জোর করে ধর্মান্তর-বিয়ে, অবশেষে আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে দিয়ে গ্রেপ্তার স্বামী
কুষ্টিয়ায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক হিন্দু কলেজছাত্রীকে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, ওই নারীকে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে তার চুল কেটে দেওয়াসহ অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে পাষণ্ড নাজমুল। এরইমধ্যে নাজমুল স্ত্রীর মাথার চুল কেটে ফেসবুকে ছবি আপলোড করে। স্ত্রীর ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে তার নিকটজনদের কাছে নগ্ন ছবি ও ভিডিও পাঠায়। এমনকি ওই নারীকে কৌশলে হত্যা করার চেষ্টা করে নাজমুল।
অবশেষে পুলিশ প্রতারক নাজমুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল মঙ্গলবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি দল শহরের পাঁচ রাস্তার মোড় শাপলা চত্বর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তারের পর রাতে নাজমুল পুলিশের কাছে স্ত্রীর ওপর নির্যাতনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুল জানায়, ওই কলেজছাত্রীকে নিজের দখলে রাখতে গোপন ক্যামেরায় তার নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। এসব নগ্ন ছবি ও ভিডিওর ভয় দেখিয়ে আজীবন তাকে বাধ্য করে রাখতে চেয়েছে।
পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী গোপন ক্যামেরায় মেয়েটির নগ্ন ছবি ও গোসলের ভিডিও ধারণ করে নাজমুল। এমনকি দুইজনের শারীরিক সম্পর্কের ছবিও ভিডিও ধারণ করে নিজের কাছে রেখে দেয়। নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণের জন্য মেয়েটিকে মাঝেমধ্যে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হতো। এসব নগ্ন ছবি ও ভিডিওর ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে নির্যাতন করতো নাজমুল।
-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : টঙ্গীতে ন্যাশনাল ফ্যান কারখানায় বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩
-------------------------------------------------------
বাগে আনতে না পেরে শেষ পর্যন্ত চরিত্রহীন হিসেবে প্রমাণ করার জন্য মেয়েটিকে মারপিট করে মাথার চুল কেটে দেয়। ভয়ভীতি এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ওই মেয়ের নগ্ন ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয় নাজমুল। নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে মেয়েটির মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলে। ওই ফেসবুক থেকে মেয়েটির আত্মীয়-স্বজনদের ফেসবুকে নগ্ন ছবি ও ভিডিও পাঠায় নাজমুল।
ওসি জানান, গ্রেপ্তারের পর নাজমুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ছিনিয়ে নেয়া স্ত্রীর মোবাইল ও নাজমুলের ব্যক্তিগত মোবাইল জব্দ করে পুলিশ। যে মোবাইল দিয়ে স্ত্রীর ফেসবুক আইডি থেকে নগ্ন ছবি ও ভিডিও বিভিন্নজনের ফেসবুকে পাঠানো হতো সেই মোবাইলটিও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
ওসি বলেন, নাজমুল ভয়ঙ্কর প্রতারক। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুল জানিয়েছে, ওই মেয়ে সুন্দরী হওয়ায় নিজেকে হিন্দু এবং অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। একপর্যায়ে মেয়েটিকে ধর্মান্তরিত করে বিয়েতে বাধ্য করে। ঘরে স্ত্রী-সন্তান থাকায় অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে সংসার করে নাজমুল।
গেল সোমবার দুপুরে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে ভুক্তভোগী মেয়েটি নাজমুলের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল একটি মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন।
ভুক্তভোগী নারী মামলায় উল্লেখ করেন, প্রায় চার বছর আগে কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজে যাওয়া-আসার পথে পৌর এলাকার জুগিয়া হাট পাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন তাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। অনেক বকাঝকা করেছি কিন্তু সে আমার পিছু ছাড়েনি। একপর্যায়ে নাজমুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর নাজমুল বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল এলাকার স্থানীয় এক কাজির কাছে নিয়ে যায়। এসময় নাজমুল আমাকে জানায় সে মুসলমান। একথা জানার পর নাজমুলকে বিয়ের অস্বীকৃতি জানায় ওই কলেজছাত্রী। এসময় নাজমুল এবং তার সঙ্গে থাকা অজ্ঞাত তিন-চারজন মেয়েটিকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক দুটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং নোটারি পাবলিক দিয়ে মুসলমান হিসেবে হলফনামা আদায়ের পর বিয়ে সম্পন্ন করে। বিয়ের কাবিননামায় মেয়ের বাবার নাম সুজন রাজবংশী পাল্টে লেখা হয় শেখ ইমতিয়াজ আলী এবং মায়ের নাম মালা রাজবংশীর পরিবর্তে লেখা হয় আফরোজা বেগম মালা।
একপর্যায়ে তার অত্যাচারে বাধ্য হয়ে বিয়ে মেনে নিয়ে সংসার শুরু করে। শহরের ছয় রাস্তার মোড়ের পাশে এবং জেলখানা মোড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু বিয়ের এক বছর পর কলেজছাত্রী জানতে পারে নাজমুল বিবাহিত। তার দুটি সন্তান রয়েছে। সেইসঙ্গে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সে। এসব বিষয়ে নাজমুলকে জিজ্ঞাসা করলে শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন। শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছালে মেয়েটি বাবার বাড়ি চলে যায়।
গত ২৬ জুন বেলা ১১টার দিকে নাজমুল মোটরসাইকেল নিয়ে মেয়েটির যায়। এসময় নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চায়। পরে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া সাতবাড়ীয়া মাঠের মধ্যে নিয়ে তাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে মাথার চুল কেটে দেয়। একই সঙ্গে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। মেয়েটির চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে নাজমুল পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসে।
এ ঘটনার পর থেকে মেয়েটির পরিবারকে হুমকি দিচ্ছিল নাজমুল। ঘটনার কয়েকদিন পর মেয়েটির আত্মীয়-স্বজনসহ পরিচিতজনদের ফেসবুকে অন্তরঙ্গ ছবি ও ভিডিও পাঠায়। সেইসঙ্গে অনেক নগ্ন ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।
ওসি বলেন, শাস্তি নিশ্চিত করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নাজমুলের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে।
আরও পড়ুন :
- ভোটযুদ্ধে নৌকা, ধানের শীষ ও আনারসের তিন প্রার্থী
- প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ছাত্রীদের সাইকেল র্যালি
জেবি/পি
মন্তব্য করুন