বরের বাড়িতে কনে যাত্রী, নিয়ে গেল বর! (ভিডিও)
আড়ম্বরপূর্ণ বিয়ের আয়োজন। বরের বিয়ে বাড়ির আশপাশে আয়োজনের কমতি নেই। রান্না চলছে আর দাওয়াতি মেহমানদের অভ্যর্থনা চলছে সকাল থেকেই। দৃষ্টিনন্দন বিয়ের গেটের দুই পাশে লাইনে দাঁড়ানো অসংখ্য মানুষ। বিয়ের বহর গেটের কাছে আসতেই এক অন্যরকম উত্তেজনাকর আনন্দ। মাইক্রোবাস থেকে নামলেন লাল বেনারসি শাড়ী পরা কনে।
চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী যাত্রীসহ বর কনের বাড়িতে এভাবে যাত্রা করেন। অথচ এবার ঘটলো তার ব্যতিক্রম। বরের বাড়িতে কনে আসলো বিয়ে করতে। এমনই ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ঘটেছে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার চৌগাছা গ্রামে।
কনে চুয়াডাঙ্গার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি। কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজে অনার্স পড়ে তিনি। আর বর গাংনীর চৌগাছার কমরেড আব্দুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম জয়। তিনি একজন ব্যবসায়ী।
সকাল থেকেই কমরেড আব্দুল মাবুদের বাড়ির আশপাশে ছিল বিপুল সংখ্যক উৎসুক মানুষ ও আত্মীয় স্বজনদের ভিড়। ভিন্নধর্মী এ বিয়ের আয়োজন ঘিরে এলাকার মানুষেরও উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। উৎসুক দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়ে ছিলেন কখন আসবে কনে ও কনেযাত্রীরা।
অবশেষে দুপুরে ৭টি মাইক্রোবাস ও ৩০টি মোটরসাইকেল বহর নিয়ে কনে এসে নামলেন বরের বাড়ির গেটের সামনে। প্রথানুযায়ী ফুল ও মিষ্টি মুখ করিয়ে কনেকে বরণ করেন বর পক্ষ। এর পর শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী একজন মাওলানা তাদের দু’জনকে কবুল পড়ান। প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করান স্থানীয় কাজি। এরপর বর পক্ষের দাওয়াতি আত্মীয় স্বজন ও কনে যাত্রীদের ভুরিভোজ করানো হয়। বিকেলে বরকে নিয়ে কনে চলে যান তার বাবার বাড়িতে। সেখানে কয়েকদিন কাটানোর পর কনে সঙ্গে নিয়ে বর ফিরে আসবেন তার বাড়িতে।
কনে খাদিজা আক্তার খুশি বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার হিসেবে একজন মেয়ে একজন ছেলেকে বিয়ে করতে তার বাড়িতে যেতে পারেন তা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সেই বাধার বৃত্ত ভেঙেছি। আশা করছি অনেকেই এখন এটি করবেন।
বিয়ের আয়োজন প্রসঙ্গে বরের বাবা কমরেড আব্দুল মাবুদ বলেন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার রয়েছে। মুখে আমরা বললেও তা বাস্তবায়ন করছি কতটুকু? তাই আমি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়টি সামনে আনতে চেয়েছি।
উৎসুক মানুষের কয়েকজন জানালেন, বরপক্ষ কনে পক্ষের বাড়িতে যাবে এটি প্রচলিত প্রথা। এই প্রথা ভেঙে কনেপক্ষ বরের বাড়িতে বিয়ে করতে আসছে তা অবশ্যই আনন্দদায়ক।
নারী নেত্রী নার্গিস পারভীন বলেন, ভাবতেই ভালো লাগছে যে মেয়েরাও পারে। মেয়েরা সব দিকেই আজ এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য কমরেড নুর আহমেদ বকুল দাওয়াতে এসেছিলেন। তিনিও অভিভূত। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হলো।
এসএস
মন্তব্য করুন