বিদেশে চিকিৎসা নিতে বছরে ব্যয় ৪৮ হাজার কোটি টাকা: ডিসিসিআই

আরটিভি নিউজ

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ , ১১:৪৫ পিএম


বিদেশে চিকিৎসা নিতে বছরে ব্যয় ৪৮ হাজার কোটি টাকা: ডিসিসিআই
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎস্যাসেবা নিতে ২০১২ সালে ব্যয় হয়েছে চার বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা)। এখন তা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই এর আয়োজনে ‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব কথা জানান তিনি। 

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় হয় ৪০১ মার্কিন ডলার বলে উল্লেখ করে মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু ব্যয় ১১০ মার্কিন ডলার। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে এবং ২০১২ সালে বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ায় বাংলাদেশিদের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিজ্ঞাপন

উন্নত স্বাস্থ্য সেবার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে অবকাঠামোর স্বল্পতা, দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানের অভাব, সরকারি হাসপাতালে সেবা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা, উন্নত সেবার জন্য ইন্স্যুরেন্স কভারেজের অনুপস্থিতি প্রভৃতি অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ডিসিসিআইয়ের এই সহ-সভাপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ হাজার ৪৬১ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যার মধ্যে এক হাজার ৮১০টি ঢাকা বিভাগে অবস্থিত, পাশাপাশি ৩৬টি স্পেশালাইজড হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি ঢাকাতে অবস্থিত হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন উন্নত স্বাস্থ্যসেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত ঢাকার ওপর চাপ বাড়ছে।

ক্রমবর্ধমান হারে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সম্প্রতি বিদেশে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে যাচ্ছে উল্লেখ করে আশরফ আহমেদ বলেন, যদিও অনেক চিকিৎসা স্থানীয়ভাবেও পাওয়া যায়। রোবোটিক সার্জারির মতো স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হলেও তুলনামূলকভাবে কম আত্মবিশ্বাস এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্টির অভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রাহক সন্তুষ্টি কেবল চিকিৎসা থেকে আসে না। বরং পুরো হাসপাতালের ইকো-সিস্টেম যথা: নার্স, প্রশাসন, টেকনোলজিস্ট সবাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং-এর জন্য, বিদেশি ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস দেশে আসার প্রক্রিয়া আরো সহজতর করতে হবে।

দেশে পরিচালিত ল্যবারেটরি সমূহের মান উন্নয়নের উপর তিনি জোরারোপ করে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি’র সভাপতি অধ্যাপক এ কে খান আজাদ বলেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা স্বল্পতা, চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থার স্বল্পতা, সর্বোপরি কমফোর্টের অভাবে অসংখ্য লোক দেশের বাইরে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে, এগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের মাধ্যমে রোগীদের বিদেশমুখিতা হ্রাস করা সম্ভব। 

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল শক্তিশালীকরণের উপর তিনি জোরারোপ করে অধ্যাপক এ কে খান আজাদ বলেন, যেহেতু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞান একটি সর্বদা পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া, এমতাবস্থায় বর্তমানে আমরা যা আমরা প্রত্যক্ষ করছি আগামী ২৫ বছর পর এ ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, তাই সেরা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি গ্রহণ করার জন্য আমাদের একটি সঠিক পাঠ্যক্রম থাকা জরুরি। দেশে পরিচালিত ল্যাবরেটরিগুলোর মান উন্নয়ন, বাজেট সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে।

উন্নত সেবা প্রদানে রোগীদের প্রতি ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিকতা পরিবর্তন একান্ত অপরিহার্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-এর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন বলেন, দেশীয় ডাক্তার ও নার্সদের দক্ষতা উন্নয়নের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। তবে বিদ্যমান সমাধানে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি কার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারি, যার মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমবে পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ের মাধ্যমে রিজার্ভ বৃদ্ধি সম্ভব।   

বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ পর্যায়ে আরও বেশি মানের হাসপাতাল স্থাপন করা উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করে বিএসএমএমইউ-এর প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, আস্থা এই সেক্টরের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকে স্বাস্থ্যসেবা পর্যটনে রূপান্তর করতে হবে। 

চিকিৎসা যন্ত্র উৎপাদনে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স-এর সেক্রেটারি ডা. আবুল বাসার মো. জামাল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ এবং আমরা বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করি। এমতাবস্থায় এ খাতে আরও ভালো করতে হলে দক্ষ জনশক্তি ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। বাংলাদেশে এক লাখ ৩৪ হাজার চিকিৎসক রয়েছে। এবং এর মধ্যে মাত্র ৩৩ হাজার সরকারি চিকিৎসক। তবে এটা সন্তোষজনক যে এখানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজারের বেশি বিদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

বিশ্বমানের ডাক্তারদের সাথে জরুরি যত্নের প্ল্যাটফর্ম বাড়াতে এবং আস্থা তৈরির সুবিধার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিন-এর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মীর সাদউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিডের সময় কেউ চিকিৎসা নিতে বিদেশে যায়নি। মহামারির সেই সময়ে আমরা পরিস্থিতি সামলাতে পেরেছি, এটা স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমাদের সক্ষমতা প্রতিফলিত করে।  

আরটিভি/কেএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission