• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo
শুল্ক-কর প্রত্যাহার ও বন্ড-সুবিধার দাবি আসবাব রপ্তানিকারকদের
নাবিল গ্রুপের এমডি ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আলোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির অন্যতম সহযোগী ও রাজশাহীভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিনুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।  সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিএফআইইউর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক ব্যাংকার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। চিঠিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ -এর ২৩ (১) (গ) ধারা অনুযায়ী আমিনুল ইসলাম, তার বাবা জাহান বকস মণ্ডল, মা আনুয়ারা বেগম, স্ত্রী ইসরাত জাহান, ছেলে এজাজ আবরার এবং মেয়ে আফরাত ইবনাথের ব্যক্তিগত হিসাব এবং তাদের মালিকানাধীন কোম্পানির নামে পরিচালিত হিসাবের লেনদেন ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার পাশাপাশি তাদের নামে কোনো লকার থাকলে তা জব্দ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্য এবং তাদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে তার তথ্য (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ফরম, হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী) পাঠানোর অনুরোধ করেছে বিএফআইইউ। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ‘জোরজবরদস্তি’ করে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। এরপর এ গ্রুপটি যেমন নামে-বেনামে একাধিক কোম্পানি খুলে অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাপক ঋণ নিয়েছে, তেমনি সুবিধাভোগীদেরও সুযোগ করে দেয়। তাদের মধ্যে অন্যতম রাজশাহীভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপ।  প্রতিষ্ঠানটি শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নামে-বেনামে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আরটিভি/আইএম/ এসএস
আশুলিয়ার বন্ধ কারখানা খুলবে শনিবার
বৃহস্পতিবার থেকে পোশাক কারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত
প্রধান উপদেষ্টার কাছে নিরাপত্তা দাবি ব্যবসায়ীদের
বিজিএমইএ’র নতুন সভাপ‌তি খন্দকার রফিকুল
এবার ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারির রিসাইক্লিং
শিল্পোন্নত বিশ্বে ইলেকট্রিক যানের ব্যবহার বাড়ছে৷ কিন্তু এমন গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাটারির কাঁচামালের চাহিদা পূরণ করা সহজ নয়৷ ইলেকট্রিক ভেহিকেল ব্যাটারি অত্যন্ত দাহ্য এবং বিস্ফোরক৷ ফলে জার্মানিতে ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের বিশাল উদ্যোগ নিয়েছে৷ রিসাইকেলের প্রথম কোম্পানি বিশাল মুনাফা করেছে৷ কারণ, ব্যাটারির মধ্যে কোবাল্ট ও নিকেলের মতো মূল্যবান ধাতু রয়েছে৷ ইএমআর কোম্পানির প্রতিনিধি মুরাত বায়রামের মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানির রাজপথে দেড় কোটি ইলেকট্রিক যান নামবে বলে আমরা মনে করি৷ অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে ২০৩০ সাল আগামী পরশুর মতো৷ কয়েক মাস আগে ইউরোপে ইলেকট্রিক যানের সবচেয়ে বড় রিসাইক্লিং কারখানা খোলা হয়েছে৷ মুরাত বলেন, আমরা জার্মানির সবচেয়ে দামী ফ্যাক্টরি ফ্লোরের একটির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি৷ নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেই অর্থ সাশ্রয় হয় না৷ এই ফ্লোর সম্পূর্ণ পানি-নিরোধক, কয়েক মিটার পুরু এবং সেখানে এমন সেন্সর রয়েছে, যে কোনো পদার্থ মাটিতে প্রবেশ করলেই যা অবিলম্বে আমাদের জানিয়ে দেবে৷ এই সব ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় গাড়ির কারখানা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল৷ কিন্তু খুব কম ব্যাটারিই এখানে আসে৷ রিসাইক্লিং প্লান্টের প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার লার্স মুন্ডিন বলেন, আমরা মূলত নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা ও কার্যকর করি এবং নিজেরাই ব্যবহার করি৷ আমরা শিক্ষাকে যতটা সম্ভব গুরুত্ব দেই৷ পুরানো ব্যাটারি বেরিয়ে এলে এবং আচমকা বেশি পরিমাণে এসে পড়লে প্রস্তুত থাকতে চাই৷ কয়েক বছরের মধ্যে প্রথম প্রজন্মের ইলেকট্রিক যানগুলির ব্যাটারি বাতিল হওয়ার পরই বিশাল পরিমাণে রিসাইক্লিং শুরু হবে৷ তখন বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি তথাকথিত ব্ল্যাক মাস ও সেগুলির মধ্যেকার ধাতু উদ্ধার করার উদ্যোগ নেবে৷ লার্স মুন্ডিন বলেন, সবচেয়ে দামী ধাতু হিসেবে ৯৫ শতাংশ নিকেল, সেইসঙ্গে অবশ্যই অ্যালুমিনিয়াম ও তামা উদ্ধার করাই আমাদের লক্ষ্য৷ গোটা বিশ্ব ইলেকট্রিক যানের দিকে ঝুঁকছে এবং ব্যাটারির জন্য এই ধাতুগুলির চাহিদা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়ে যাবে৷ রিসাইক্লিং করতে পারলে প্রস্তুতকারকদের এমন খনির উপর নির্ভরতা কমবে, যেখানে কাজের পরিবেশ খুবই খারাপ৷ মুরাত বায়রাম মনে করেন, কোম্পানিগুলি এখনো কাঁচামালের ক্ষেত্রে অন্য দেশের উপর অতিরিক্ত মাত্রায় নির্ভরশীল৷ জার্মানির রিসাইক্লিং প্লান্টে উদ্ধার হওয়া উপাদান ইউরোপের উত্তরে এক পাইলট প্লান্টে জমা হয়৷ ব্যাটারি শ্রেডিং করে এক রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্ল্যাক মাস নামে পরিচিত অবস্থায় রূপান্তরিত করা হয়৷ একেই রিসাইক্লিং শিল্পের কালো সোনা বলা হয়৷ সেই মিশ্রণ থেকে নিকেল, ম্যাংগানিজ ও কোবল্টের সবুজ এক তেল বার করা যায়, যা সেভাবেই নতুন ব্যাটারিতে কাজে লাগানো যায়৷ কিন্তু সেটির মূল্য কি ন্যায্য? লার্স মুন্ডিন বলেন, এই মুহূর্তে সঠিক মূল্য বলা কঠিন, কারণ এই ব্যবসা এখনো গড়ে তোলা হচ্ছে৷ তাছাড়া বিশ্ব বাজারে মূল্য অনেক ওঠানামা করে৷ ফলে হিসেব করা কঠিন৷ কাজ একবার শুরু হলে প্রক্রিয়ার একটা বড় অংশ স্বয়ংক্রিয় করে তোলা হবে৷ কিন্তু রিসাইক্লিং-এর হার বাড়াতে ব্যাটারিগুলি আরো উন্নত করা প্রয়োজন৷ মুরাত বায়রাম বলেন, গাড়ির ব্যাটারির প্রসঙ্গে বলতে হয়, আমরা স্পষ্ট দেখছি যে জার্মান গাড়ি কোম্পানিগুলি আরো বেশি করে রিসাইক্লিং-এর কথা ভেবে পণ্য ডিজাইন করছে৷ তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চাইছে, কারণ তারাও আমাদের মতোই কাঁচামাল পেতে আগ্রহী৷ তারাও চক্র পূর্ণ করতে চায়৷ অ্যালুমিনিয়ামের মতো উচ্চ রিসাইক্লিং হার নিশ্চিত করতে পারলে আরেকটি সুবিধাও পাওয়া যাবে৷ শেষ পর্যন্ত জলবায়ুর জন্যও এই উদ্যোগ ইতিবাচক হবে৷ এই রিসাইক্লিং প্ল্যান্টের পরিচালনাকারীরা কোটি কোটি ইউরো বিনিয়োগ করেছেন৷ এই উদ্যোগ নিরাপদ হবে বলেই তাঁরা আশা করছেন৷
একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে চামড়া শিল্প
কোরবানির ঈদে সরকার নির্ধারিত দামেরও অর্ধেক দামে বিক্রি হয়েছে কাঁচা চামড়া। চামড়া রপ্তানি আগে থেকেই কমছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার চামড়াজাত পণ্যের ৪০ ভাগ আমদানি করা হয়। চামড়া শিল্প সম্ভাবনাময় হলেও এই পরিস্থিতি হচ্ছে বার বার। চামড়া শিল্প থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি ডলারের। তবে তা ঘুরপাক খাচ্ছে ১০০ কোটি ডলারের ঘরে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, চলতি অর্থ-বছর (২০২৩-২০২৪)-এর জুলাই থেকে মে পর্যন্ত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আয় ১৪. ১৭ শতাংশ কমে হয়েছে ৯৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগের একই সময়ে তা ছিল ১১২ কোটি ডলার। এ সময়ে চামড়াজাত পণ্যের বৈশ্বিক বাজার ছিল প্রায় ৪৬৮ বিলিয়ন বা ৪৬ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। চামড়ার বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ০.২৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য সব কিছুর রপ্তানিই কমে গেছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি বাইরের বাজারে অর্ডার অনেক কমে গেছে। আবার অভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমছে। সব মিলিয়ে আমাদের চামড়া শিল্প এখন খারাপ অবস্থায় আছে। বাংলাদেশ লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, বাংলাদেশের রপ্তানির চেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা। এটা ২০১৮ সালে ছিল ১৪০ কোটি ডলারের। তবে তার মধ্যে ৪০ শতাংশ আমদানি হতো। সেই চাহিদা কমে ১০০ কেটি ডলারের নিচে নেমেছে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবসা দুটিই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চামড়াশিল্পের মানসনদ প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডাব্লিউজি) সনদ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এলডাব্লিউজি সনদপ্রাপ্ত ট্যানারি আছে মাত্র ৬ টি। তবে ভারতে রয়েছে ১৩৯টি, চীনে ১০৩, ইটালিতে ৬৮, ব্রাজিলে ৬০, তাইওয়ানে ২৪, স্পেনে ১৭, দক্ষিণ কোরিয়া ও তুরস্কে ১৬ ও ভিয়েতনামে রয়েছে ১৪টি। এই সনদ না থাকার কারণে বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশে পর্যাপ্ত দেশীয় কাঁচা চামড়া থাকার পরও রপ্তানিমুখী চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পকারখানাগুলোকে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার এলডাব্লিউজি সনদপ্রাপ্ত ফিনিশড চামড়া আমদানি করতে হয়। দূষণমুক্ত উন্নত পরিবেশে চামড়া উৎপাদনই কমপ্লায়েন্সের মূল শর্ত। এর সঙ্গে আছে সঠিক পদ্ধতিতে মান বজায় রেখে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর এক গবেষণা অনুসারে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) সক্ষমতার অভাব, কমপ্লায়েন্স সম্পর্কে ট্যানারি মালিকদের যথাযথ ধারণা না থাকা, কঠিন বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা ও ট্যানারির অভ্যন্তরীণ পরিবেশের মান উন্নত না হওয়ার কারণে কারখানাগুলো এলডাব্লিউজি সনদ পাচ্ছে না। বিসিকের সাবেক চামড়া বিশেষজ্ঞ এবং লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তর করা এক ধাপ অগ্রগতি। সেখানে অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু কারখানার পরিবেশ ও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার সঠিকভাবে গড়ে তোলা হয়নি। সেটা না হওয়ায় আসলে আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে পারছে না। একইভাবে অনেক কারখানাই আধুনিক নয়। তারা আগের প্রচলিত পদ্ধতিতেই কাজ করছেন, বলেন তিনি। তার মতে, চামড়া বোর্ড গঠন করে এই বিষয়গুলো দেখা উচিত। ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরিবেশ এবং সোশ্যাল দুই ধরনের কমপ্লায়েন্সেরই প্রয়োজন হয়, যা কারখানাগুলোর নাই। ফলে এলডব্লিউজি সনদ পাচ্ছে না। আবার ব্র্যান্ডগুলোও গ্রহণ করছে না। তার কথা, রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার কারণ রপ্তানির পরিমাণ কমে যাওয়া নয়। আসলে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কারখানা মালিকরা। রপ্তানির তালিকায় অনেক দেশ থাকলেও এখন প্রধানত চীনে বেশি রপ্তানি হয়। বিশ্বব্যাপী চামড়াজাত পণ্যের বাজারের আকার প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যার ৩০ শতাংশ দখল করে আছে চীন। শাহীন আহমেদ বলেন, এখানে দুই ধরনের বাস্তবতা আছে। আমাদের কারখানাগুলো যেমন কমপ্লায়েন্স না, আবার আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা কমে গেছে। বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থা তার কারণে চাহিদা কমছে। ইউরোপে চাহিদা কমছে। আবার ব্যাপক মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারেও চাহিদা অনেক কমে গেছে চামড়াজাত পণ্যের। মানুষ এখন খাদ্য কিনবে, না ফ্যাশন করবে সেই প্রশ্ন এসে গেছে। আর আর্টিফিশিয়াল লেদারও চামড়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এদিকে এবার কোরবানির ঈদে সরকার নির্ধারিত দামেরও অর্ধেক দামে কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে। কাঁচা চামড়ার দাম না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এটা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কম হওয়ার একটি কারণ। কিন্তু সেই কারণে এত দাম কম হওয়ার কথা নয়। এখানে একটি সিন্ডিকেট আছে, যারা সংঘবদ্ধভাবে কম দামে কাঁচা চামড়া কিনে বেশি লাভ করে। একই কথা বলেন আবুল কালাম আজাদ। তার মতে, কাঁচা চামড়া কয়েক হাত ঘুরে কারখানায় যায়। ফলে কয়েক ধাপে মধ্যস্বত্ব ভোগী থাকে। বাংলাদেশে এখনো চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি পণ্যের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। তৈরি পোশাকের পরই এর অবস্থান বলে মনে করেন তিনি।
এক আইএমইআই নম্বরে দেড় লাখ ফোন!
একই আইএমইআই নম্বরের দেড় লাখের বেশি হ্যান্ডসেট পাওয়া গেছে। নামি-দামি ব্র্যান্ডের মোড়কে দেশের গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এসব মোবাইল সেট। এমনটাই অভিযোগ করেছেন মোবাইল উৎপাদকরা। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে তেজগাঁওয়ে টেলিযোগাযোগ অধিদফতরে এমন অভিযোগ তুলে মোবাইল উৎপাদকরা দাবি করছেন লাগেজে আনা করফাঁকির ফোনের বাজারজাত বন্ধ করতে। এ দাবি না মানলে কর্মী ছাঁটাইয়ের হুমকি দেন হ্যান্ডসেট উৎপাদকরা। হ্যান্ডসেট সংযোজনে দেশে বর্তমানে দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে দাবি করে হ্যান্ডসেট উৎপাদকরা বলেন, হ্যান্ডসেটের বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ লাগেজে আনা মোবাইল ফোন। এতে বছরে এক হাজার কোটি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বর্তমানে স্মার্ট ও ফিচারফোন মিলিয়ে ৪০ লাখ উৎপাদন সক্ষমতার ৩০ শতাংশ সেট অব্যবহৃত থাকছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান জোরদারের কথা জানান ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বিড়িতে শুল্ক কমানো ও অগ্রিম ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন
  বঙ্গবন্ধুর আমলের মতো বাজেটে বিড়ির শুল্ক ও অগ্রিম ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করে বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন।  বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সকালে আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এসব দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারমান বরাবর সাত দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেন শ্রমিক নেতারা।  বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হারিক হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন, লুৎফর রহমান, আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল গফুর, আবুল হাসনাত লাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম ইসলামসহ অন্যরা। শ্রমিকদের অন্যান্য দাবি গুলো হলো বিড়িকে কুটিরশিল্প ঘোষণা করা, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির দালালি বন্ধ করা, অবৈধ বিড়ি তৈরির কারখানা বন্ধ করা এবং বহুজাতিক কোম্পানির নিম্নস্তরের ১০ শলাকার প্রতি প্যাকেট সিগারেটের মূল্য ৪৫ থেকে ৬৫ টাকা বৃদ্ধি করা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিড়িশিল্প দেশের প্রাচীন শ্রমঘন একটি শিল্প। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিকশিত হয়েছিল এই শিল্প। তিনি এই শ্রমঘন শিল্পটি শুল্ক মুক্ত ঘোষণা করেন। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ২০ লক্ষ হতদরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা, শারীরিক বিকলাঙ্গ শ্রমিক বিড়ি কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বিড়ি শিল্প রক্ষা এবং শ্রমিকদের দুর্দশা লাঘবে বিড়ির শুল্ক এবং অগ্রীম আয়কর প্রত্যাহার করে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছি। বক্তারা আরো বলেন, বর্তমানে দেশে নিম্নস্তরের সিগারেট ভোক্তা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ। এসব নিম্নস্তরের সিগারেট ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর। তারা এদেশের মানুষের ফুসফুস পুড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। সুতরাং দেশীয় বিড়িশিল্প রক্ষায় বহুজাতিক কোম্পানীর নিম্নস্তরের ১০ শলাকার প্রতি প্যাকেট সিগারেটের মূল্য ৪৫ থেকে ৬৫ টাকা বৃদ্ধি করা হলে আরো ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরিত হবে বলে আশা করছি।  এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো সরকার কর্তৃক শ্রমিকদের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি বিড়িকে কুটিরশিল্প ঘোষণার দাবি করেন শ্রমিকরা।
চা উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ৫ দেশ, বাংলাদেশের অবস্থান কততম
দিনে একবার চায়ের দোকানে বসে চা না খেলে অনেকেরই গোটা দিনটাই যেন অপূর্ণ থেকে যায়। তবে চা কিন্তু শুধু পানীয় হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না। অনেকসময় দেশে দেশে বন্ধুত্ব তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। যেমন, ১৯৭৩ সালে আরব ইসরায়েল যুদ্ধের সময় আরবদের প্রতি সমর্থন এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মিশরে চা পাঠিয়েছিলেন সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষের কাছে চা পান কেবলই একটি অভ্যাস হলেও, এর বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। যুগে যুগে চায়ের আবেদনও বেড়েই চলেছে। যদিও বিশ্বের মাত্র গুটিকয়েক দেশ এই ক্রমবর্ধমান চায়ের চাহিদা মেটাতে পারে। চীন খ্রিষ্টের জন্মের দেড় হাজার বছর আগে চীনের ইউনান প্রদেশে একটি ঔষধি পানীয় হিসাবে চা পানের প্রচলন শুরু হয়েছিলো। তাই সারাবিশ্বে এই স্থানটি চায়ের জন্মস্থান নামে পরিচিত। চা মূলত তৈরি করা হয় ক্যামেলিয়া সিনেসিস নামের চিরহরিৎ গুল্ম থেকে। এই ছোট গাছের পাতা এবং পাতার কুঁড়ি সংগ্রহ করে এর থেকে চা উৎপাদন করা হয়। ব্ল্যাক টি (র' চা), গ্রিন টি (সবুজ চা), হোয়াইট টি (সাদা চা), এমনকি উলং টি’র মতো হাজার প্রকারের চা আছে বিশ্বে। কিন্তু সেগুলোর সবই তৈরি করা হয় ওই গাছের পাতা থেকে। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দেশ চীনের বার্ষিক চা উৎপাদন গড়ে ৩১ লাখ মেট্রিক টনের বেশি, যার বাজারমূল্য ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। মূলত, কয়েক শতাব্দী ধরেই চা চীনের জাতীয় পানীয় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং এমনকি ধর্মীয় কারণে সমগ্র চীনে এটি তুমুল জনপ্রিয়। তাই, নিজেদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ২০২৩ সালে চীন প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চা রপ্তানি করেছে। ভারত ভারতবর্ষে আগে চায়ের ব্যবহার তেমন একটা ছিল না। কিন্তু ব্রিটিশরা ১৮০০ দশকের গোড়ার দিকে ভারতে চা ব্যবহার ও উৎপাদন করা শুরু করে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ করা শুরু করে, তখন এই চা ছিল সমাজের উঁচু শ্রেণির লোকদের পানীয়। পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে সর্বসাধারণের মাঝেও জনপ্রিয় হয়। স্ট্যাটিস্টা বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ভারত। দেশটিতে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চা উৎপাদিত হয়। ভারতের আসাম, তামিলনাড়ু হলো