সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণাকে ঘিরে একের পর এক নাটকীয় ঘটনার জন্ম নেয়। সংগঠনটির বিভিন্ন পক্ষের আধিপত্য বিস্তারের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো ক্যাম্পাস। ফুটানো হয় পটকাবাজি, রামদা, হকিস্টিক নিয়ে চলে মহড়া। এর কয়েকদিন আগে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। সংগঠনটির বিভিন্ন পক্ষের সশস্ত্র উপস্থিতি সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
এদিকে কমিটি কেন্দ্রিক উত্তেজনার সর্বশেষ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল সিলগালা ও ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব বিষয় নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে আরটিভি নিউজের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাফায়িত সিফাতের সাথে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। যা তুলে ধরা হলো-
আরটিভি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল বন্ধ, পরীক্ষা বন্ধের নোটিশসহ সাম্প্রতিক অচলাবস্থা নিয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।
উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করা হয়নি, পূজার ছুটির পর রুটিন অনুযায়ী ক্লাস চলবে। তবে মারামারি নিয়ন্ত্রণের জন্য হল বন্ধ করতে হয়েছে৷ একই সাথে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অসুবিধা বিবেচনা করে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
আরটিভি: আবাসিক হলগুলো কবে নাগাদ খুলবে? পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ তারিখ পর্যন্তই কি পরীক্ষা স্থগিত থাকবে?
উপাচার্য: আমরা নিরাপত্তার বিষয়টা প্রাধান্য দিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য শুক্রবার একটি মিটিং করবো। এ বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো দায়িত্বশীল আচরণ করলে এবং সব ঠিকঠাক মনে হলে, আবাসিক হল ও পরীক্ষা সংক্রান্ত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
আরটিভি: ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের অন্তর্কোন্দলকে কেন্দ্র করে প্রায়শই শক্তিমত্তার প্রদর্শনী হচ্ছে। ক্যাম্পাসে তাদের মহড়ার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে হল-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা আসে। কিন্তু এখন এমন প্রেক্ষাপটে দ্রুত হল খুলে দিতে ছাত্রলীগই দাবি জানাচ্ছে। এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
উপাচার্য: কিছু পক্ষ যখন তখন সংঘর্ষে জড়াবে, নিরাপত্তার জন্য হল বন্ধ করতে হবে। আবার যখন বলবে তখনই খুলে দিতে হবে। এটা তো ছেলেখেলার বিষয় নয়। আনপ্রেডিক্টেবল, তবে ঝুঁকি এনালাইসিস করে দেখতে হবে শিক্ষার্থীরা যেন যথাসম্ভব নিরাপদে ক্যাম্পাস বা হলে থাকতে পারে৷ যারা ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, মারামারিতে যারা ইনভলভ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
আরটিভি: এসব ঘটনা ক্যাম্পাসের শিক্ষার পরিবেশে কেমন প্রভাব ফেলছে?
উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে এসেছি শিক্ষা-গবেষণার মান বৃদ্ধির জন্য, কিন্তু আমাকে বারবার এসব মারামারি ও তদন্ত সামলাতে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব অছাত্রসুলভ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার কথা নয়। শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়াশোনা ও যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতেই এসেছে। তারা যেন এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে আমরা তৎপর রয়েছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পক্ষ যেন শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখে।
আরটিভি: সাম্প্রতিক এসব সংঘর্ষ সামলানোর ব্যাপারে প্রশাসন ও ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, উভয়ের ভূমিকার বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
উপাচার্য: প্রশাসন সবসময় সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আন্তরিক। আমরা সেই অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপও নিচ্ছি। কিন্তু মারামারি তো প্রশাসন করে না, তাই এসব নিয়ন্ত্রণে ছাত্রনেতাদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি।
আরটিভি: সর্বশেষ ঘটনায় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশের একটা অভিযোগ উঠেছিলো। শিক্ষার্থীদের পরিচয় নিশ্চিতে বা এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
উপাচার্য: আমরা হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ নিশ্চিত করবো। নতুন শিক্ষার্থী যাদের আইডি কার্ড এখনো হয়নি তাদের জন্য সাময়িক পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যাপারটাও বিবেচনায় রয়েছে।
আরটিভি: করোনাকালে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো। ফলে অনেকের স্নাতক শেষ না হলেও আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে৷ তারা এ ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হবে কিনা?
উপাচার্য: না, যাদের আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু অনার্স শেষ হয়নি, তারা পুরনো আইডি কার্ড দিয়েই প্রবেশ করতে পারবে।