করোনার জন্য বড় সংকটের দিকে যাচ্ছে দেশ: গবেষণা
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে নতুন করে এক দরিদ্রশ্রেণির সৃষ্টি হচ্ছে। এই করোনার প্রভাবে শহরাঞ্চলে কর্মহীন হয়ে পেড়েছে ৮০ শতাংশ মানুষ। গ্রামে এ সংখ্যা ৭৯ শতাংশ। আর নতুন সৃষ্ট দরিদ্রশ্রেণির ৭১ শতাংশ আয় কমে গেছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) করা এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার এক ভিডিও কনফারেন্সে ‘পোভার্টি ইমপ্যাক্ট অব কোভিড–১৯’ শীর্ষক এ গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়।
গবেষণা বিপোর্টে বলা হয়, এখন দেশের পরিস্থিতি যা, তাতে এসব পরিবার মাত্র এক থেকে দুই সপ্তাহ আর চলতে পারবে। এসব মানুষের জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। তাতে লাগবে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
সরকারের প্রথাগত ত্রাণ সহায়তার বাইরে এসে এখন জরুরি ভিত্তিতে এ সহায়তা দিতে হবে। আর জরুরি ভিত্তিতে ওএমএস চালু করতে হবে।
যেসব পরিবারে জরিপ করা হয় তারা জানায়, সংকট শুরু হওয়ার পর ব্যক্তিগত সঞ্চয় বা ধারদেনা করে তারা চলছেন। কিন্তু এখন অর্থ ও খাদ্যসহায়তা না পেলে আর মাত্র ১০ দিন টিকতে পারবে তারা। তাই এ মাসের শেষে এসব পরিবারের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়বে।
মোট ৫ হাজার ৪৭১টি পরিবারের ওপর এ জরিপ চলে। দুই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে মতামত গ্রহণ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার মূল গবেষণাপত্র তুলে ধরেন বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন। তিনি জরিপের উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, ৪ থেকে ১২ এপ্রিল এ জরিপ হয়। যেসব পরিবারের ওপর জরিপ হয়েছে এগুলোর গড় আকার ৪ দশমিক ৮৫। তিনটি দরিদ্রশ্রেণির ওপর জরিপ হয়েছে। তাদের মধ্যে নিম্ন দরিদ্রশ্রেণির মানুষই বেশি, ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ। ১৫ শতাংশ উচ্চ দরিদ্রশ্রেণি, আর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশের মানুষেরা নতুন দরিদ্র। এসব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাধারণ দিনমজুর, তাঁদের সংখ্যা ৪১ শতাংশ। এ ছাড়া আছেন কৃষক, নিয়মিত মজুরি পাওয়া শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ী।পিপিআরসি–বিআজিডির গবেষণায় বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিম্ন আয়ের মানুষের আয় ও কর্মসংস্থানে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
শহুরে দরিদ্র মানুষদের আয় গত ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় ৮২ শতাংশ কমে গেছে। আর গ্রামের দরিদ্র মানুষের আয় কমে গেছে ৭৯ শতাংশ। তিন ধরনের দরিদ্রশ্রেণির আয় গড়ে ৭৬ শতাংশ কমে গেছে।
করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে খাবারের জন্য ব্যয় কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শিকার নতুন দরিদ্ররা। তাদের ৩৬ শতাংশ ব্যয় কমাতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এসব মানুষের পুষ্টি পরিস্থিতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। সেখানে পুষ্টির পরিমাণ কমেছে ২৩ শতাংশ, গ্রামে ১৫ শতাংশ। শহরে মানুষের খাবারের পরিমাণ কমে গেছে ৪৭ ভাগ, গ্রামে ৩২ ভাগ।
এমকে
মন্তব্য করুন