সর্বাধিক চা উৎপাদনকারী অঞ্চল, যার বেশিরভাগই নীলগিরি জেলার পাহাড়ে জন্মে। অন্যান্য চা-উৎপাদনকারী দক্ষিণের মুন্নার এবং ওয়ানাদ। কেনিয়া স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের দেশ কেনিয়ার নাম। কেনিয়াতে বছরে সাধারণত পাঁচ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি পরিমাণ চা উৎপাদন হয়। যদিও ২০২৩ সালে দেশটিতে তার আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম চা উৎপাদিত হয়েছে। ওই বছর দেশটিতে মোট উৎপাদিত চায়ের পরিমাণ ছিল চার লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন। রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ু ও গাঢ় লাল মাটির কারণে চা উৎপাদনের জন্য কেনিয়া এক স্বর্গভূমি। আফ্রিকান দেশগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদনকারী দেশ এটিই। তবে কেনিয়ায় যত পরিমাণ চা উৎপাদিত হয়, তার বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়। বলা হয়ে থাকে, চা-ই হলো কেনিয়ার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেনিয়া থেকে ৪৫টিরও বেশি দেশে চা রপ্তানি করা হয়েছিলো। তবে রপ্তানিকৃত চায়ের ৪০ শতাংশ কিনেছিলো পাকিস্তান। মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রও প্রচুর চা কিনেছিলো। শ্রীলঙ্কা বিশ্বের শীর্ষ চা রপ্তানিকারী দেশের মাঝে শ্রীলঙ্কার নামও আছে। শ্রীলঙ্কার সিলন চা পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত। স্ট্যাটিসটা ও টি এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন শ্রীলঙ্কা অনুযায়ী, দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে আড়াই লাখের বেশি মেট্রিক টন চা উৎপাদিত হয়েছিলো। চলতি বছরের শুরুর তিন মাসেই সেখানে ৫৮ হাজার মেট্রিক টন চা উৎপাদন করা হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কার ওই ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কায় যে পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছিলো, তার প্রায় দুই লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন চা রপ্তানি করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা থেকে যারা চা আমদানি করে, তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো তুরস্ক, ইরাক, রাশিয়া ইত্যাদি দেশ। ভিয়েতনাম চা উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মাঝে এশিয়ার এই দেশটিও আছে। ভিয়েতনামের ব্ল্যাক ও গ্রিন টি'র খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। তবে ভিয়েতনামের সবুজ চা'র কদর উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এই দেশটি লোটাস (পদ্ম) ও জেসমিন (জুঁই) চায়ের জন্যও বিখ্যাত। পদ্মের পাতা, ফুল, শিকড়, ফল, বীজ বা ভ্রূণ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় লোটাস চা তৈরি করা হয়। আর জেসমিন চা মূলত প্রস্ফুটিত জুঁই ফুল থেকে চায়ের সাথে সৌরভ মিশ্রিত করে একধরনের সুগন্ধি চা। জেসমিন চায়ের স্বাদ মিষ্টি এবং সুগন্ধিযুক্ত হয়ে থাকে। স্ট্যাটিসটা অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশটিতে এক লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন চা উৎপাদিত হয়, তার আগের বছরের তুলনায় চা এক লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। ওই বছর দেশটির ১২৩ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ করা হয়েছিলো। বাংলাদেশের অবস্থান কততম? চা উৎপাদনকারী শীর্ষ পাঁচটি নয় কেবল, ১০টি দেশের তালিকায়ও বাংলাদেশ নেই। ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা দেশগুলো হলো তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনা, জাপান ও থাইল্যান্ড। বাংলাদেশ চা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চা উৎপাদনের অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে ২০২৩ সালে মোট ১০২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি (১ লক্ষ টনের কিছু বেশি) চা উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদিত চা থেকে এক মিলিয়ন কেজির কিছুটা বেশি পরিমাণ চা রপ্তানি করা হয়েছে। রপ্তানিকৃত চায়ের মূল্য ২৭২ মিলিয়ন টাকার চেয়ে সামান্য বেশি। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে ২০০১ সালের সাথে তুলনা করলে গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে দেশটিতে চায়ের উৎপাদন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু চা রপ্তানির পরিমাণ অনেকাংশেই কমেছে। অর্থাৎ, এই সময়ের মাঝে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই চায়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা যায়, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৬৮টি। তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
সেরা মাঝারি শিল্পে প্রথম পুরস্কার পেলো বায়োফার্মা
উৎপাদনশীলতা ও পণ্যের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার থেকে পুরস্কৃত হলো দেশের অন্যতম ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান বায়োফার্মা লিমিটেড। শিল্প মন্ত্রণালয়ের জুরি বোর্ডের বিবেচনায় মাঝারি শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথমস্থান অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।  শনিবার (৮ জুন) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মাল্টিপারপাস হলে আয়োজন করা হয় ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি (এনপিকিউ) এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২২ অনুষ্ঠানের।  এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বায়োফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. লকিয়ত উল্যাহর হাতে ট্রফি ও সার্টিফিকেট তুলে দেন।একই সঙ্গে ইনস্টিউটিউশনাল এপ্রিসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড-২০২২ও পেয়েছে বায়োফার্মা। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও)। বায়োফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. লকিয়ত উল্যাহ ব্যবসাবান্ধব সরকারের মহতি উদ্যোগকে স্বাগত জানান। বায়োফার্মাকে সম্মানিত করার জন্য পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। ডা. লকিয়ত উল্যাহ বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে আদর্শ মান-নীতি ও সিজিএমপি গাইড লাইন অনুশীলন করে দেশ, বিদেশের রোগীদের জন্য উন্নতমানের ওষুধ সরবরাহ করে আসছে বায়োফার্মা। গুণগত মানের যথার্থতা নিরূপণের লক্ষ্যে সম্প্রতি বায়োফার্মা ইউএস-এফডিএ অনুমোদিত বিখ্যাত কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে ১১টি ওষুধ পণ্য উদ্ভাবক কোম্পানির সঙ্গে তুলনা করে বায়োইকুভ্যালেন্ট স্টাডি সম্পন্ন করেছে। বায়োফার্মা লিমিটেড দেশীয় বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটিয়ে ২০০৮ সাল থেকে এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার ২৫টি দেশে গুনগত মানসম্পন্ন ওষুধ রফতানি করে আসছে। বায়োফার্মা তার উৎপাদিত পণ্য রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অসামান্য ভূমিকা পালন করছে জানান তিনি। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে কয়েকজন খ্যাতনামা চিকিৎসকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত হয় বায়োফার্মা লিমিটেড। পরে প্রতিষ্ঠানটি তার সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আরও ১০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে। এসব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে পরিণত হয় বায়োগ্রুপ।  
‘বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের বাজারে দেশীয় কোম্পানির আধিপত্য’
