শিক্ষকের গলায় জুতার মালা, প্রতিবাদে সোচ্চার ফারুকী
সম্প্রতি নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত (গলায় জুতার মালা দেওয়া) করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন তারকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) মধ্যরাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফারুকী লেখেন, ‘শিক্ষককে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে। ভিড়ের ভেতরে তার মুখটা ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না। একটু পর দেখা গেল তাকে। তার গলায় জুতার মালা। তার মুখটা ঠিকঠাক দেখা গেলেও আমার, আমাদের মুখটাই আর দেখতে পাচ্ছিলাম না। এই দৃশ্য লজ্জার, অপমানের।’
অপরাধীদের শাস্তি দাবি করে নির্মাতা লিখেছেন, ‘যে বা যারাই জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ঔদ্ধত্যের চেয়ে অশ্লীল কিছু দেখে নাই এই পৃথিবী, কোনোকালে।’
নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রাহুল দেব রায়ের ধর্মীয় উসকানির বিষয়কে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত। গত ১৭ জুন ফেসবুকে ভারতের নূপুর শর্মার ছবি পোস্ট দিয়ে রাহুল লেখেন, ‘প্রণাম নিও বস নূপুর শর্মা, জয় শ্রী রাম’। এরপর ১৮ জুন সকালে তাকে কলেজে দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বিশ্বাস তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপস্থিত শিক্ষকদের জানান। এরপর স্থানীয় মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুরসালিন, কলেজের জিবির সভাপতি অচিন চক্রবর্তী, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়।
মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুরসালিন কলেজ থেকে রাহুলকে নিয়ে যেতে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারমুখি হয়ে ওঠেন এবং বাধা দেন। কিছু সময়ের মধ্যে নড়াইল সদর থানার ওসি শওকত কবির অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে সেখানে পৌঁছান। কিন্তু রাহুলকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। এরপর নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম আরও পুলিশ নিয়ে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে যান। সাধারণ শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের বুঝিয়ে রাহুলকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। ধীরে ধীরে লোকজন বাড়তে থাকে, সঙ্গে উত্তেজনাও বাড়তে থাকে।
এরপর আরও অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় সেখানে যান। রাহুলের উপযুক্ত বিচার দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই এলাকার সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রাহুল রায়কে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজন যোগ দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে জনতার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। ফলে কলেজ চত্বর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ সময় কলেজের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে বাথরুমে আটকে রাখা হয়। এ ছাড়া বিক্ষুব্ধ জনতা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন বিশ্বাস, শিক্ষক প্রশান্ত রায় ও শিক্ষক অরুন কুমার মণ্ডলের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
ওই দিন বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলে যান। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার দু’জন মিলে উপযুক্ত বিচার দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে রাহুলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ সময় একদল যুবক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে মারপিট করে।
মন্তব্য করুন