স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার শিকার কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। জেলার অন্যান্য উপজেলায় ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চললেও মনোহরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের পানিবন্দি মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট।
তাদের অভিযোগ, এই উপজেলার অবস্থান একটু ভেতরে হওয়ায় এবং বন্যার ভয়াবহতার প্রচার না থাকায় কেউ তাদের উদ্ধার করতে আসছে না, তারা ত্রাণও পাচ্ছেন না।
সোমবার (২৬ আগস্ট) এই উপজেলার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে কয়েকটি স্থানে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। সেখানকার বানভাসি প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মুসফিকুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত জেলার ১৪টি উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা ৮ লাখ ২৪ হাজার ৩৯২ জন। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ৬১ হাজার ৪৪৫ জন।
মনোহরগঞ্জ উপজেলার আমতলী গ্রামের বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী আবদুল কাহহার মিয়াজী বলেন, বুড়িচংসহ অন্যান্য উপজেলার আগে মনোহরগঞ্জ উপজেলা পুরোপুরি প্লাবিত হয়। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় আসেনি। আমাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে সরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। খাবারের কষ্টে মানুষ হাহাকার করছে। সেই সঙ্গে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট।
মনোহরগঞ্জ উপজেলার পানিবন্দি মানুষদের অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ত্রাণ ও উদ্ধারকর্মীরা বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম, দাউদকান্দি, লাকসাম এসব এলাকায় বেশি প্রবেশ করছেন। স্থানীয় সামান্য কিছু উদ্যোগ ছাড়া ত্রাণ পাচ্ছেন না মনোহরগঞ্জ উপজেলার লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ।
তাদের অভিযোগ, দোকানপাটেও তেমন খাদ্যসামগ্রী নেই, থাকলেও দাম অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে। ১৪ থেকে ১৫শ’ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকায়। সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
এসব বিষয়ে তদারকিসহ এ উপজেলাকে দ্রুত দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার দাবি জানান তারা।
উপজেলার বাসিন্দা লিটন রনি বলেন, আমতলী গ্রাম গত কয়েক দিন ধরে পানির নিচে। এলাকাটা অনেক ভেতরে হওয়ায় কেউই সেখানে যাচ্ছেন না। যার কারণে সেখানে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থা পুরো উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে। সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার কম থাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার বানভাসি মানুষজন।
আবুল কালাম আজাদ নামে মনোহরগঞ্জ উপজেলার এক মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, এ উপজেলা আগে থেকেই ‘জলাঞ্চল’ নামে পরিচিত। এ উপজেলা নিম্নাঞ্চল হওয়ায় পানিতে মানুষ খুবই কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু এখানে তেমন কোনো সহায়তা এখনো আসেনি। মানুষ কষ্টে আছে।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা ত্রাণ সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, সব জায়গায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। এই উপজেলার অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে যেগুলোতে নৌকা ছাড়া যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। আমাদের কাছে নৌকার প্রচুর সংকট রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি, স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে তাদের কাছে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার। আমরা চেষ্টা করছি, সব মানুষকে সহায়তা দেওয়ার।
কুমিল্লায় আকস্মিক বন্যার আঘাতে ডাকাতিয়া নদীর পানি বেড়ে সর্বপ্রথম প্লাবিত হয় চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলা। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বুড়িচং আশপাশের কয়েকটি উপজেলা।
জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাই বানের পানিতে নিমজ্জিত। পানিবন্দি অন্তত ১৫ লাখ মানুষ। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।