ঢাকাশনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দেশে এসেই আমি বিপদে পড়ি: মিথিলা

নিয়াজ শুভ

শুক্রবার, ০২ এপ্রিল ২০২১ , ০৭:২৫ পিএম


loading/img
ফাইল ছবি

একজন তারকার কত গুণ থাকতে পারে? দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলাকে দেখলে এই প্রশ্নের উত্তরটি সহজ হয়ে যায়। কারণ তিনি নানা গুণে অনন্য। অভিনেত্রী তকমার পাশাপাশি তিনি একজন মডেল, গায়িকা ও সমাজকর্মী। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার অর্জনের পাল্লা বেশ ভারী। অভিনয়ে সাড়া ফেলার পাশাপাশি চাকরি জীবনেও দেখিয়েছেন দক্ষতা। শিক্ষা জীবনেও তিনি ছিলেন সেরাদের সেরা। নিয়মিত নাটক, বিজ্ঞাপনে হাজির হলেও ‘অমানুষ’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বড়পর্দায় পথচলা শুরু করলেন তিনি। পাশাপাশি এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা ‘তানজানিয়ার দ্বীপে’ বইটি। নিজের পেশাগত ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে আরটিভি নিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বললেন মিথিলা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিয়াজ শুভ

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন... ভালো না লাগায় ছেড়ে দিয়েছি: শ্রাবন্তী

প্রথমবারের মতো সিনেমায় অভিনয় করছেন, অনুভূতি কেমন?

মিথিলা: অনেক এক্সাইটেড। অভিনয়ের জায়গা থেকে আমি আমার সর্বোচ্চ দিবো, এখন দর্শকের কেমন লাগে সেটাই দেখার বিষয়।

সিনেমায় আপনার চরিত্রটি কেমন?

মিথিলা: আমার চরিত্রের নাম নুদরাত। এখানে আমাকে একজন নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি হিসেবে দেখা যাবে। আমি বিদেশে বড় হয়েছি। বড় হয়ে দেশে বেড়াতে এসেছি। কিন্তু দেশে এসেই আমি বিপদে পড়ি। কিভাবে বিপদে পড়ি, কেন বিপদে পড়ি আর কিভাবে বিপদ থেকে উদ্ধার হই, সেটি নিয়েই গল্প।

বিজ্ঞাপন
Advertisement

বড় পর্দায় কী নিয়মিত অভিনয় করবেন?

মিথিলা: আমি নিয়মিত অভিনয় করতে চাই। ভালো গল্প, ভালো চরিত্রের জন্য অপেক্ষা করি। এতদিন অপেক্ষা করেছি। আমার মেয়ে ছোট ছিল। তাছাড়া চাকরি, পড়াশোনা সব মিলিয়ে বেশ ব্যস্ততায় কেটেছে। বর্তমানে আমি জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশন’ নিয়ে পিএইচডি করছি। তবুও এখন মনে হচ্ছে কিছুটা সময় পেয়েছি এবং ভালো গল্পের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পেরেছি। তাই মনে হয়েছে কাজটা শুরু করা যায়। দুই বাংলাতেই বেশ কিছু কাজের কথা চলছে। কিন্তু কোভিডের কারণে সেগুলো থমকে আছে। ভালো গল্প, ভালো চরিত্র পেলে আমি সামনে আরও কাজ করবো। কাজ নিয়েই থাকতে চাই, কাজ নিয়েই বাঁচতে চাই।

বড় পর্দায় পথচলা তো সৃজিতের (মিথিলার স্বামী) হাত ধরে হতে পারতো, সেটি নয় কেন?

মিথিলা: এমনটাই হতে হবে কেন? আমি কখনো ভাবিনি এমন একজনের সঙ্গে আমার পরিচয় হবে কিংবা তার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে। কাকতালীয়ভাবে আমার এমন একজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে যিনি নির্মাতা। তার মানে এই নয় যে, আমাকে তার সঙ্গেই কাজ করতে হবে। আমি আমার নিজের যোগ্যতায় কাজ করতে চাই।

আসছে ঈদে নতুন কী চমক থাকছে?

মিথিলা: ঈদে অনেকগুলো চমক থাকবে। বেশ কিছু নাটক দেখা যাবে। চরকির জন্য একটা শর্টফিল্ম করছি, সেটা ঈদে আসবে কিনা জানি না। আর সিনেমা তো থাকছেই।

মেয়ে আইরার সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে বই লিখলেন, এমন ভাবনা কেন এলো?

মিথিলা: বাংলাদেশে শিশুদের উপযোগী বইয়ের খুব অভাব। শিশুদের কি ধরনের বই প্রয়োজন সে বিষয়ে আমার গবেষণা করা আছে। তাই আমার মনে হয়, আমি যদি আমার অভিজ্ঞতাটা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি তাহলে সেটি তাদের কাজে আসবে। কয়েক বছর আগে থেকেই এই বইটি নিয়ে আমি ভাবছিলাম। আমি ব্র্যাকের শিশু বিকাশ প্রোগ্রামের প্রধান হিসেবে কাজ করছি। বাংলাদেশের বাইরে ব্র্যাক যেসব দেশে কাজ করে সেখানেই মূলত আমার প্রজেক্টগুলো থাকে। আমাকে কাজের সুবাদে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ট্রাভেল করতে হয়, দীর্ঘদিন থাকতে হয়। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে কনফারেন্সে যোগ দিতে যেতে হয়। একদম ছোট থেকেই আইরা আমার সঙ্গে ট্রাভেল করে। আমাদের মা-মেয়ের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের মজার মজার যে অভিজ্ঞতা আছে সেগুলো যদি আমি লিখতে পারি তাহলে এটা অন্যান্য মা ও শিশুদের কাজে আসবে। আমার লাইফে আমি শিশুদের নিয়েই কাজ করতে চাই।

