চারদিকে সবুজের সমারোহ। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে অলওয়েদার সড়ক। সড়কের দুই প্রান্তে দিগন্ত বিস্তৃত পতিত জমি। যেখানে শত শত গরুর অবাধ বিচরণ। এ যেন গো-চরণভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন অপরূপ দৃশ্যের দেখা মিলবে কিশোরগঞ্জের হাওরে। বোরো চাষ, মাছ শিকারের পাশাপাশি ৬ মাস মেয়াদি গবাদিপশু লালনপালনে ঝুঁকছে এখানকার প্রান্তিক কৃষকরা। এ সময় পুরো হাওরজুড়ে ঘাসের আধিক্য থাকায় বিনা খরচে গবাদি পশু লালন পালন করে উপকৃত হন প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করা এসব মানুষ। তাদের সেই পরিশ্রমে পাল্টে যাচ্ছে জেলার অর্থনৈতিক চাকা।
মিঠামইন উপজেলার ভাতশালা হাওরে গরু নিয়ে আসা খামারি ও কৃষকরা জানান, গরুগুলো এই হাওরের স্থায়ী বাসিন্দাদের নয়। হাওর উপজেলা ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন দরিদ্র প্রান্তিক কৃষক। হয় রোজ সকালে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে গরুগুলোকে আনা হয় অথবা গরুগুলোর জন্য হাওরেই বানানো হয় অস্থায়ী তাঁবুর মতো ডেরা। শুকনা মৌসুমে হাওরে অস্থায়ীভাবে গরু লালনপালনের পুরোনো-প্রচলিত একটি পদ্ধতি হচ্ছে এই বাথানব্যবস্থা। বিকেলে গরুর ছোট ছোট পালের দেখা মেলে এখানে-ওখানে। একেক পালে ৫টি থেকে ১০টি গরু থাকে। পানি কমে যাওয়ার পর শুকনো মৌসুমে হাওরের বুকে বিভিন্ন জাতের ঘাস বেড়ে ওঠে। সেই ঘাসকে পুঁজি করে ৬ মাস মেয়াদি গরু লালনপালন করে থাকে এখানকার কৃষকরা। প্রাকৃতিক উপায়ে সবুজ ঘাসের মাধ্যমে মোটাতাজা করায় অল্প খরচে অধিক লাভ হয় বলে জানান প্রান্তিক এসব মানুষ।
হাওরে অস্থায়ী গরু পালন করতে আসা খামারি শাহাদাৎ মিয়া বলেন, আমরা তিনজন মিলে অস্থায়ী খামার দিয়েছি। এখানে ৮৩টি গরু আছে। এই ঘাসকে পুঁজি করেই আমাদের গরু লালন পালন করতে হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে কোরবানি ঈদের আগ পর্যন্ত এখানে লালনপালন করব। এরপর হাটে বিক্রি করে দেব। বাইরের কোনো খাবার খাওয়াতে হয় না। অতিরিক্ত কোন খরচ না থাকায় আমাদের লাভটা একটু বেশি হয়। ঘাসগুলো বড় করতে কিছু খরচ হয়। আমাদের থাকা খাওয়াটা কষ্ট হয়।
কৃষক লিমন বলেন, মূলত এই উঁচু জমিগুলো চাষের উপযুক্ত না হওয়ায় এখানে শুকনো মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে ঘাস হয়। সেই ঘাস গুলোকে পুঁজি করে গরু লালনপালন করা হয়। ঘাসগুলো ছোট থাকতে যত্ন নিতে হয়। আমাদের খরচ কম। তাই আমাদের লাভ বেশি। প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করা হয়।
শাহ মোহাম্মদ বলেন, বর্ষাকালে আমরা গরু বিক্রি করে ফেলি। বর্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার গরু কিনে আনি। আগে একটা গরু লালনপালন করতাম। লাভ বেশি হওয়ায় এই বছর ১৫টি গরু লালন পালন করছি। যেসব জমিতে ধান আবাদ হয় না সেই জমিগুলোতে ঘাস চাষ করেছি। সেই চাষকৃত ঘাস দিয়ে গরু লালন পালন করে থাকি। খরচ কম লাভ বেশি।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, বর্ষাকালে হাওরে গবাদি পশু লালনপালন কমে যায়। সাধারণত বর্ষায় ১০ হাজার টন দুধ ও ৪ হাজার ৭০০ টন মাংস উৎপাদন হয়। শুকনোর সময় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে দুধের পরিমাণ দাড়ায় ১০ লাখ টন। পাশাপাশি ৬ হাজার টন মাংস উৎপাদন হয়। হাওরে প্রাকৃতিক ঘাস খাওয়ানোর মাধ্যমে নিরাপদ পদ্ধতিতে দুধ ও মাংস উৎপাদনে প্রাণিসম্পদ দপ্তর পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয়। জেলায় উৎপাদিত দুধ ও মাংসের ১৫ শতাংশ আসে হাওর থেকে।
আরটিভি/এফএ/এস