বর্তমানে এই শিল্পে দেশীয় কোম্পানিগুলো বাজারে ব্যাপকভাবে আধিপত্য বিস্তার করছে। যেহেতু দেশীয় কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধির হার অনেক বেশি, তাই আগামী দিনগুলোতে দেশীয় কোম্পানিগুলো বাজারে আরও বেশি আধিপত্য বিস্তার করবে। তবে প্রায় অর্ধেক নন ব্যান্ডেড অর্থাৎ নিম্নমানের নকল ও অনুমোদনবিহীন পণ্য দখল করে আছে।  ‘মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশ’ (এমডব্লিউবি) গবেষণায় এমন তথ্য তুলে ধরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগ। বাংলাদেশের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং লাইটিং পণ্যের ওপর সম্প্রতি এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণার আওতায় আনা পণ্যগুলো হচ্ছে- সুইচ, সকেট, হোল্ডার, মাল্টি-প্লাগ, সার্কিট ব্রেকার, মিটার এবং বিভিন্ন হালকা পণ্য যেমন এলইডি লাক্স, এলইডি টিউব, এলইডি প্যানেল, ব্র্যাকেট এলইডি, জিএলএস, এনার্জি এফিশিয়েন্সি বাল্ব, ইমার্জেন্সি লাইটিং অপশনস। এটি একটি বড় এবং অপার সম্ভাবনাময় শিল্প। বর্তমানে দেশজুড়ে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার খুচরা বিক্রেতা এবং ২৫০০ উদ্যোক্তাসহ মোট ৫ লাখেরও বেশি মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। তাদের মতে, আশাব্যঞ্জক তথ্য হলো- উভয় পণ্যের বাজার গত দুই দশক ধরে অব্যাহত ভাবে বেড়েই চলেছে। যদি আগামী দিনগুলোতে এই প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই খাতটি একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বড় খাত হিসেবে আবির্ভূত হবে। গবেষণায় দেখা যায়, দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে সুপারস্টার গ্রুপ উভয় প্রকার পণ্যের ক্ষেত্রে বাজারে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। গবেষণা অনুসারে, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যাকসেসরিজ ব্যান্ডেড পণ্যের মার্কেট শেয়ারে সুপার স্টার ২৯ শতাংশ, ওয়ালটন ১৭ শতাংশ, ক্লিক ১৭ শতাংশ, এনার্জি প্যাক ৯ শতাংশ, ওসাকা শতাংশ এবং ব্লিঙ্ক, এমইপি ও লাক্সারি প্রত্যেকে ৩ শতাংশ করে বাজার দখল করে আছে। অন্যদিকে ব্রান্ডেড লাইটিং পণ্যের মার্কেট শেয়ারে সুপার স্টার ২৫.৫৯ শতাংশ, ক্লিক ১৩ শতাংশ, ওয়ালটন ১২ শতাংশ, ট্রান্সটেক ১০ শতাংশ, এনার্জি প্যাক ৮ শতাংশ এবং ফিলিপস ৭ শতাংশ বাজার দখল করে আছে। এই শিল্পের অগ্রগতির পেছনে মূলত গত ২৫ বছরে ব্যাপক বিদ্যুতায়ন, অব্যাহত জিডিপি প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান আয়, দ্রুত ও পরিকল্পিত নগরায়ণ, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং সরকারের গৃহীত সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ামক হিসাবে কাজ করেছে। দেশীয় কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের বিদ্যমান ট্যাক্স পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন করতে হবে জানিয়ে অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, যাতে কোম্পানিগুলো কম ব্যয়ে পণ্যের কাঁচামাল আমদানি করতে পারে। পাশাপাশি এসব শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ গড়ে তোলার জন্য সরকার এবং ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে জনগণের মধ্যে নিরাপদ ও মানসম্মত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। দুর্দান্ত সম্ভাবনাময় এই শিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করারও পরামর্শ দেন তিনি। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডব্লিউবির সহ-প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান এবং অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হোসাইন, মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহীদুল ইসলাম।