বাঙালি বেশি আনন্দ পায় কান্না করে: প্রাণ রায়
অভিনেতা প্রাণ রায়। অভিনয় জগতের এক অনন্য নাম। রোমান্টিক, ট্রাজেডি, কমেডি সব ধরণের নাটক কিংবা চলচ্চিত্রে তার অভিনয় হয় প্রশংসনীয়। প্রাণঘাতী করোনার কারণে দীর্ঘদিন নীরব ছিল লাইট-ক্যামেরা- অ্যাকশন দৃশ্য। তখন গৃহবন্দী থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন প্রাণ রায়। আবারও পুরোদমে চালু হয়েছে শুটিং কার্যক্রম। অভিনয়শিল্পীরা ফিরেছেন চিরচেনা সেই কর্মস্থলে। অভিনেতা প্রাণ রায়ও ব্যস্ত আছেন ক্যামেরার সামনে। সামসময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আরটিভি নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
কেমন আছেন, করোনায় মধ্যে কীভাবে কাজ চলছে-
ভালো আছি। করোনায় সময়ে অনেক দিন ঘরে ছিলাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতামূলক কাজ করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু অভিনয়টা একটা পেশা। আর কতদিন ঘরে থাকা যায়। এক সময় কাজে নামতে হয়েছে। তবে এখনো সচেতনতার সঙ্গে চলার চেষ্টা করছি। বাসায় যেয়ে কস্টিউমগুলো আলাদা রাখার চেষ্টা করি। অন্য কস্টিউমের সঙ্গে যেন মিলে না যায় সেটা খেয়াল রাখতে হচ্ছে। হাত ধোয়া, খাবারের দিকে নজর দেয়া। ইউনিটেও অনেক সচেতনতা আসছে। কেউ এখন নরমাল চা দেন না, লাল চা দিলে তার সঙ্গে মশলা, লেবু মিশিয়ে দেন। ইউনিটের প্রত্যেক মেম্বার চেষ্টা করছেন যতটুকু মেনে চলা যায়। তারপরেও মনোবলটা ওষুধ হিসেবে নিয়েছি।
ফেসবুক পোস্টে দেখা যাচ্ছে অনেকগুলো কাজ করছেন। আরটিভির দীর্ঘ ধারাবাহিকেও কাজ শুরু করেছেন।
হ্যাঁ। বেশ কিছু কাজে যুক্ত হয়েছি। আর আরটিভির ধারাবাহিক নাটকের নাম ‘গোলমাল’। শুনেই বোঝা যায় স্বাভাবিক কোনো নাটক না। তিন ফ্যামিলির গোলমাল লেগেই আছে। এক ধরণের মজা তো আছেই। এই নাটকে আমার চরিত্রের নাম জালাল। এই চরিত্রটি একজন ঘর জামাইয়ের চরিত্র। একটি পরিবারে ঘর জামাই থাকাটা বড় মুশকিল। কষ্ট করে এই পর্যায়ে থাকতে হয়। পরিবার যখন ইচ্ছে তখন বের করে দিতে পারে। তবে আমি শাশুড়ির প্রিয় পাত্র যদিও বউয়ের অতটা প্রিয় না। চরিত্রের মধ্যে এক ধরণের ভাঙা, গড়া আছে। অন্যান্য ধারাবাহিক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি গল্প, আশা করি দর্শক মজা পাবেন।
শোনা যায় অনেক অভিনয়শিল্পী কাজ পাচ্ছেন না-
মিডিয়ার প্রতি সবার একটা কমপ্লেইন আছে। কিছু আর্টিস্টদের ওপর ভিত্তি করে নাটকগুলো চালানো হয়। চ্যানেলগুলোকে এক ধরণের দোষারোপ করা হয় যে অনেকেই সুযোগ পাচ্ছেন না। তবে দীর্ঘ ধারাবাহিক তৈরি হলে এই সুযোগ হবে বলে মনে করি।
বর্তমান নাটকের অবস্থা নিয়ে বলুন...
