শিকল থেকে মুক্ত সাদেকুল
বাড়ির বাইরে, উঠানের একপাশে গরু রাখার দুটি কক্ষের একটিতে রাখা হতো সাদেকুলকে। গ্রিলের দরজায় তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখা থাকতো। রাত-দিন সবসময় ওই ঘরের মধ্যে সাদেকুলের জীবন যাপন। খাবার দেয়া হতো গ্রিলের ফাঁক দিয়ে। মাঝেমধ্যে তার বড় ভাই বের করতেন গোসলের জন্য।
ছোট্ট ঘরের মধ্যে বসে সাদেকুল নিরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো বাইরের দিকে। গ্রামের সবাইকেই চিনতে পারতো তাই সামনের রাস্তা দিয়ে কেউ গেলেই কথা বলতো। বাইরে যাওয়ার জন্য তালা খুলে দেয়ার অনুরোধ করতো। এই অবস্থায় ধীরে ধীরে সাদেকুলের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতি শক্তিও।
অমানবিক এই দৃশ্য গ্রামবাসী দেখে আসছে প্রায় ৩ বছর ধরে। কষ্ট ও ক্ষোভ জন্মেছে অনেকের মধ্যে। এই অবস্থার অবসান ঘটলো গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর)।
বুধবার দুপুরে রাণীনগর থানার ওসি জহুরুল ইসলাম ও সমাজসেবা কর্মকর্তা রেজোয়ানুল হক সাদেকুলকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন।
এর আগে যুবক সাদেকুলের বন্দিদশা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচর হলে সাদেকুলকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
সাদেকুলের মুক্তির পর গ্রামবাসী ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, মানবাধিকার কর্মীরা গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
উদ্ধারের সময় সমাজসেবা কর্মকর্তা রেজোয়ানুল হক বলেন, পাগল বা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও কোনও মানুষকে এভাবে বন্দি করে রাখা অনুচিত। আইনত অপরাধ। সাদেকুলকে একটি ঘরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি রাখায় ধীরে ধীরে তিনি আরও বেশি মানুষিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তার পরিবারের লোকজন কাজটি ঠিক করেনি।
রাণীনগর থানার ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারের পর সাদেকুলকে চিকিৎসা দেয়ার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার ভবানীপুর মোবারক পাড়া গ্রামে সাদেকুল ইসলামকে তিন বছর ধরে কখনও শিকল বন্দি আবার কখনও গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। পাগলামি করে মানুষের ক্ষতি করছে এমন অজুহাতে তাকে গৃহবন্দি করে রাখার অভিযোগ ভাই শেরেকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
পাশের ঘোষগ্রাম কফিলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন সাদেকুল। সেই সময় মানুষিক রোগে আক্রান্ত হলে বিভিন্ন স্থানে তার চিকিৎসায় ছুটেছে পরিবার। পরবর্তীতে বাড়িতেই বন্দি রাখা হয়। সবশেষ বছর তিনেক আগে বাড়ির বাইরে গোয়াল ঘরের একটি কক্ষে ঠাঁই মিলে সাদেকুলের।
সাদেকুলের বড় ভাই শেরেকুল ইসলাম জানান, অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানোর পরও সাদেকুলের রোগ নিরাময় করা যায়নি। অভাবের সংসারে আর কোনও খরচ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ঘরে আটকে রাখা হয়েছে।
এসএস
মন্তব্য করুন