পুরান ঢাকার আকাশে রঙের মেলা
আকাশ জুড়ে ঘুড়ির মেলা। প্রতিটি বাড়ির ছাদে বর্ণিল আয়োজন। দেশি-বিদেশি গানের ছন্দে মেতেছেন ছেলে-বুড়ো সবাই। চোখ মেলে তাকালেই দেখা যায় রঙিন সাজে সেজেছে রাজধানীর প্রাচীনতম এলাকা পুরান ঢাকা। বাংলা মাঘ মাসের প্রথম দিন সকাল থেকেই ঘুড়ি উড়িয়ে গান বাজিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয়। স্থানীয়ভাবে উৎসবটির নাম দেয়া হয়েছে ‘শাকরাইন’। অনেকেই পৌষ মাসের শেষের এই উৎসবকে পৌষ সংক্রান্তিও বলে থাকেন।
দুপুরে নানা পদের খাবারের আয়োজনের পর বিকেল থেকে জমে উঠে এই বিশেষ আয়োজনটি। ঘুড়ি ও নাটাই নিয়ে ছেলেরা ব্যস্ত সময় পার করেন।সাধারণত বাড়ির মেয়েরাই খাবার রান্না করে থাকেন। তবে আয়োজন বড় হলে বাবুর্চির হাতে রান্না বা ক্যাটারিং সার্ভিস থেকেও খাবার নেয়া হয়। বংশাল, নয়া বাজার, জিন্দাবাহার, কলতাবাজার, নারিন্দা, নবাব বাড়ি, শাঁখারিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, ধুপখোলা, গেন্ডারিয়া, ফরিদাবাদ, ফরাশগঞ্জ, জুরাইন, সূত্রাপুর, ধোলাইখাল এলাকার প্রতিটি বাড়িতে এই উৎসবে মেতে উঠেন পুরান ঢাকাবাসী।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরি নামিয়ে উড্ডয়ন করা হয় ফানুশ আর তার সঙ্গে যোগ হয় আতশবাজি। রং বেরংয়ের আতশ থেকে সন্ধ্যা রূপ নেয় জমকালো উৎসবে। আর এই মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে চোখ ধাঁধানো রং-বেরংয়ের লেজার শো দেশের নানা প্রান্তে থেকে আসা অতিথিদের দেয় বাড়তি আনন্দ।
জিন্দা বাহারের বাসিন্দা মীর তুর্জয় নিজের বাসার ছাদে আয়োজন করেছে ‘শাকরাইন’। তিনি বলেন, প্রতিবারের মতো এইবারও আয়োজন করেছি। সকাল থেকে আমদের পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধুরা যোগ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এটি এখন আমাদের প্রাণের মেল বন্ধন।
একই ছাদে থাকা সানজান হোসেন বলেন, গেল এক সপ্তাহ ধরে কাচের গুঁড়ো, আঠা ইত্যাদি মিশিয়ে বিশেষ মশলা বানানো হয়েছে। এগুলো সুতায় মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি সুতায় ধার দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে এটিকে বলা হয় মাঞ্জা। উদ্দেশ্য অন্যের ঘুড়ির সুতা কাটা। দিনভর ঘুড়ির কাটাকাটি খেলার পর রকমারি খাবার আর সন্ধ্যা আতশবাজি আর গান-নাচের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আমাদের এই আয়োজন।
যাদের আত্মীয় বা বন্ধু নেই তারা কি করে এমন বৈচিত্র্যময় উৎসবে যোগ দেবেন? এ বিষয়টি মাথায় রেখে বন্ধুর ছাদে শাকরাইন আয়োজন করেছেন আনিস জামান ও শাম্মী জামান দম্পতি।
শাম্মী জামান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ঘুড়ি উৎসব নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। আমি পুরান ঢাকার মেয়ে। শ্বশুড়বাড়িও এই এলাকায়। যদিও আমরা বর্তমানে নতুন ঢাকায় থাকি। পরিচিত অনেকেই আমাদের পুরান ঢাকায় এই উৎসবে যোগ দিতে চান। তবে আমরা সেখানে আপাতত থাকি না। তাই কাউকে আমন্ত্রণও জানাতে পারি না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই লেকচারার আরও বলেন, পুরান ঢাকায় যাদের কোনও সুপরিচিত মানুষ নেই তাদের জন্য ফরিদাবাদ এলাকায় এক বন্ধুর ছাদে ‘শাকরাইন ফেস্ট’ নামে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খুলি। এতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। যেহেতু এগুলো আয়োজনে অনেক খরচ হয় তাই অর্থের বিনিময়ে আমরা আকর্ষণীয় এক আয়োজন করেছি। যাতে করে সবাই এই উৎসবে অংশ নিতে পারেন। উৎসবটি সর্বজনীন করতেই আমাদের ক্ষুদ্র এই প্রয়াস।
আরও পড়ুন
ওয়াই/জেবি
মন্তব্য করুন