• ঢাকা রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় শ্রীলঙ্কা ও ভারতের চেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ: সিপিডি

আরটিভি নিউজ

  ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৬
ফাইল ছবি

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার মানদণ্ডে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া অর্থনীতির তুলনায় ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায়ও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ।

রোববার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সংস্কার : অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা’ শীর্ষক একটি সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন। প্রবন্ধ তৈরিতে দেশের সেবা, কৃষি, ম্যানুফ্যাকচারিং ও নন-ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের এক দশকের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন (প্রধান উপদেষ্টার) আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক লুৎফে সিদ্দিকী। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলী শামীম এহসান, ডিসিসিআইয়ের সভাপতি আশরাফ আহমেদ ও বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল প্রমুখ।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে ডুয়িং ব্যবসা করার জন্য ১৭টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, নীতির অস্থিতিশীলতা, দুর্বল শ্রমশক্তি, উচ্চকরহার, উদ্ভাবনের জন্য অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঝুঁকিপূর্ণ জনস্বাস্থ্য এবং শ্রমনীতির সীমাবদ্ধতা।

তবে দুর্নীতিকে মূল সমস্যা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মনে করি দুর্নীতি সর্বদাই প্রধান সমস্যা। যদিও অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর সমস্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। বছরের পর বছর অদক্ষ আমলাতন্ত্র একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে। মুদ্রাস্ফীতি সবসময় বড় চিন্তার কারণ। অন্যদিকে নীতির অস্থিতিশীলতা একটি মাঝারি স্তরের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।

সংলাপে আরও বলা হয়, সার্বিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, দুর্নীতি, প্রবৃদ্ধির হিসাবে গরমিলের কারণে অর্থনীতিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনীতির বড় অনিশ্চয়তা এখন উৎপাদন খাতে। নানা রকম উদ্যোগের পরও সবচেয়ে বড় রপ্তানিশিল্প পোশাক খাতে উৎপাদনব্যবস্থা এখনও ভঙ্গুর রয়ে গেছে।

বিভিন্ন খাতের সমস্যা ও সংস্থার প্রসঙ্গে বলা হয়, এনবিআর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, যার মধ্যে রয়েছে পরিচালনা, সাংগঠনিক এবং ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। এসব সীমাবদ্ধতার ফলে ট্যাক্স জালিয়াতি কমানোর চেষ্টা চলছে। বর্তমান ভ্যাট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং মূল ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াগুলো প্রধানত ম্যানুয়াল। এখানে স্বচ্ছতার জন্য আধুনিকীকরণের প্রয়োজন।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে। এ ছাড়া শিক্ষায় মাথাপিছু ব্যয় কম। এখানে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়গুলো প্রাথমিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা ও সকল শিক্ষার্থীর জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেতে অপেক্ষা আর মাত্র ২ বছর। তবে শেখ হাসিনা সরকার বৈশ্বিক ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সূচকে বাংলাদেশকে যে নাজুক অবস্থায় রেখে গেছে তাতে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কর্মক্ষমতা পর্যালোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। পাশাপাশি আর্থিক খাতেও ন্যায়পাল নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। এ ছাড়া বাংলাদেশকে টেনে তুলতে বর্তমানে ‘রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন’ গঠন করতে হবে বলেও মত দেওয়া হয়।

দুর্নীতি ও ঘুষ চক্র থেকে মুক্তি পেতে এনবিআরের প্রতিটি বিভাগের জন্য বিশেষ পলিসি নিয়ে কাজ করার তাগিদ দেন ব্যবসায়ীরা। আলোচনায় উঠে আসে মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ার শঙ্কাও।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের প্রধান সমস্যা দুর্নীতি। বাণিজ্য বাড়াতে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

আর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, দুর্নীতি ও ঘুষ চক্র থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে হবে। ডিজিটাল করাসহ এনবিআরের শুল্ক, ভ্যাটসহ সব বিভাগের জন্য পৃথক পৃথক পলিসি নিতে পারলে দুর্নীতি অর্ধেক কমে আসবে।

এ ছাড়া ব্যাংকিং খাত সংস্কারে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন বক্তারা। আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে সব সমস্যার মূল হিসেবে দাবি করে রাজনীতির সংস্কারের তাগিদ দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কার চাওয়া ভুল।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের লক্ষ্য থেকে সরকার সরে আসছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা ৫ অথবা ১০টি হবে।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, প্রয়োজনে বিজনেস রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন গঠন করা হবে। সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত স্বার্থের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা সরকারের কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছি। আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

আরটিভি/কেএইচ-টি

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • অর্থনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ব্যবসার সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি: সিপিডি
বাংলাদেশের দুটি কিডনিই খেয়ে ফেলেছে বিগত সরকার: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
বিশ্বে আরবি প্রতিযোগিতায় দেশের শিশুদের অর্জন গৌরবের: ধর্ম উপদেষ্টা 
আন্তবিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় দেশসেরা শাবিপ্রবি