• ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১
logo

মুজিবনগরের ঐতিহাসিক আমবাগান পেয়েছে নতুন জীবন 

  ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৪৭
ছবি : আরটিভি

মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা তথা মুজিবনগরের ঐতিহাসিক আমবাগান যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ঐতিহাসিক এবং পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিশাল এই আম বাগান পরিচর্যা অভাবে বিলীনের পথেই হাঁটছিল। হর্টিকালচার সেন্টারের পরিচর্যায় গাছগুলো থেকে পরগাছা দমন, পুষ্টির ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে নতুন রুপে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এই বাগানটি।

জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় আম বাগানের ধ্বংসাবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের দাবি ছিল আম বাগান রক্ষা করার বিষয়ে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।

এরই অংশ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প এর আওতায় আমগাছগুলো পুনরুজ্জীবন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মেহেরপুর হর্টিকাল সেন্টারের তত্ত্বাবধানে প্রায় এক বছর ধরে বাগানে নানা প্রকার কাজ করা হয়। এর মধ্যে গাছ থেকে পরগাছাগুলো অপসারণ করা; একই সঙ্গে শুকনো ও রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় বাগানে চাষ না দেওয়ার কারণে মাটি ও গাছের শিকড় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেখানে প্রয়োজনীয় সেবা, সার, কীটনাশক, বিভিন্ন জৈব পদার্থ প্রয়োগ করা হয়েছে কয়েক ধাপে। গাছের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য গৌণ পুষ্টির জোগান দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও রোগাক্রান্ত গাছের বাড়তি পরিচর্যার পাশাপাশি ফাঁকা হয়ে যাওয়া স্থানগুলো লাগানো হয়েছে নতুন চারা। নতুন লাগানো চারাগুলোর বেড়ে উঠার জন্য লোহার বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে। সবমিলিয়ে গাছের চেহারা পাল্টে গেছে। এখন যেদিকে দৃষ্টি যায় সেদিকেই সবুজের সমারোহ। ডাল থেকে বের হচ্ছে নতুন কুশি।

জানা গেছে, গাছের সংখ্যা ঠিক রাখার জন্য প্রতিটি গাছে ট্যাগ লাগানো হয়েছে। পরিচর্যা করার পর নতুন পুরাতন মিলে সর্বমোট গাছের সংখ্যা ১ হাজার ২০০টি। এর মধ্যে পুরাতন গাছ ১০ হাজার ৪০টি এবং নতুন গাছের সংখ্যা ১৬০টি।

ব্রিটিশ সময়ে জমিদার কেদারনাথ চৌধুরীর স্ত্রীর আমের আচার বাগান ছিল এই আম্রকাননটি। কালক্রমে তা হয়ে ওঠে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র জন্মের শপথ ভূমি। ইতিহাসের পাতায় বাগানটির নাম সগৌরবে স্থান পেলেও আম বাগান রক্ষায় কোন উদ্যোগ ছিল না। জেলা প্রশাসন প্রতি বছর বাগানের ফল ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় করেছে। তবে বাগান পরিচর্যায় তেমন কোন কার্যক্রম ছিল না। ফলে শতবর্ষী এসব গাছ ক্রমেই মৃত্যুর দিতে যাচ্ছিল। গাছের ডালে ডালে ছিল পরগাছায় ভরপুর। ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার ডাল শুকিয়ে ক্ষত হচ্ছিল ফলদায়ী এসব বৃক্ষ। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সেচ ও সার না পেয়ে অনেক গাছ মারা যায়। ফাঁকা হতে থাকে ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী কেদারনাথ বাবুর আম বাগান।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর জেলা উপজেলা প্রশাসন থেকে বাগানের ফল ইজারা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় হলেও ইজারাগ্রহণকারীরা নানাভাবে বাগান ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। মরা বাগান তাজা করেছে হর্টিকালচার সেন্টার। সারি সারি আমগাছগুলো সতেজ ও সবুজে ভরে গেছে। গাছগুলোর এমন রুপই দেখতে চান স্থানীয়রা।

পাবনা থেকে ঘুরতে আসা কলেজ শিক্ষক আমিরুল ইসলাম জানান, বাগানের এখনকার রূপে আমরা মুগ্ধ। ৫ বছর আগে একবার এখানে এসে বাগানের জীর্ণদশা দেখে হতাশ হয়েছিলাম। এই বাগান রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার দাবি করেন তিনি।

বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক ডক্টর মেহেদি মাসুদ জানান, গাছপালা কমে যাওয়ায় জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অনুকুল পরিবেশ রাখতে এই আমগানের মত বাগানগুলো টিকিয়ে রাখতে হবে। পরিচর্যার মাধ্যমে গাছগুলো যেমনি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে তেমনি এলাকার পরিবেশের ওপর ইতিবাচক একটি প্রভাব পড়েছে। বাগান রক্ষার এই ধারা সংশ্লিষ্টরা ধরে রাখবেন বলে প্রত্যাশা করেন দেশের-খ্যাতনামা এই কৃষিবিদ।

জানতে চাইলে মেহেরপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, বাগানটির বর্তমান অবস্থা দেখলে যে কারও প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। যা হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল। বাগান টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব সকলের। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাগানটির দিকে সুদৃষ্টি রাখবেন এ প্রত্যাশা।

আরটিভি/এএএ

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
২ দিনের রিমান্ডে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী
মেহেরপুর কারাগারে নেওয়া হলো সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রীকে
মেহেরপুরে ট্রাকচাপায় শিশু নিহত
বাজারে সবজি ও পেঁয়াজ পর্যাপ্ত, ক্রেতা কম