সাতছড়িতে বিরল প্রজাতির বন্য ভালুকের সন্ধান, বিশেষ সতর্কতা

আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ , ০৮:০৭ পিএম


সাতছড়িতে বিরল প্রজাতির বন্য ভালুকের সন্ধান, বিশেষ সতর্কতা
ছবি: সংগৃহীত

এশিয়াটিক ব্ল্যাক প্রজাতির একটি ভালুকের সন্ধান পাওয়া গেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গহীন অরণ্যে। বিরল এই প্রজাতির বন্য ভালুক অত্যন্ত আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয়। সম্প্রতি হারিস দেব বর্মা নামের এক স্থানীয় সৌখিন ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় এই ভালুকের ছবি ধরা পড়ে। এ জন্য উদ্যানের ভেতরে জনসাধারণের অবাধ চলাফেরায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে উদ্যান কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, চুনারুঘাটের রঘুনন্দন পাহাড়ে সাতছড়িতে ২৪৩ হেক্টর আয়তনের এ উদ্যানের পাশ ঘেঁষে আছে ৯টি চা-বাগান। উদ্যানের ভেতরে টিপরা পাড়ায় পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৪টি পরিবার বসবাস করে। ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু ও ১৫০ থেকে ২০০ প্রজাতির পাখি আছে উদ্যানে। বাংলাদেশের সংরক্ষিত এ বনাঞ্চল পাখিদের অভয়াশ্রম। বনের ভেতরে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, কুলু বানর, মেছোবাঘ, মায়া হরিণও আছে।

সাতছড়ির টিপরা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সন্তান হারিস দেব বর্মা (৩০) স্থানীয়ভাবে শৌখিন ফটোগ্রাফার হিসেবে পরিচিত। তিনি বনের ভেতরে প্রাণ-প্রকৃতির নানা ছবি তোলেন। অতি সম্প্রতি তিনি উদ্যানের গভীর অরণ্যে ছবি তুলতে গিয়ে বিরল প্রজাতির বন্য ভালুকের (এশিয়াটিক ব্ল্যাক প্রজাতি) সন্ধান পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রাণীটির ছবি তোলেন।

বিজ্ঞাপন

হারিস দেব বর্মা বলেন, আমি বিরল প্রজাতির ভালুকটি দেখে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এই বনে ওদের বসবাস আছে। দেখামাত্রই ছবি তুলতে দেরি করিনি। পরে সেই ছবি প্রাণীবিশেষজ্ঞদের দেখানোর পর নিশ্চিত হই যে প্রাণীটি এশিয়াটিক কালো ভালুক।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের ভিলেজার হারিস দেব বর্মার মাধ্যমে আমরা প্রথম সাতছড়িতে এ ধরনের ভালুক থাকার বিষয়টি জানতে পারি। পরে আমরা অনুসন্ধান করে সত্যতা পাই। এটি বিরল প্রাণী। এটির সংরক্ষণে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি। পর্যটকদের উদ্যানের ভেতরে প্রবেশে নিরাপত্তাঝুঁকি থাকার বিষয়টি সতর্ক করেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ এর দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। আমরা ভালুক থাকার বিষয়টি জানার পর নজরদারি বাড়িয়েছি। পাশাপাশি বন ভ্রমণকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি।

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, কেউ যাতে ভালুক শিকার বা পাচার করতে না পারে এ বিষয়ে কড়া সতর্ক রাখতে হবে। বনের অবাধ চলাফেরা নিশ্চিত করতে ‘ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠী’ তথা বনের কিছু বাসিন্দারা যাতে ওই ভালুকগুলোকে লোকে শিকার বা নিধন করে না ফেলে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়াও ভালুকের খাদ্য যোগানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এশিয়াটিক ব্ল্যাক জাতের এ ভালুক বিলুপ্তপ্রায়। এরা অত্যন্ত আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয়। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, ছোট-বড় মিলিয়ে বনে এ প্রজাতির ১০ থেকে ১২টি ভালুক আছে। এ প্রজাতির ভালুকের কালো পশম, একটি হালকা বাদামি মুখ ও বুকে একটি স্বতন্ত্র সাদা বা ক্রিমি প্যাঁচ থাকে, যা কখনও কখনও ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের মতো দেখতে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ভালুকের ওজন ৬০ থেকে ২০০ কেজি। গড় ওজন ১৩৫ কেজি। সর্বভুক এ প্রাণী পোকামাকড়, বিটল লার্ভা, অমেরুদণ্ডী প্রাণী, মৌমাছি, ঘাস, ছাল, শিকড়, কন্দ, ফল ইত্যাদি খায়।

আরটিভি/এমএ


 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission