ঢাকারোববার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

পৃথিবীর মুখ দেখল শহীদ সেলিম-সুমী দম্পতির কন্যাসন্তান

ঝালকাঠি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ 

শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫ , ১১:১৪ পিএম


loading/img
ছবি: সংগৃহীত

অপারেশন থিয়েটার থেকেই বের করতেই নবজাতক কন্যা শিশু দু’চোখে টলটলিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। নিজ হাত মুখে দিচ্ছে। দাদি ছোট্ট কাঁথা নিয়ে নাতিকে কোলে নিলেন। তখনও মাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হয়নি। কানে আজান দেওয়ার জন্য নিজস্ব লোক খুঁজছিল। এ সময় নবজাতক কান্না শুরু করল। তখনই নবজাতকের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয় স্বজন সবাই কুঁকড়ে কেঁদে উঠল। নবজাতক জন্মের পরে আনন্দের হই-হুল্লোড়ের পরিবর্তে শোকার্ত আহাজারি ও বিলাপে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। সবাই বিলাপে স্মৃতিচারণ করে শহীদ সেলিম তালুকদারের অনুপস্থিতি স্মরণ করে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নলছিটির শহীদ সেলিম তালুকদারের স্ত্রী সুমী আক্তারের ফুটফুটে নবজাতক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যা সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পায়। 

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৩১ জুলাই নিহত হন তিনি। অথচ, এর তিনদিন পরই ৪ আগস্ট ছিল প্রথম বিবাহবার্ষিকী। ৮ আগস্ট পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার অন্তঃসত্ত্বা । শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সুমী আক্তারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শহরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান দুনিয়ার আলো দেখতে পায় কিন্তু সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি সেলিম তালুকদার।

বিজ্ঞাপন

সেলিম তালুকদার (২৮) একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ১৮জুলাই রাজধানীর মধ্যবাড্ডায়  গুলিবিদ্ধ হন। ৩১ জুলাই রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ২ আগস্ট সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয় সেলিম তালুকদার।

সেলিম নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সুলতান হোসেন তালুকদারের ছেলে। তিনি বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আড়াই বছর আগে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন। তারা তিন বোন ও এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজ।

এর আগে নিহত সেলিমের স্ত্রী সুমী জানিয়েছিলেন, ওইদিন সকালে বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন  সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের মধ্যে আটকে পড়েন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন।

বিজ্ঞাপন

সুমি আক্তার বলেন, আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তানই আমার কাছে থাকবে। আমার একটাই চাওয়া আমার সন্তানকে যেন কারও কাছে হাত পাতা না লাগে। আমি যতদিন বাঁচবো শহীদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচবো। সন্তানকে তার পরিচয় দেবো।

ছেলের শোকে এখনো কাতর মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, এখন যদি সেলিম বেঁচে থাকতো তাহলে প্রথম কন্যা সন্তান, কত আনন্দ পেতো। তা সেলিমের ভাগ্যে নেই।

তিনি বলেন, আমার ছেলের চিকিৎসার পেছনে প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ধার দেনা করে এসব টাকা জোগাড় করেছি। সেই টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আমরা চাই আমার ছেলেকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হোক।

আরটিভি/এএএ  

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |