ধ কত মা আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে কান্না করেছে। অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে এ জনপদকে রক্ষা করার জন্য দোয়া করেছে। আমরা জানি না কোন শহীদ বা কার হাতকে আল্লাহ কবুল করেছেন। গত ৫ আগস্ট আসমান থেকে আল্লাহর রহমতের ধারা বর্ষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এই স্বৈরাচার কত মানুষকে হত্যা করল, কত নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে দিল। বিগত ১৪, ১৮, ২৪ সালে তিনটা ভোট আমরা দিতে পারিনি। রাজনৈতিক দলের আন্দোলনকে গুম করে, নিষিদ্ধ করে আর নির্যাতন করে বিরোধী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।

দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়াকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টের বিদায় দেখেছি। কিন্তু এইভাবে জনতার রুদ্র রুশে কাউকে পালিয়ে যেতে দেখিনি। ৩০০ এমপি-মন্ত্রী সব পালিয়েছে। এত দাম্ভিক এত অহংকারী, এই ১৭, ১৮ বছরে উনার (শেখ হাসিনা) মেজাজটা কী ছিল? ওকে মারো, ওকে ধরো, ওকে নিষিদ্ধ কর, ওকে গুলি কর, আয়না ঘরে নাও রিমান্ডে নাও, রাজনৈতিক অধিকার নেই ভোটাধিকার নেই। এত অহংকার এত দাম্ভিকতা আল্লাহতালা কখনো পছন্দ করে না। আমরা মনে মনে এটা কামনা করতাম, নিশ্চয়ই আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত অপেক্ষা করছে।

তিনি আওয়ামী লীগ আমলে জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে বৃদ্ধ বয়সে কারাগারে নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে, তাদেরকে ফাঁসি দিয়েছে। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা বাদী, মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা ট্রাইব্যুনাল, মিথ্যা বিচারক, সাজানো রায় দিয়ে ইতিহাসের বর্বরতম জুডিশিয়াল কিলিং করে আমাদের নেতাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশ থেকে রায় লিখে দেওয়া হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তিনি এখন ভারতে পালিয়ে গিয়েছেন। সেখান থেকেও তিনি ষড়যন্ত্র করছেন। একজন আন্তর্জাতিক খুনি ও সব খুনের মাস্টারমাইন্ড কে সেখানে ভারত আশ্রয় দিয়ে জেনেভা কনভেনশন এবং সকল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। তাহলে আমরা এটা বলতে বাধ্য, এত বছরের জুলুম নির্যাতন, লুটপাট খুনের পেছনে তাদেরও হাত ছিল। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য। তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

গাজীপুর জেলা শাখার আমির ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. মো. সামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মো. আবুল হাশেম খান, গাজীপুর মহানগর শাখার আমীর অধ্যাপক মুহা. জামাল উদ্দিন, গাজীপুর জেলার নায়েবে আমির মাওলানা সেফাউল হক, গাজীপুর মহানগরের সিনিয়র নায়েবে আমীর মোহাম্মদ আব্দুল হাকীম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দিন আইউবীসহ জেলা উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।

আরটিভি/এমকে/এআর

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সবার সহযোগিতা থাকলে সব রকমের সংস্কার সম্ভব: আদিলুর রহমান
সংস্কার পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে আমরা বিদায় নেব: উপদেষ্টা আদিলুর
সংস্কার কমিশনে ২২ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা দিলো মুক্ত গণমাধ্যম মঞ্চ
হাসিনা পালিয়ে যাওয়ায় ৮০ শতাংশ সংস্কার হয়ে গেছে: হাফিজ উদ্দিন