ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হচ্ছে না ন্যাশনাল ব্যাংক: নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান
খেলাপি ঋণের বোঝা ও সুশাসনের অভাবে ডুবতে বসা ন্যাশনাল ব্যাংক ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের নবনিযুক্ত পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যাংকের আর্থিক ভিত শক্তিশালী করার শর্তে আপাতত একীভূত না হওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার (৬ মে) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান খলিলুর রহমান।
তিনি জানান, ন্যাশনাল ব্যাংককে টেনে তুলতে উদ্যোক্তারা আরও ১ হাজার কোটি টাকা মূলধন বিনিয়োগ করবেন। পাশাপাশি নতুন করে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা আমানত সংগ্রহের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
চেয়ারম্যান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকে আর লুটপাট হবে না। সবার সহযোগিতায় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্ধার করা হবে বলেও জানান তিনি।
খলিলুর রহমান বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের মূলধনে শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করা হবে। এছাড়া পরবর্তীতে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন সংগ্রহ ক্যাম্পেইনের ও প্রকল্পের মাধম্যে আমানত সরবরাহ করা হবে। এতে করে ন্যাশনাল ব্যাংকের চলমান তারল্য সংকট নিরসন হবে আশা করছি। এছাড়া মন্দ ঋণ পুনরুদ্ধারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। মন্দ ঋণ পুনরুদ্ধারে কাউকেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছি, অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে আমরা ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত করতে রাজি নই। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সময় দিয়েছে। আমরা যাতে তারল্য সংকট নিরসন করতে পারি, সেই চেষ্টাই করব।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরও বলেন, নতুন পরিচালনা পর্ষদ ন্যাশনাল ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করতে ও গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে নিরলসভাবে কাজ করবে। বিভিন্ন সূচকে ব্যাংকের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতেও কাজ করবে বর্তমান পর্ষদ।
এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের অনেক প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই সংবাদ সম্মেলন শেষ করা হয়।
ন্যাশনাল ব্যাংকের বর্তমানে ২২১টি শাখা, ৬৫টি উপশাখা, দেশে ভেতরে ২টি ও দেশের বাইরে ৪টি সাবসিডিয়ারি, জিসিসি অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রে ২টি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা চুক্তিসহ দেশের নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) এবং রেটিং প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংকটি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে ব্যাংকটিতে ২০ লাখের অধিক আমানতকারী ও প্রায় ১ লাখ ঋণগ্রহীতা আছে। বিদেশ থেকে বৈধ পথে ও নিরাপদে টাকা প্রেরণের লক্ষ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকই সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। এছাড়া কৃষি খাতের উন্নয়নেও ন্যাশনাল ব্যাংকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
১৯৮৩ সালে প্রথম দেশীয় মালিকানায় বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল ব্যাংক। ঋণ বিতরণসহ নানা অনিয়ম, বিধি-বিধান ভেঙে ঋণ অনুমোদন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করায় গত বছর ২১ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পাঁচ মাসের মধ্যে আবারও ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয় বলে জানানো হয়। আর এই নতুন পর্ষদ গঠনের পরই সোমবার সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন