ভূমি দস্যুদের কবলে বৈষ্ণব সভা মন্দির, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন বৈষ্ণব সভা মন্দিরের ভাড়াটিয়াদের অসহযোগিতার কারণে ভগ্ন মন্দিরটি আজও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। উল্টো মন্দির কমিটির ওপর হামলা মামলার শিকার হতে হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশকে জানালেও রয়েছে নীরব।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে বৈষ্ণব সভা মন্দির পরিচালনা কমিটি রাজশাহীর ধর্মসভায় পুলিশের নীরবতা, হামলাকীদের হামলা, মামলা ও হুমকির প্রতিবাদে এক সংবাদ সম্মেলন করে।
সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগ করা হয়, বৈষ্ণব সভা মন্দিরের পূর্ব পার্শ্বে একটি বহুতল ভবন নির্মাণকালে মন্দিরটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর মূল অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা নিজ অর্থায়নে মন্দিরটির অবকাঠামো নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
এ বিষয়ে গত ৩০ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মন্দির কমিটির সাথে তার একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ইতিমধ্যে নতুন মন্দির নির্মাণের লক্ষ্যে আমরা পুরাতন ভবন অপসারণ করি।
উল্লেখ্য মন্দিরটির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে মোট ৬টি দোকানঘর রয়েছে। তৎকালীন মন্দির কমিটি মন্দিরের ব্যয়ভার পরিচালনার জন্য উক্ত দোকানঘরগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট ভাড়া দেয়। সম্প্রতি নতুন মন্দির নির্মাণের লক্ষ্যে উক্ত ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চুক্তিপত্র অনুযায়ী দোকানঘরগুলো ছেড়ে দিতে অনুরোধ করিলে তারা অসম্মতি জ্ঞাপন করে এবং ১০৭ ও ১৪৪/১৪৫ ধারায় মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে ১০টি মামলা করে। যা মহামান্য আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে ৬টি দোকানঘরের মধ্যে একটি দোকান ঘর বিবাদী অরুণ চক্রবর্তী, রাজিব চক্রবর্তী ও মীরা চক্রবর্তী গং ৯৪৮২ নং জাল দলিলের মাধ্যমে নিজ নামে খারিজ করে নেয়। এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা সহকারী (ভূমি) বোয়ালিয়া অফিসে মামলা করি। বিজ্ঞ আদালত মন্দির কমিটির পক্ষে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে একটি আদেশ প্রদান করেন। বিবাদী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজশাহী আদালতে আপীল করিলে পুনরায় মন্দির কমিটির পক্ষেই বিজ্ঞ আদালত ২৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে আদেশ প্রদান করেন এমনকি জেলা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিবাদী অরুণ চক্রবর্তী চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করিলে সেই মামলাটি ও গত ১১ আগস্ট ২৪ তারিখে নামঞ্জুর করে দেয় এবং জাল ৯৪৮২ নং দলিলটি সেভ কাষ্টডিতে রাখার আদেশ প্রদান করেন।
অরুণ চক্রবর্তী এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে সাবলেট ভাড়া প্রদানের ষড়যন্ত্র করিতেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া আমি সভাপতি অশোক কুমার সাহা অরুণ চক্রবর্তীকে অন্যত্র ভাড়া না দেবার জন্য অনুরোধ করিলে বিবাদী অরুণ চক্রবর্তী ক্ষিপ্ত হয়ে অন্যান্য ভাড়াটিয়া সহ তার পক্ষের অনুমান ৪০/৫০ জন লোক নিয়ে আমার ও আমাদের সম্প্রদায়ের লোকদের উপর চড়াও হয় এবং মারধর করে। ফলে ঘটনাস্থলে মন্দির কমিটির কয়েকজন সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হয়। এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানাভাবে তারা আমাদের হুমকি প্রদর্শন করে আসছে। এই বিষয়ে গত ৯ জানুয়ারি বোয়ালিয়া মডেল থানা রাজশাহীতে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে মন্দির কমিটির পক্ষে সভাপতি আশোক কুমার সাহা ২টি অভিযোগ পত্র দায়ের করা হয়ে। কিন্তু আজ অবধি এর কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এমনকি থানা আমাদের কোন মামলা গ্রহণ করে নাই। উপরন্তু পুলিশ বাদী হইয়া উভয় পক্ষকে অভিযুক্ত করিয়া কৌশলে গত ১১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ১০৭/১৭ একটি মামলা দায়ের করিয়াছেন। যাহা অত্যন্ত দুঃখ জনক। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য পুলিশ কমিশনার ও ডিসি মহোদয় বরাবর দুটি আবেদন পত্র জমা প্রদান করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার সংশ্লিষ্ট বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
কিন্তু আজ অবধি কোন প্রকার সমাধান পাওয়া যায় নি। এখন আমরা নিরাপত্তা হীনতায় দিন কাটাচ্ছি। দোকানঘর ভাড়াটিয়াদের হুমকি ও প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে আজও নতুন মন্দির স্থাপন করা সম্ভব হয় নাই। সংবাদ সম্মেলনে বৈষ্ণব সভা মন্দিরের সভাপতি অশোক কুমার সাহা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষ্ণব সভা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক মহেশ চন্দ্র সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সনৎ কুমার সাহা, রাজশাহী মহানগরীর হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাসসহ আরও অনেকে।
আরটিভি/এএএ/এআর
মন্তব্য করুন