দগ্ধ অভিনেত্রী আঁখির স্বামীর আহ্বান
ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। শনিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে একটি নাটকের শুটিংসেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গুরুতর আহত হলে তাকে উদ্ধার করে হাসাপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমানে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন এই অভিনেত্রী।
তবে গত তিন-চার দিনেও শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি আঁখির। মাঝে কিছুটা ভালো হলেও পরবর্তী সময়ে তার রক্তের প্লাজমা দ্রুত কমতে থাকে। বর্তমানে তাকে প্লাজমা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখনও তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের এইচডিইউতে রেখেই চলছে তার চিকিৎসা।
এদিকে তার স্বামী নির্মাতা রাহাত কবির মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ এক পোস্ট দিয়েছেন। পাঠকের জন্য তা হুবহু প্রকাশ করা হলো।
‘কিছু লেখার মতো মানসিক অবস্থায় নেই। আঁখিকে নিয়ে যেই যুদ্ধটা করে যাচ্ছি গত তিন ধরে, এর মধ্যে আমাকে কিছু লিখে ব্যাখ্যা দিতে হবে নিজেদের সহকর্মীদের কাছে এভাবে ভাবতেই এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমার এবং আমার পরিবারের প্রয়োজন একটা মোরাল সাপোর্ট। পারলে এইটুকু নিশ্চিত করেন। না পারলে সচেতন নাগরিক হওয়ার চেষ্টায় ফেসবুকে সতর্কতামূলক পোস্ট দিয়ে আমাকে এবং আমার পরিবারকে মানসিকভাবে দুর্বল করেন না। সহকর্মী হিসেবে পারলে আমাদের পাশে থেকে সাহস দেন। ফেসবুকে ঝড় তোলার সময় অনেক পাবেন। যারা লিখছেন তারা এসব না লিখে পাশে থাকেন। আর সেটা না পারলে এসব লিখে আর মানসিকভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলেন না। আঁখি এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। ওর জন্য দোয়া করেন। আঁখির দুই হাত, দুই পা, মুখের একাংশ অগ্নিদগ্ধ। আপনাদের দোয়াই ওকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে পারবে। আখির সামনে একটা এক বছরের যুদ্ধ।
অনলাইন নিউজ পড়ে ধূমপান নিয়ে আমার সহকর্মীরা ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন সবাইকে সাবধান করে, আপনারা চাইলেই আমাকে কল করে জেনে নিতে পারতেন কি হয়েছিল। এমন নয় আমার নম্বর আপনাদের কাছে নেই, বা আমাকে আপনারা কেউ চেনেন না। যারা লিখেছেন তাদের কাছেই প্রশ্ন - বাথরুমে সিগারেটের টুকরো পাওয়া গেছে এটা হাইলাইটস না করে বাথরুমে কেন মিথেন গ্যাস ছিল এটা প্রশ্ন করছেন না? সিগারেটটাই এখন বড় অপরাধ, মিথেন গ্যাস নয়। বাথরুমটা সাফোকেটেড ছিল কেন এই প্রশ্ন করছেন না কেউ? একটা এক্সস্টেড ফ্যান থাকা সত্বেও এয়ার পাসিং সিস্টেম প্রপার নয় কেন এই কথা মনে আসছে না কারও। সবচেয়ে সাধারণ বিষয় ধূমপান মেকাপ রুমেই সবাই করে। বাথরুমে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে কেউ করে না। এটা বোঝা সিম্পল কমনসেন্সর বিষয়। আমার জানামতে কোনো ফিমেল আর্টিস্ট কেমেল সিগারেটের মতো কম দামের সিগারেট খায় না। বাথরুমে পাওয়া কেমেল সিগারেটের একটা টুকরো দিয়ে প্রমাণ হয় না বিস্ফোরণের কারণ ধূমপান। কেমেল, ডারবি, স্টার সিগারেট আমি কোনো শিল্পীকে কখনও খেতে দেখিনি। নারী শিল্পীরা বাথরুমে গিয়ে স্প্রে করবে এটা কখনও দেখিনি বা শুনিনি। সবসময় মেকাপ রুমেই স্প্রে ব্যবহার করতে দেখেছি। পুলিশের এই ব্যাখ্যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।
অনলাইন পত্রিকার আমার যেই সাংবাদিক বন্ধুরা লিখছেন তারা কম বেশি প্রতিবেদন করার আগে আমাকে কল করেছেন, কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। কিন্তু লেখার সময় এই বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে অধিক ক্লিক বিটের জন্যে হেডলাইন করছেন ‘ধূমপান’ শব্দটিকে। যেখানে হেডলাইনে গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল একটি প্রফেশনাল শুটিং হাউজের বাথরুমে মিথেন গ্যাস কীভাবে জমে থাকে। সিগারেটের আগুন দিয়ে কখনও একটা বাথরুমের দরজা ব্লাস্ট হয়ে ভেঙে পড়ার কথা না। বিষয়টা এমন হয়ে যাচ্ছে কোন কমার্শিয়াল স্পেস সাফোকেটেড হয়ে মিথেন গ্যাসে পরিপূর্ণ থাকলে সমস্যা নেই। কিন্তু যাদের ভাড়া দিচ্ছেন, তাদের সাবধানে ধূমপান করতে হবে। আমি তো দুর্ঘটনার সময় থেকেই আখির পাশেই ছিলাম। আখির কাছে যেটা জানতে পেরেছি, সেটা আবারও বলছি। মেকাপ রুপ থেকে হেয়ার মেশিনের কাজ সেরে বাথরুমে যাওয়ার পর লাইটের একটা ফ্লিক অনুভব করে চোখে দেখি সেকেন্ডের জন্যে। এরপর ওর কিছু মনে নেই ব্লাস্টের শব্দ ছাড়া। প্রপার ইনভেস্টিগেসন রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এভাবে মনগড়া লেখা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। এটা একটা দুর্ঘটনা।দয়া করে ঘটনা কীভাবে ঘটেছে এটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সবাই আখির জন্য দোয়া করেন। পাশে থাকেন। ও আপনাদেরই সহকর্মী। পোস্টটি ফ্রেন্ডস করা। এই ব্যাখ্যা শুধুমাত্র আমার বন্ধু ও সহকর্মীদের জন্য।’
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন জানান, অগ্নিকাণ্ডে আঁখির শরীরের ৩৫ শতাংশ ফ্লেম বার্ন হয়েছে। বর্তমানে ফিমেল হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) ভর্তি আছেন তিনি। কিন্তু এখনও তাকে আমরা শঙ্কামুক্ত বলতে পারছি না।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান, তার অবস্থা এখন পর্যন্ত একইরকম রয়েছে। তেমন কোনো উন্নতি হয়নি তার। আমরা নিয়মিত অভিনেত্রীর দেখভাল করছি। সেরে উঠতে বেশ সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
মন্তব্য করুন