আসামিকে না পেয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পুলিশের নির্যাতন, মামলা
মেহেরপুরে মেহেদী হাসান বাকের নামের অটো চালককে ধরতে গিয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর উপর নির্যাতন, বাড়ির আসবাব পত্র ভাংচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে সদর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) লস্কর লাজুল ইসলাম জিয়ার বিরুদ্ধে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার বিকেলে মেহেদি হাসান বাকেরের স্ত্রী ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্য এক অটো চালকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে বাকেরের নামে সদর থানায় একটি অভিযোগ দিলে এসআই জিয়া ফোর্স নিয়ে বাকেরের বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এসআই জিয়ার এ কর্মকাণ্ডের বিষয়টি জেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগীর মামলার পর পুলিশ প্রশাসন থেকেই আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার। অপরদিকে অভিযুক্ত এসআই জিয়াকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানা গেলেও এ বিষয়টি পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।
মেহেরপুর পুলিশ সুপার এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি ওবাইদুর রহমান ও ডিআইও-ওয়ান ফারুক হোসেন।
মামলার বিবরণে বাকেরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মারিয়া খাতুন বলেন, গত মঙ্গলবার দুপরে বাদী বাড়িতে একা ছিলেন এবং দুপুরের রান্না করছিলেন। এসময় এসআই জিয়া আরও দুইজন পুলিশ সদস্য নিয়ে বাড়ির দরজায় ডাকাডাকি শুরু করেন। বাড়িতে কেউ নাই বলাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে টিনের দরজায় লাথি মারলে দরজা খুলে যায়। তখন তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন। এসময় গালিগালাজ করতে করতে ঘরের মধ্যে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র তছনছ করা শুরু করে। চেয়ার টেবিলসহ বিভিন্ন জিনিস ভাংচুর করে এবং আলমারিতে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। পরে রান্না ঘরে মোটরসাইকেল দেখে চাবি চায়। চাবি দিতে না চাইলে তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং বিভিন্ন হুমকি দেয়।
এক পর্যায়ে চাবি দিলে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের অ্যাপাচি আরটিআর ব্রান্ডের মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং বলেন টাকা নিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ফেরত নিয়ে আসতে।
এজাহারে আরও জানান, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে থাকা নগদ ৮৫ হাজার টাকা, ৯১ হাজার টাকা মূল্যে স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছেন ওই পুলিশ সদস্যরা।
মেহেদী হাসান বাকের বলেন, সোহেল নামের এক অটোচালকের সঙ্গে পূর্বের একটি বিরোধ থেকে সে থানায় আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই জিয়া আটক করতে আসেন।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আমার স্ত্রী কোন অপরাধ করেনি। আমার বাড়ি ঘর কোনও অপরাধ করেনি। আমার বাবাও একজন পুলিশ কর্মচারী। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের ব্যবহার তিনি করতে পারেন না। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
বাকেরের প্রতিবেশী আনজিরা খাতুন জানান, তিনটি পুলিশ এসে বাড়ির ভেতরে সবকিছু ভেঙে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় আজে বাজে গালিগালাজ করেছে। বাকেরের পোয়াতি (অন্তঃসত্ত্বা) বউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত এসআই লস্কর লাজুল ইসলাম জিয়া বলেন, তার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তবে স্বীকার করে তিনি বলেন, বাড়িতে একটি অনটেস্ট (লাইসেন্স বিহীন) মোটরসাইকেল ছিল সেটি নিয়ে এসেছি।
মোটরসাইকেল কোন অপরাধে নিয়ে আসলেন এমন প্রশ্নে তিনি কোন জবাব দেননি।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম (পিপিএম) তদন্তের বিষয়ে বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এসএস
মন্তব্য করুন