চাঁদপুরে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, ১৫ দিনে পাঁচ সহস্রাধিক রোগীর চিকিৎসা
চাঁদপুরে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মতলব আইসিডিডিআরবিতে চিকিৎসা নিচ্ছে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ জন রোগী। এসব রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হু হু করে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। গত ১৫ দিনে প্রতি ঘণ্টায় চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে ১৪ থেকে ১৬ জন শিশুকে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে অভিভাবকদের নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডায়রিয়া হলে শিশুদের নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
চাঁদপুর মতলব দক্ষিণ উপজেলায় অবস্থিত আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল। ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটির সুনাম রয়েছে ব্যাপক। গত ১৫ দিনে এই হাসপাতালে শীত জনিত কারণে ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক রোগী। যার বেশীর ভাগ শিশু। যাদের বয়স বয়স পাঁচ বছরের নিচে। যা মোট রোগীর ৮৫ ভাগ। রোগী ভর্তির হিসেবে দেখা যায় প্রতি ঘণ্টায় এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে ১৪ থেকে ১৬ জন শিশুকে। শীতজনিত কারণে রোটা ভাইরাস (ডায়রিয়া) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ আক্রান্ত রোগী আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। গত ১৫ দিনে এ হাসপাতাল চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক।
তবে চিকিৎসা নিতে এসে কোনো রোগী মারা যায়নি বলে হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। হাসপাতালের ৩টি কক্ষই ডায়রিয়া রোগীতে ঠাসা। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় বেড বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর, কুমিল্লা জেলার বরুড়া, বুড়িচং, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর, দাউদকান্দি, দেবিদ্বার, হোমনা, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর, নাঙ্গলকোট, তিতাশ উপজেলা, লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, চাটখিল, সোনাইমুড়ী এবং শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়া থেকে আসা ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর মতলব আইসিডিডিআরবিতে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন শিশু রোগীর অভিভাবক জানান, এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান খুবই ভাল। ডাক্তাররা রোগীদের অতি যত্নসহকারে সেবা দিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের জন্য ওরস্যালাইন, সুজি ও বেবিজিংক ট্যাবলেট সরবরাহ করছে।
চাঁদপুর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. চন্দ্র শেখর দাশ জানান, শীতে শিশুদের রোটা ভাইরাস জনিত কারণে ডায়রিয়া প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিন হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এটি শীতকালীন ডায়রিয়া। ভাইরাসজনিত কারণে, দুষিত খাবার ও দুষিত পানি পান করা, ময়লা মুখে দেওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এসব রোগীদের নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
চাঁদপুর আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের প্রধান ডাক্তার মো. আল ফজল খান জানান, অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। শিশু এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হলে অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকরা তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকেন। ৫ জন ডাক্তার, ৬ জন সিনিয়র নার্স, ২০ জন স্বাস্থ্য সহকারী ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠতে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭ দিন সময় লাগে।
তিনি আরও বলেন, শূন্য থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, ৭ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন, একটি করে বেবিজিংক ট্যাবলেট এবং বাড়তি খাবারের মধ্যে সুজি, খিচুরি, ডাবের পানি, চিড়াসহ তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।
এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে বাসা-বাড়িতে তৈরি ওরস্যালাইন মিশিয়ে পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু যদি পানির মতো পাতলা মলত্যাগ করে, বুকের দুধ টেনে খেতে না পারে এবং অতিমাত্রায় পিপাসা ও ঘনঘন বমি, জ্বর বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।
আরটিভি/এএএ
মন্তব্য করুন