ঢাকাশুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

২১ দিনে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে প্রবাসী আয়

আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১০:১৩ এএম


loading/img

চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে প্রবাসী আয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এত কম সময়ে এত বেশি প্রবাসী আয় এর আগে আসেনি। 

বিজ্ঞাপন

গত আগস্টে নতুন সরকার গঠনের পর প্রতি মাসেই ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। তবে এবার তিন সপ্তাহেই প্রবাসী আয় এলো ২০০ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রবাসী আয়ের এই জোরালো প্রবাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলারে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬ কোটি ডলারে। দীর্ঘদিন পর বিপিএম হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ দুই হাজার কোটি ডলার ছাড়াল।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৯ কোটি ৫৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৮০ ডলার দেশে এসেছে। গত তিন সপ্তাহে প্রতিদিন যে প্রবাসী আয় এসেছে, রেমিট্যান্সের এমন প্রবাহ সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। আগের মাস নভেম্বরে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল গড়ে সাত কোটি ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ডলার। আর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল গড়ে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৩৩৩ ডলার।

ডিসেম্বরে যে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, তার ৬১ কোটি ৩১ লাখ ডলার এসেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। সব বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৩১ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। একক ব্যাংক হিসাবে ২১ দিনে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে, ২৭ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। এরপর সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এনেছে অগ্রণী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক।

প্রবাসী আয় দেশে আসার এই ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে রেমিট্যান্স ২৫০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসের মধ্যে পুরোনো আমদানি দায় পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলারের জন্য বেশি দাম দিচ্ছে। ফলে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে আগের চেয়ে বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রবাসী রেমিট্যান্স হাউসগুলো সূত্রে জানা গেছে, এখন বেশির ভাগ ব্যাংক ১২৪ টাকার বেশি দরে প্রবাসী আয়ের ডলার কিনছে। সম্প্রতি সোনালী এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ডলার কিনেছে ১২৪ টাকা দরে, রিয়া মানি এক্সচেঞ্জ কিনেছে ১২৪ টাকা ১৮ পয়সা দরে, ট্যাপট্যাপ সেন্ড কিনেছে ১২৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ডলার কিনেছে ১২৫ টাকা ৬০ পয়সা দরে। ফলে দেশের ব্যাংকগুলোকে ডলার কিনতে হচ্ছে এর চেয়ে বেশি দামে। এ কারণে ব্যবসায়ীদেরও বেশি দামে কেনা ডলারের মাধ্যমে আমদানি দায় শোধ করতে হচ্ছে।

গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ জোরালো হতে শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ২২০ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত বছরের নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। সেই হিসাবে নভেম্বরে প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। এ ছাড়া গত অক্টোবরে দেশে ২৩৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। আর গত সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ডলার এবং আগস্টে ২২২ কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে আসে।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে গত জুনে। একক মাস হিসেবে গত তিন বছরের মধ্যে তা ছিল সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ আয় এসেছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে, যার পরিমাণ ছিল ২৫৯ কোটি ডলার।

প্রবাসী আয় হলো দেশে ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না অথবা কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে ডলারের মজুতও দ্রুত বাড়ে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |