মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের জন্য বড় ব্যর্থতা: সিপিডি
মূল্যস্ফীতিতে আমরা ৯ ও ১০ শতাংশে অবস্থান করছি। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
রোববার (২ জুন) ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ১৭ ভাগ। একই সময়ে পাইজামের দাম ১৫ ও মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০ ভাগ। অর্থাৎ মুনাফাখোররা বেশি লাভ সেখানে করছে, যে পণ্য গরিব ও মধ্যবিত্তরা ব্যবহার করে এবং বাজারে বেশি বিক্রি হয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি মুসর ডাল ৯৫, আটা ৪০-৫৪, ময়দা ৬০, খোলা সয়াবিন ৮৪ ভাগ, বোতলজাত সয়াবিন ৫৬ ও পামওয়েলে ১০৬ ভাগ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে গরুর মাংসের দামও বেশি। পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি ৬০ ভাগ, চিনির দাম ১৫২ ভাগ, গুড়া দুধ ৪৬-৮০, পেঁয়াজ ১৬৪, রসুন ৩১০ ও শুকনা মরিচ ১০৫ ভাগ বেড়েছে। যা আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি। এক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছি।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, নিম্ন আয়ের দেশ হয়েও বিলাসী দেশে পরিণত হয়েছি। আমরা আয় করি কম। কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে ব্যয় করতে হয় সবচেয়ে বেশি। যার ভুক্তভোগী গরিব ও সাধারণ মানুষ। আমরা কোন অর্থনীতির দেশে রয়েছি? সরকারের প্রচেষ্টা রয়েছে। অনেক সময় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক ট্যারিফ কমিয়ে দেয়, তার সুফল তোলেন এক ধরনের ব্যবসায়ীরা।
এ সময় এই গবেষণা পরিচালক ধনী ও গরিবের বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছেও বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ আয় ২ হাজার ৬৭৫ মার্কিন ডলার ও মাথাপিছু জাতীয় আয় ২৭৮৪ ডলার। মাথাপিছু গড় আয় যতটুকু পেয়েছি, মূলত উচ্চ আয় করেন তাদের কারণে। গরিব মানুষদের কথা বিবেচনা করলে তাদের আয় কমে গেছে। এখানে বৈষম্য বেড়েছে। তাদের উন্নতি হয়নি। বেসরকারি বিনিয়োগ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া একটি বড় কারণ। বিষয়টি সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারের ৭.৫ শতাংশ বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জিত হবে না বলে মনে করছি।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। কিন্তু জানুয়ারিতে তা সংশোধন করে সাড়ে ৬ শতাংশ। আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তা আরও কম প্রাক্কলন করেছে। বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে রয়েছে সরকার। জিডিপির বৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের ধারাটি বাড়ছে না। বরং কমছে। জিডিপিতে জাতীয় আয় বাড়লেও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখতে পারছে না বা কম সহায়তা করছে। যতটুকু কর্মসংস্থান হচ্ছে তা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে বাড়ছে। যা আসলে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ওই কর্মসংস্থানে মজুরি ও নিরাপত্তার হুমকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আদায়ের ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। যা গতবছরের জুলাই-জানুয়ারি হিসেবে ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত বছর নেতিবাচক ছিল। সেখান থেকে ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছি, এটা ভালো দিক। যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হয়, তাহলে ৬৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। যা অর্জন করা অসম্ভব।
মন্তব্য করুন