আজ ভয়াল ২৫ মে। ২০০৯ সালের এই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। সাতক্ষীরা, খুলনা ও আশপাশের বিস্তীর্ণ জনপদ মুহূর্তেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। প্রাণহানি ঘটে শতাধিক, গৃহহীন হয় কয়েক লাখ মানুষ।
১৬ বছর পার হলেও বদলায়নি শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা, দাকোপের মানুষের জীবন। এখনও অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান আর সুপেয় পানির জন্য প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হচ্ছে উপকূলবাসীকে।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর ও আশাশুনির প্রতাপনগর এলাকায় মানুষের হাহাকার থামেনি। আইলার পর ধ্বংস হওয়া বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা আজও পুরোপুরি পুনর্গঠিত হয়নি।
শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বনাশা আইলার আঘাতে শুধু সাতক্ষীরায়ই নিহত হয় ৭৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু। আর আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে এসব এলাকার ৫ লাখ ৯৫ হাজার ১২২ জন মানুষ নিরাশ্রয় হয়ে পড়ে। শুধু শ্যামনগরেই গৃহহীন হয় ২ লাখ ৪৩ হাজার ২৯৩ জন।
এ ছাড়া শ্যামনগরের ৯৬ হাজার ৯১৬টিসহ মোট ১ লাখ ৪২ হাজার ২৪৪টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। উপজেলার ৪৮ হাজার ৪৬০ পরিবারসহ মোট ১ লাখ ১৪ হাজার পরিবার আইলার আঘাতে সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আইলার ধ্বংসযজ্ঞে ৩৯৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ তিন শতাধিক মসজিদ, মন্দির সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি ১৭৯ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ও ৯৯ কিলোমিটার আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। ৪১টি ব্রিজ ও কালভার্টসহ ১১৭কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। শুধু শ্যামনগরেই ১২৭ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধের ৯৭ কিলোমিটার সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সহস্রাধিক নলকূপ ও দুই হাজারেরও বেশি পুকুর জলাশয় জলমগ্ন হয়ে পড়ায় দুর্দশাগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, কিছু এলাকায় বাঁধ সংস্কার হলেও এখনো বহু পয়েন্টে মারাত্মক ঝুঁকি রয়ে গেছে। নদীর জোয়ার বাড়লে আতঙ্কে থাকেন হাজারও পরিবার।
এলাকাবাসীর দাবি—টেকসই বেড়িবাঁধ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও অবকাঠামো সংস্কারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক সরকার। না হলে ভবিষ্যতের ঝড়েও হয়তো আর টিকতে পারবে না উপকূল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দীন বলেন, সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামত করছে। ইতোমধ্যে ৩৫ কিলোমিটার বাঁধকে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি অংশও পর্যায়ক্রমে নির্মাণ করা হবে।
আরটিভি/এএএ/এস