• ঢাকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১
logo

শুল্ক বাড়ায় ঢাকা ছেড়ে দিল্লি বিমানবন্দরে ঝুঁকছেন বায়াররা

আরটিভি নিউজ

  ৩১ মে ২০২৪, ১৪:৪৩
ছবি সংগৃহীত।

ভারতের কাছ থেকে কম শুল্কে পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব পেয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে বেছে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক পোশাক ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খুচরা ব্যবসায়ী।

বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ক্রেতারা বেনাপোল এবং পেট্রাপোল বন্দর হয়ে দিল্লি যাওয়ার জন্য প্রায় ১,৯০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এক কেজি গার্মেন্টস আইটেম ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে পরিবহন করতে খরচ হয় ৩ ডলার। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠালে চার্জ ১.২ ডলার।

জানা গেছে, উচ্চ মাত্রার শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও সার্ভিস চার্জ মূলত গ্রাহকদের ঢাকা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ৭২ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়। সময়মতো ফি পরিশোধ না করলে ৬০ শতাংশ জরিমানা আদায় করা হয়।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টন কার্গো জাহাজ ভর্তি পণ্য পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার টন গার্মেন্টস আইটেম এবং ৩০ হাজার টন শাকসবজি, ফল ও অন্যান্য সামগ্রী।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বিমানবন্দর দিয়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার টন কার্গো বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার টন গার্মেন্টস পণ্য এবং ২৪ হাজার টন ফলমূল, শাকসবজি এবং সংশ্লিষ্ট খাদ্যসামগ্রী রয়েছে।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, উচ্চ শুল্কের কারণে গত বছর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আট হাজার টনেরও বেশি কার্গো দিল্লিতে সরিয়ে নিয়েছেন বায়াররা।

"এই বছর ভলিউম বেশি কারণ ক্রেতারা ক্রমবর্ধমান দিল্লি বিমানবন্দরকে তাদের ব্যবসায়ের জন্য আরও প্রতিযোগিতামূলক বলে মনে করছেন," তিনি আরও বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ) থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০ টন কার্গো দিল্লিতে নেওয়া হয়।

অতিরিক্ত চার্জের কারণে স্থানীয় এয়ারলাইন্স, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার, কুরিয়ার কোম্পানি, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারসহ সংশ্লিষ্ট অনেক খাত ব্যবসা হারাচ্ছে।

শাহ আলম বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ব্যবসা করার চেষ্টা করা অন্তত আটটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স উচ্চ শুল্কের কারণে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারেনি।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, ঢাকা বিমানবন্দরে ফ্রেইট চার্জ অত্যন্ত বেশি।

তিনি বলেন, দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহারের ফলে ঢাকা থেকে ভারতের রাজধানীতে পণ্য পরিবহনের পরও রফতানিকারকরা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ মার্কিন সেন্ট সাশ্রয় করতে পারবেন।

এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য পরিবহনের প্রধান সমুদ্রপথ লোহিত সাগরের সুয়েজ খালের ঐতিহ্যবাহী রুট ব্যবহারকারী কার্গোবাহী বাণিজ্যিক জাহাজগুলো গত বছরের অক্টোবর থেকে হুথিদের হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে বিমানের চালান বেড়েছে।

বাংলাদেশ থেকে কার্গোর ক্রমবর্ধমান আগমন দিল্লি বিমানবন্দরে চাপ সৃষ্টি করেছে। ফলে সময়মতো ভারতে উৎপাদিত পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিবেশী দেশটির রফতানিকারকরা।

তারা এরই মধ্যে দিল্লির কাছে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত চার্জ আরোপের দাবি জানিয়েছে।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে কোনও বিমানবন্দর উপযুক্ত মনে করলে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করতে পারে।

এদিকে, ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ। বর্তমানে ৪০০ টন রফতানিযোগ্য পণ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা থাকলেও সাধারণ সময়ে দৈনিক শিপমেন্ট গড়ে ৮০০ টন এবং ব্যস্ত সময়ে ১২০০ টনে উন্নীত হয়।

ব্যবহারকারীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুদ্র কার্গো গ্রাম থেকে পণ্য চুরি, অযত্নে ফেলে রাখা পণ্য এবং আইটেমগুলির মানের অবনতি সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন।

কয়েক বছর আগেও কাতার ও ইতিহাদ এইচএসআইএ থেকে ডেডিকেটেড ফ্লাইটে কার্গো পরিবহন করত। এখন তারা হয় ফ্লাইট স্থগিত করেছে অথবা তাদের সক্ষমতা কমিয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে পরিবহন করা পণ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ যাত্রীবাহী বিমানে পরিবাহিত হয়, বাকি কার্গো বিমানে পরিবাহিত হয়।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
এবার ডিম ও চিনি আমদানিতে বড় শুল্ক ছাড়
কমছে ডিম ও তেলের আমদানি শুল্ক
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
চিনি আমদানিতে শুল্ক-কর কমাল এনবিআর