করোনা মোকাবেলায় একজন ইউএনও নাহিদা বারিক
করোনার হটস্পট খ্যাত নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা। এ মহামারি করোনায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত না হয়ে দিনরাত জনগণের সেবায় ব্যস্ত সময় পার করছেন করোনার সম্মুখ যোদ্ধা ইউএনও নাহিদা বারিক।
সরকারকর্তৃক লকডাউন ঘোষণা দেয়ার পর থেকে জনগণের নিরাপত্তা ও করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষার জন্য দিন-রাত উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে চলছেন প্রতিনিয়ত এ নারী কর্মকর্তা। কারণ একটাই করোনাভাইরাসের মরণ থাবা থেকে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে হবে। সাহস নিয়ে মানুষের পাশে থেকে লড়াই করে যাচ্ছেন করোনা যুদ্ধে। যেখানেই অসহায় মানুষের সমস্যা সেখানেই তিনি হাজির, হোক দিন কিংবা রাত।
গেল ২৫ মে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিন ঈদ উদযাপনে সবাই যখন পরিবার নিয়ে ব্যস্ত তখন মায়ের মমতায় এতিম শিশুদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটিয়ে ঈদ উদযাপন করলেন এ মানবিক ইউএনও নাহিদা বারিক। ঈদের দিন বিকেলে ফতুল্লার মুসলিমনগর বায়তুল আমান সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রে গিয়ে অনেক আনন্দ করলেন শিশুদের সঙ্গে। এ সময় তাকে কাছে পেয়ে আনন্দে মেতে উঠে কোমলমতি এতিম শিশুরা। শিশুদের খুশির জন্য সঙ্গে নিয়ে গেলেন কেক, বিস্কুট, চকলেট ও কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার। এতিম শিশুরা এমন দিনে তাকে কাছে পেয়ে আবেগে মা বলে সম্বোধন করলে তেমন করেই মায়ের মমতায় ভালোবাসা বিনিময় করেন মমতাময়ী এ নারী ইউএনও। এ সময় শিশুদের সঙ্গে বিভিন্ন কৌতূক, গান ও অভিনয় করে ঈদ উদযাপন করেন। শিশুদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার আগে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন এবং নিয়মিত হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও বাহিরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন।
অপর দিকে ঈদের দিন সকালে নিজ হাতে রান্না করে মমতার আদলে হাজির হন উপজেলার আরেক করোনা যোদ্ধা এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের নয় নম্বরওয়ার্ডের কামরুল মেম্বারের বাড়িতে। কামরুল মেম্বার এর পরিবার গত কিছুদিন ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছে। এ লোকটিও ইউএনও-এর সহায়তায় তার এলাকায় করোনায় আক্রান্তদেরকে গেল দুই মাস ধরে বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন। কিন্তু গত কিছুদিন আগে কামরুল মেম্বারের পরিবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। তাই ঈদের দিন ঈদের আনন্দ তার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতেও ভুলে যাননি ইউএনও নাহিদা বারিক।
গেল ২৪ মে মসজিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত টাকা ঈদের আগের দিনেই মসজিদের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন তিনি। এছাড়াও ঠিক ওই দিন অর্ধশত প্রতিবন্ধীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার নগদ ১০০০ টাকা করে ও ৩৬০টি পরিবারকে ঈদসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেন।
অপরদিকে লকডাউনের সময় দরিদ্র অসহায় গরিবদের পাশেও বারবার সরকারি ত্রাণ এবং কখনও কখনও নিজ অর্থ থেকেও খাবার নিয়ে দরিদ্র মানুষের পাশে ছিলেন সার্বক্ষণিক। গত ১৮ মে সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার মাঠ প্রাঙ্গণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ১০০ মায়ের হাতেও শিশু খাদ্য তুলে দেন। এটা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার।
শুধু এটা নয় গত ২৬মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি নিত্যপ্রয়োজনীয় দাম নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ভেজাল মুক্ত করা, জনগণকে সচেতনতা বৃদ্ধি করাসহ প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যাচ্ছেন। হটস্পট নারায়ণগঞ্জে করোনা প্রাদুর্ভাব মারাত্মক হওয়ার পরও এখানকার জনগণ মার্কেটে মার্কেটে কেনাকাটা করতে হুমড়ি হয়ে ভিড় করে। তখন এ মানবিক ইউএনও এক মুহূর্ত অফিসে বসে না থেকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ঘুরে হ্যান্ড মাইকে মানুষকে সচেতন করার জন্য ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক জানান, আমার উপজেলা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এ এলাকায় যে পরিমাণ জনগণের বসবাস তা অন্য কোনও জেলার সমতুল্য জনগণের সমান। তাদের মধ্যে অনেকে অসহায়, দরিদ্র ও দিনমজুর। তাদেরকে সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ নিয়ে তাদের পাশে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকতে সচেষ্ট হব।
এছাড়া জনগণকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার্থে সচেতন করার জন্য বারবার তাদেরকে বুঝানো হয়েছে এবং সচেতনতার সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন কৌশলে বলা হয়েছে।
অপরদিকে কিছু এলাকায় করোনা আক্রান্ত পরিবার বা ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের এবং এলাকার লোকজনের আচরণ হিংস্র ছিল। যখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে তখনই ওই এলাকায় ছুটে গিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আক্রান্ত পরিবারের পাশে থাকতে চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
জেবি
মন্তব্য করুন