পাইকগাছায় লক্ষ্যমাত্রার একভাগ ধানও সংগ্রহ হয়নি
পাইকগাছায় চলতি আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার একভাগ ধানও ক্রয় করতে পারেনি খাদ্য গুদাম। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে হাটবাজারে বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পারায় খাদ্য গুদামে কোন কৃষক এ বছর ধান নিয়ে যাননি।
কৃষক আবদুর রশীদ জানান, এই বছর আমন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আধা শুকুনা ধান ১ হাজার ৫৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। আর সরকার দর দিয়েছে ১ হাজার ৩২০ টাকা। সরকারকে ধান দিতে গেলে শুকিয়ে দিতে হয়, তাও আবার কর্মকর্তাদের চাহিদামতো সময়ে। গাড়ি ভাড়াও বাড়তি গুনতে হয়। যারা কার্ড করতে পারেননি, তারা ইচ্ছা করলেও ধান দিতে পারবেন না।
উপজেলার দেলুটী ইউনিয়নের কৃষক আবুল হোসেন ইসলাম বলেন, এবার ফুলবাড়ী বাজারে ভেজা ধান ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় আমি সরকারকে ধান দিইনি। শুকনো ধান দিতে গেলে মণে ৫ কেজি ঘাটতি হয়। আবার টাকা পেতেও ভোগান্তি হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, ইতিপূর্বে নানা অজুহাতে কর্মকর্তারা বাড়তি টাকা দাবি করায় সরকারি গুদামে ধান দিতে উৎসাহ পান না তারা।
উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা জানান, সরকারিভাবে প্রতিমণ ধানের ক্রয়মূল্য ১ হাজার ৩২০ টাকা ধরা হয়েছে। অথচ বাড়ি থেকে ওই ধান খাদ্যগুদামে নিতে ৪০০-৫০০ টাকা গাড়ি ভাড়া ভাড়া লেগে যায়। অনেক ব্যাপারি কৃষকের বাড়িতে গিয়ে ধান কিনে নেন। সেখানে কষকের কোনো খরচ হয় না। এছাড়া কৃষি কার্ড নিয়ে অনলাইনে আবেদন, ব্যাংক চেকের মাধ্যমে দাম পরিশোধ, আর্দ্রতা মাপা, পরিবহণ খরচসহ নানা ঝামেলার কারণে তারা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে চান না। জায়গা বিশেষ খরচ আরো বাড়ে। কৃষকের কথা চিন্তা করে সরকারিভাবে ধানের দাম আরও বাড়াতে হবে, তা না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
পাইকগাছা উপজেলায় খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সরকারি ভাবে ধান বিক্রয়য়ের আবেদন করেন কৃষকরা। এবছর উপজেলার সকল কৃষকের জন্য ধান বিক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তার পরও গত দুই মাসে আমন মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার এক ছটাক ধানও সংগ্রহ হয়নি। উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ৫৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের কর্যক্রম চলবে।
হাটবাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকরা গুদামে ধান নিয়ে আসছেন না। গত বছররেও আমন মৌসুমে এক ছটাক ধান আদায় হয়নি। উপজেলার গড়ইখালী ইউনিয়নের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের বাজার এখন ঊর্ধ্বগতির দিকে যাচ্ছে। ধানের দাম আরও বাড়বে বলে মনে করে অনেক কৃষক ধান বিক্রি না করে ঘরে মজুত করছেন।
উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, উপজেলার হাটবাজারে ধানের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি থাকায় ধান সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ বাজারদর অব্যাহত থাকলে খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি।
উপজেলা কৃষি অফিসার একরামুল ইসলাম জানান, এবার উপজেলায় ১৭৪২৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হলেও অতিবৃষ্টির জন্য অনেক জমির আমন ধান নষ্ট হয়েছে। তার পরেও হেক্টর প্রতি গড় ৪.৫ মে. টন ধান উৎপাদন হয়েছে। বাজারে ধানের দাম বেশি রয়েছে ফলে কৃষকরা গুদামে ধান দিচ্ছে না বলে শুনেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ধান সংগ্রহ পর্যবেক্ষণ কমিটির সভাপতি মাহেরা নাজনীন বলেন, উপজেলায় এবার ১৫হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে ধান উৎপাদন কিছুটা ব্যহত হলেও ফলন বেশ ভালো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে হাটবাজারগুলোতে কৃষকরা ভালো দামে ধান বিক্রি করতে পারছেন। ফলে খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হয়েছে।
আরটিভি/ ডিসিএনই
মন্তব্য করুন