খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের ভুখা মিছিল
মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ ননবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ১১ দফা দাবিতে ছয় দিনের কর্মসূচি আজ সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে।
প্রথম দিনে অনাহারী শ্রমিকদের ভুখা মিছিলে ভারী হয়ে ওঠে খুলনা শিল্পাঞ্চলের আকাশ-বাতাস।
সকাল সাড়ে নয়টায় খুলনার নয়টি পাটকলের মিলগেটে জড়ো হন শ্রমিকরা। সেখানে সভা শেষে শুরু হয় ভুখা মিছিল।
মিছিলটি খালিশপুর বিআইডিসি সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন রাস্তা হয়ে স্ব স্ব মিল গেটে এসে শেষ হয়।
এ সময় বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সরদার আ. হামিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক সাহানা শারমিন, হুমায়ন কবির খান, মুরাদ হোসেন, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, বেল্লাল মল্লিক, আ. মান্নান, কাউওসার আলী মৃধা ও মো. হানিফ। অবিলন্বে তারা ১১দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে শ্রমিকদের বকেয়া প্রায় ৪৫ কোটি ও কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া প্রায় ১০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপরদিকে নয় পাটকলে প্রায় ২৭০ কোটি টাকার উৎপাদিত পণ্য মজুদ রয়েছে।
খুলনার নয়টি পাটকলে শ্রমিকদের ১১ সপ্তাহের মজুরি বাবদ ৪৪ কোটি ২২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ নয় কোটি ৮৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানান শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও শ্রম দপ্তরের সচিব এ অর্থ ছাড় করাতে গেল কয়েক দিন ধরে কাজ করছেন। খুব দ্রুত এ অর্থ ছাড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থ ছাড় হলে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন অবিলন্বে দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
অপর দিকে বিজেএমসি খুলনার সমন্বয়কারী মো. বনিজ উদ্দিন মিয়া জানান, খুলনার নয়টি পাটকলে প্রায় ২৭০ কোটি টাকার পাটজাত উৎপাদিত পণ্য অবিক্রিত রয়েছে। প্লাটিনাম জুটমিলের সিবিএর সভাপতি শাহানা শারমিন জানান, শ্রমিকদের ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়েছে। কাজ করে নিয়মিত মজুরি পাচ্ছে না শ্রমিকরা। যে কারণে শ্রমিক পরিবারে চরম আর্থিক সমস্যা চলছে। তাছাড়া মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন নিয়ে নানা টালবাহানা করেছে কর্তৃপক্ষ। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ইতিমধ্যে কয়েকবার চুক্তি করেরও তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফলে বাধ্য হয়েই পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে ১১ দফা দাবিতে ছয় দিনের আন্দোলন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
সারাদেশের রাষ্ট্রীয় পাটকলসহ খুলনার নয়টি পাটকলে ভুখা মিছিল করেছে।
বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সরদার আ. হামিদ জানান, খুলনার নয়টি পাটকলের শ্রমিকদের ভুখা মিছিলসহ আন্দোলন স্থগিত রাখার জন্য খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান সিবিএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে তিনটায় শ্রম অধিদপ্তরের সভা কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেও কোনও সুরাহ হয়নি। ফলে শ্রমিক নেতারা তাদের ডাকা পূর্ব নির্ধারিত ছয় দিনের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন। যার কারণে আজ সকাল ১০টায় শ্রমিকরা হাতে থালা নিয়ে ভুখা মিছিল বের করবেন তারা। শ্রম অধিদপ্তরের ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পরিচালক মিজানুর রহমান।
তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, শ্রমিকদের মজুরি কমিশন ও বকেয়া মজুরি দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আলেচানা হয়েছে।
খুলনার সাবেক বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব। তিনি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে শ্রমিকদের বিষয়টি দেখছেন।
খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর থেকে শ্রম মন্ত্রণালয়ে খুলনার নয়টি পাটকলের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির হিসাবসহ সার্বিক পরিস্থিতির রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।
সভায় শ্রমিক নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সরদার আ. হামিদ, সাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির খান, মো. আলাউদ্দিন, মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন আজাদী, দ্বীন ইসলাম, মুরাদ হোসেন, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, বেল্লাল মল্লিক, আ. মান্নান, কাউওসার আলী মৃধা, সাইফুল ইসলাম লিটু, মো. হানিফ, রণজিত কুমার দেব, গোলাম আজম মিঠু, বাদশা মিয়া, মো. জাফর হোসেন, সিদ্দিকুর রহমান, ইব্রাহিম মোল্যা ও ফরিদ শেখ উপস্থিত ছিলেন।
জেবি
মন্তব্য করুন