আমরা অনেকে ক্ষেত্রে টাকার কারণে অভিনয় করছি, নাটক করছি। সেটা শুধু আমার ক্ষেত্রে না- পরিচালক, রাইটার, আর্টিস্ট সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু আমাদের এই নাটকের শুরু তো এক ধরণের ভালোবাসা থেকে শুরু। চাইলে ব্যবসা কিংবা চাকরি করতে পারতাম, তা তো করছি না। আমরা একটা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছি। এখানে সামাজিক একটা দায়বদ্ধতা থেকেই যায়। সব সময় সেটা পালন করা হয়ে উঠছে না।
এখনকার নাটকগুলো কি একই ধাঁচের?
আস্তে আস্তে কমেডি নাটক বেশি বেশি হচ্ছে। এতে মানুষের আগ্রহও তৈরি হচ্ছে। এটা হতেই পারে কিন্তু এমন কিছু করা উচিৎ না যাতে সমাজের উপকার না হয়ে ক্ষতি হয়। দর্শকের রুচি নষ্ট হয় এমন কিছু করা উচিৎ না। তবে এই ধরণের নাটকের পরিমাণ বাড়ছে।
এখন তো ইউটিউবের জন্যে অনেক নাটক তৈরি হচ্ছে।
ইউটিউব আর টিভি দুইটা আলাদা মাধ্যম। কিন্তু কোথায় জানি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। টিভি মাধ্যম আর ইউটিউব মাধ্যমকে এক করে দেখাটা বোধ হয় ঠিক না। ভিউয়ের ওপর নির্ভর করে আসলে নাটক চলতে পারে না। ইউটিউবের দর্শক এক রকমের আর টিভির দর্শক আরেক রকমের। ভিন্নতা আছে। সবাই কিন্তু ইউটিউব দেখেন না। ইউটিউবের ছাড়াও টিভির দর্শক আছেন, যাদের আমরা মাথা থেকে ফেলে দিই। আমাদের পরিবারের অনেক প্রবীণ আছেন- আমাদের মা খালা তারা হয়তো ইউটিউব দেখেন না। তাদের ভিউ কিন্তু কাউন্ট হচ্ছে না। আমরা ভিউয়ের জন্য এক ধরণের কনটেন্ট তৈরি করছি। এটা নেগেটিভ তা বলছি না। সবার জন্য কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। যাদের ভিউ গুনতে পারছি না তাদের নিয়েও ভাবতে হবে।
কোন ধরণের অভিনয় মানুষ মনে রাখেন?
আমাদের বাঙালি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পায় কান্না করে। বেশি বিনোদন পায় কান্না করে। যেই মুভি দেখে দর্শক কাঁদতে কাঁদতে বের হয়, সেটা দেখার জন্য ওই দর্শক আরও দুজনকে বলেন। কখনো কখনো তিনি ওই মুভিটা আবারও দেখতে যান। এর অর্থ হলো সিরিয়াস গল্পেরও দরকার আছে।
করোনা নবীন অভিনয়শিল্পীদের জন্যও হুমকি, তাদের উদ্দেশে বলুন…
যারা অভিনয় জগতে আসতে চাচ্ছেন, শুধু শুধু ঘরে বসে থাকলে চলবে না; পাশাপাশি চর্চাটা ধরে রাখতে হবে। একটু সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা। ভোকাল প্র্যাকটিস ও ব্যায়াম করতে হবে। সারা রাত মোবাইল টিপলাম, দেরিতে ঘুমিয়ে দুপুর ১২টায় জাগলাম, এভাবে চললে হবে না। সকালে জাগলে অনেক সুন্দর ও স্বচ্ছ ভাবনা আসে। যা কাজে লাগানো যায়।
জিএ/এম
মন্তব্য করুন