বইটি প্রকাশের পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

মিথিলা: খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। যারা বইমেলায় যেতে পারছে না তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে, অনলাইনে বই অর্ডার করছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিদেশে যারা আছেন তারাও শিশুদের জন্য ভালো বই খোঁজেন। বাংলাদেশে বই বাজার ডট কম নামে একটা সাইট আমার বইটি সারাদেশে ফ্রি ডেলিভারি করছে। এছাড়াও রকমারি ডট কম থেকে দেশের বাইরে যারা থাকেন তারা অর্ডার করতে পারবেন।

লেখালেখি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

মিথিলা: আমি লেখালেখি চালিয়ে যাব। ব্র্যাক থেকে এর আগেও শিশুদের জন্য বই লিখেছি, সেগুলো প্রকাশিত হয়েছে। তবে এটাই আমার প্রথম নিজস্ব পাবলিকেশন। আইরা ও মায়ের অভিযান সিরিজ আকারে আসবে। এটা সেই সিরিজের প্রথম বই। এরপর আরও চারটা গল্প আসবে। আমি চাই শিশুদের জন্য লেখালেখি করতে।

নিজের জীবনী নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে?

মিথিলা: সেটা এখনও ভাবিনি।(মুখে হাসি) আমি জানি না আমার জীবনী এতটা ইন্টারেস্টিং কিনা, যা মানুষের পড়ার আগ্রহ তৈরী করতে পারে।

আপনার কী মনে হয়, নিজের লেখনীর পাঠক তৈরি করতে পারবেন?

মিথিলা: অবশ্যই তৈরি করতে পারবো। কারণ মৌলিক গল্প, ভালো প্রচ্ছদ এবং বয়স উপযোগী বই লিখলে কেন আমি পাঠক তৈরি করতে পারবো না। শিশুরা ও তাদের বাবা-মায়েরা আমার বই পড়তে চাইবে। আমার বিশ্বাস আমি আমার লেখনীর পাঠক তৈরি করতে পারবো।

অনেকদিন ধরেই গায়িকা মিথিলার অনুপস্থিতি, সামনে শ্রোতারা আপনার কোনও গান পাবে কী?

মিথিলা: গানটা নিয়ে এখনও ভাবতে পারছি না। কয়টা জিনিস একসঙ্গে করবো (দীর্ঘশ্বাস)। যদি ভালো কোনও সুযোগ আসে তাহলে গাওয়ার চেষ্টা করবো। অনেকদিন গাইছি না বলে নিজের ওপর কনফিডেন্স খানিকটা কমে গেছে।

সাহসী ছবি পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছেন, সে বিষয়ে আপনি কী ভাবেন?

মিথিলা: ট্রোলিং এখন একটা ট্রেন্ড। শুধু আমাকে নিয়ে করে তা নয়, সবাইকে নিয়েই করে। মেয়েদের নিয়ে হয়তো একটু বেশি করে। যারা ট্রোলিং করে, আজেবাজে কথাবার্তা বলে এটা তাদের দায়বদ্ধতা। ওরা যদি খারাপ কাজ করে, নোংরা কথা বলে নিজেদের চেহারা প্রতিদিন আয়নায় দেখতে পারে এবং সেটাতে যদি তাদের শান্তি হয় তাহলে করুক। আমি ওসব ট্রোলিং বা কমেন্ট দেখতে যাই না। কারণ আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। লোকে কি বললো তাতে কান দেয়া বা দেখার সময় আমার নেই।

দীর্ঘদিন ধরেই সমাজকর্মী হিসেবে যুক্ত আছেন। একজন সমাজকর্মী হিসেবে আপনার দায়িত্ব কতটুকু এবং আপনি সেটা কীভাবে পালন করছেন?

মিথিলা: আমি পেশাগতভাবে একজন সমাজকর্মী। ১৩ বছর ধরে ব্র্যাকে কাজ করছি। সেই সূত্রে পেশাগতভাবেই আমি নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করছি। আমি নিজেও অনেক কিছু শিখেছি। নিজের কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি। বাংলাদেশে যেসব নারীরা রয়েছে তাদের অধিকার নিয়ে আমি যথেষ্ট সোচ্চার। এছাড়াও লিঙ্গ বৈষম্য ও শিশুর অধিকার নিয়ে কথা বলি। আমার মতে, সেটা আমার দায়বদ্ধতা।

দেশে কতদিন আছেন?

মিথিলা: অনেকদিনই থাকতে হবে। হাতে বেশ কিছু কাজ আছে। এছাড়া সিনেমার কাজ শেষ হলেই ফিরে যাবো।

দেশকে কতটা মিস করেন?

মিথিলা: খুব বেশি। আমার মাটি, বাড়ি, আমার কাজের জায়গা, আমার বন্ধু, আপনাদের সবাইকে খুব বেশি মিস করি (মুখে হাসি)।

এতক্ষণ সময় দেয়ার ধন্যবাদ।

মিথিলা: আপনাকেও ধন্যবাদ।

এনএস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |