১০ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮৭ হাজার টাকা
সাফল্য আর উন্নয়নের ফানুস উড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ সরকারের টানা দুই মেয়াদে দেশের কোনায় কোনায় উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেছে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুত্তি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন দেশের ভেতর-বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য উন্নতি এদেশের মানুষ এখন আর না খেয়ে মরে না। বরং মাত্র ১০ বছর সময়ে মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে প্রায় এক হাজার ৫০ মার্কিন ডলারের মতো। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৭ হাজার টাকা।
একটি দেশের জনগণের মোট আয়কে জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করে যে আয় পাওয়া যায় তাই মাথাপিছু আয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের মাথাপিছু আয় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭০৩ মাকির্ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
সে হিসেবে গত ১০ বছরের সব ধরনের সামাজিক সূচক উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৪৯.০৭ শতাংশ।
২০০৯ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.০৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে ৭.৮৬ শতাংশ হয়েছে।
মন্ত্রনালয়ের অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, কার্যকর পদক্ষেপ এবং দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রণয়নের ফলে গত দশ বছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, খাদ্য উৎপাদন, রেমিটেন্স, মূদ্রাস্ফীতি, আমদানি ও রফতানি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে।
‘২০০৯ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.০৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে ৭.৮৬ শতাংশ হয়েছে। এ সময় রেমিটেন্স প্রবাহ ৯,৬৮৯.২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪,৯৮১.৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭,৪৭০.৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৩২,৯৪৩.৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।”
আবদুর রউফ তালুকদার আরও বলেন, “সামাজিক গতিশীলতা এবং নারীর ক্ষমতায়নে ও মানব উন্নয়ন সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ২০০৮ সালে দেশে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৬.৮ বছর। ২০১৭ সালে এটি বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর। দারিদ্র্যতার হার ২০০৯ সালের ৩১.৫ শতাংশ থেকে কমে ২০১৮ সালে হয়েছে ২৪.৩ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার ১৭.৬ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ১২.৯ শতাংশ।”
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর গবেষণা পরিচালক খন্দোকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দশ বছরে ইতিবাচক অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশ সাফল্যজনকভাবে এমডিজি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ বিগত দশ বছরে ৬ শতাংশ জিডিপি অর্জনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং সারাদেশে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়। এ সময়ের মধ্যে সরকার উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য দেশে একটি বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তিনি ৮ শতাংশ প্রবৃব্ধি অর্জনের জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাড়াতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।”
ভুলে যাওয়ার নয় উন্নয়নশীল দেশের তকমা:
চলতি ২০১৮ সালের মার্চ মাসে নিম্নমধ্য আয়ের দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল (ডেভলপিং) দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ‘ডেভলপিং কান্ট্রি’ হতে যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয় তা বাংলাদেশ অর্জন করেছে।
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করায় তা উদযাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনাও জানানো হয়।
উন্নয়নকে টেকসই করতে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এই তকমা দিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আযম বিবিসিকে জানিয়েছেন, সরকার মনে করে, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবজনক অর্জন।
কারণ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হবার সবগুলো শর্ত প্রথমবারের মত বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় এই সফলতা এসেছে।
আরও পড়ুন :
এসআর
মন্তব্য করুন