পুনমকে আর রিকশা চালাতে হবে না
বগুড়ার ছেলে এহসানুর রশীদ পুনম। মিউজিক করার পাশাপাশি চাকরিও করতেন। সবকিছু মিলে বেশ ভালোই চলছিল তার দিনকাল। তবে মাঝে জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে ঢাকায় রিকশা চালানো শুরু করেন তিনি। এই পুনমকে আবিষ্কারের কাজটি প্রথমে করেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজজি’র ভিডিও টিমের সদস্য রুম্মান আবদুল্লাহ।
রুম্মান আবদুল্লাহ কিছু দিন আগে নিজের বাসা থেকে বের হয়ে স্বাভাবিকভাবেই রিকশা খুঁজছিলেন। এরপর পুনমের রিকশায় ওঠার পর কথায় কথায় জানতে পারেন তার এক অবিশ্বাস্য গল্প।
পুনমের জন্ম রাজশাহীতে। ২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে ব্যস্ত ছিলেন মিউজিক নিয়ে। পাশাপাশি সম্পন্ন করেছেন গ্র্যাজুয়েশন। চাকরিও করেছেন একাধিক কোম্পানিতে। পুনম জানান, তিনি মিউজিশিয়ান (কি-বোডিস্ট) হিসেবে যুক্ত ছিলেন ‘স্যালভেশন’ ব্যান্ডে। এই ব্যান্ড ‘স্টার সার্চ’ প্রতিযোগিতায় সেরা ব্যান্ড হিসেবে বিজয়ী হয়েছিল। এরপর ঢাকায় চাকরিও চলছিল তার দারুণভাবে। কিন্তু গেল বছর তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। পুনম তখন একটি গার্মেন্টসের এডমিন বিভাগের কর্মকর্তা। অফিস শেষ করে বের হয়েছেন বাসার উদ্দেশ্যে। একটি প্রাইভেট কার এসে ধাক্কা দেন তাকে! না, জীবনের কাছে হার মেনে যাননি পুনম। বেঁচে যান সেই যাত্রায়। তবে এই দুর্ঘটনা পুনমের সব কেড়ে নেয়। সম্বল, সঞ্চয় যা কিছু ছিল, সবই যায় সুস্থ হওয়ার পেছনে। পুনম সুস্থ হয়ে উঠলেন। কিন্তু ততদিনে চলে গেছে চাকরি। শেষ হয়ে গেছে নিজের সব সম্বল। আর সেই সঙ্গে পৃথিবীতে আগমন ঘটেছে নতুন এক মহামারির। যার নাম করোনাভাইরাস। তাই নতুন চাকরিও জোটেনি তখন পর্যন্ত পুনমের ভাগ্যে। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা চালানো শুরু করেন পুনম। এরই মধ্যে তাকে নিয়ে করা নিউজটি চোখে পড়ে স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের। এরপর স্বপ্ন’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার পর স্বপ্ন কার্যালয়ে শুক্রবার বিকেলে হাজির হন পুনম।
স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির এবং অপারেশনস ডিরেক্টর আবু নাছের অনলাইনে এহসানুর রশীদ পুনমের সঙ্গে কথা বলার পর মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান শাহ মো. রিজভী রনী এবং মিডিয়া অ্যান্ড পিআর ম্যানেজার কামরুজ্জামান মিলু সেদিনই তার হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। কোম্পানির ইনভেন্টরি অ্যান্ড ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট অফিসার পদে চাকরি পান পুনম।
স্বপ্ন’র নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, অনলাইনে ভিডিও প্রতিবেদনটা দেখেই মনে হচ্ছিল যে, উনার জন্য কিছু করতে পারলে ভালো লাগত। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই মানুষটির জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করলাম আমরা। তার জন্য এটুকু করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।
‘স্বপ্ন’ প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাবার পর পুনম বলেন, এমন দুঃসময়ে চাকরি পাবো, এটা ভাবতেও পারিনি। আমাকে যে সম্মান আজ স্বপ্ন দিলো সেটা সততার সঙ্গে রক্ষা করতে চাই আমি। নতুন পদে নতুন চাকরিটা ভালোভাবে করতে চাই। যে সম্মানটা উনারা দিলেন সেটা রক্ষা করার দায়িত্ব এখন আমার।
এসএস
মন্তব্য করুন