টাকা লেনদেনের সময় ভূমি কর্মকর্তা হাতেনাতে আটক
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আবদুর রহমানকে টাকা লেনদেনের সময় হাতেনাতে আটক করেছে দুদকের একটি টিম।
গতকাল সোমবার বিকেলে প্রায় দুই লাখ ১০ হাজার টাকাসহ তাকে হাতেনাতে আটক করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপপরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম।
দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজউদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, স্থানীয় জনৈক ভূমিহীন ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি দুদকের কাছে অভিযোগ করেন, মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর মৌজায় বাবা-মায়ের নামে ভূমিহীন হিসেবে পাওয়া বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমির নামজারি প্রতিবেদনের জন্য আব্দুর রহমান তার কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। প্রতিবন্ধী এই যুবকের কোনও অনুরোধেই মন গলেনি আব্দুর রহমানের। ঘুষের টাকা না দিলে প্রতিবেদন দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। বিষয়টি ওই প্রতিবন্ধী যুবক লিখিতভাবে দুদককে অবহিত করলে অভিযোগসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
দুদক উপ-সহকারী পরিচালক রিয়াজউদ্দীন আরও জানান, ঘুষ গ্রহণের নির্ধারিত সময়ের অনেক আগ থেকেই দুদক টিমের সদস্যরা মহেশখালী উপজেলা ভূমি অফিসের চারদিকে অপেক্ষা করতে থাকে। মহেশখালী উপজেলা ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আব্দুর রহমান সোমবার বেলা চারটায় নিজ দপ্তরে বসে ঘুষের ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করছিলেন, ঠিক তখনই দুদক টিমের সদস্যরা তাকে ঘুষের টাকাসহ হাতে-নাতে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় তার ব্যবহৃত ব্যাগ, ড্রয়ার তল্লাশি করে আরও নগদ প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার টাকা উদ্ধার করে দুদকের টিম। তিনি এসব টাকারও কোনও বৈধ উৎস জানাতে পারেননি। এসব টাকাও ঘুষের বলে সাক্ষ্য পাওয়া গেছে। আটক ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে তাকে মহেশখালী থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছে।
---------------------------------------------------------------
আরো পড়ুন: গরিবের চাল আত্মসাতের অভিযোগে চেয়ারম্যান আটক
---------------------------------------------------------------
স্থানীয়রা জানান, আটক ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আবদুর রহমান সার্ভেয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মহেশখালী ভূমি অফিসে কর্মরত রয়েছেন। সেখানে খতিয়ান সৃজন, নামজারি খতিয়ান সৃজন, ভূমি জরিপসহ বিভিন্ন কাজে গ্রাহকদের জিম্মি করে মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছেন। কেউ তার দাবিকৃত মোটা টাকা ঘুষ না দিলে কাজতো হয়ই না উল্টো বিরোধীপক্ষ থেকে সুবিধা নিয়ে ভুক্তভোগীকে বেকায়দায় ফেলে দেন এই সার্ভেয়ার। বিশেষ করে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলনে নানা অজুহাতের জমির মালিকদের কাছ থেকে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এই নিয়ে বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিক্ষোভও প্রদর্শন করেছে ভুক্তভোগীরা।
এই ভারপ্রাপ্ত কানুনগোর নেতৃত্বে তিনজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেট করে অধিগ্রহণের জমি পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। অবশেষে সেই দুর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত কানুনগো আবদুর রহমান দুদকের অভিযানে হাতেনাতে ঘুষের টাকাসহ আটক হওয়ায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে।
জেবি/পি
মন্তব্য করুন