টয়লেটের পানি দিয়ে কারাগারে কফি বানিয়ে খেয়েছেন সেই অভিনেত্রী
দুবাইয়ে অডিশন দিতে গিয়ে মাদকসহ ধরা পড়েন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ক্রিসান পেরেইরা। এ মাসের এপ্রিলের শুরুতে ট্রফির মধ্যে চরস জাতীয় মাদকের প্যাকেট বহন করে শারজাহ বিমানবন্দরে ধরা পড়েছিলেন তিনি। প্রায় একমাস দুবাইয়ে হাজতবাস করতে হয়েছে ‘সড়ক ২’-এর অভিনেত্রীকে।
তবে তদন্ত জানা যায়, ক্রিসানকে ফাঁসিয়েছেন তারই প্রতিবেশী। মাদক পাচার করা অভিনেত্রীর উদ্দেশ্য ছিল না, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানতেনই না। তাই অবশেষে বেকসুর খালাস পেলেন ক্রিসান।
সুখবরটি পরিবারকে দেওয়া মাত্র আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন ক্রিসানের মা প্রেমিলা পেরেইরা। সেই ভিডিও ভাইরাল নেটদুনিয়ায়। মেয়েকে নির্দোষ প্রমাণ করার পেছনে মায়েরও কম চেষ্টা নেই! দেশে থেকেই লড়ে গিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে মুক্তি পেয়েই কারাগারের দুঃসহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করলেন ক্রিসান। ভারতীয় একাধিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ক্রিসানের কাছে জেলে কাটানো ২৬ দিন ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। জেলবন্দি জীবনের দুর্বিষহ যন্ত্রণার কথা ভাইকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন অভিনেত্রী। সেই চিঠিই সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন তার ভাই।
চিঠিতে ক্রিসান লিখেছেন, ‘প্রিয় যোদ্ধারা, জেলে একটা কাগজ আর কলম জোগাড় করতে আমার সময় লেগে গেল তিন সপ্তাহ পাঁচ দিন! আমি টাইড দিয়ে স্নান সেরে, টয়লেটের জল দিয়ে কফি বানিয়ে বলিউড ছবি দেখছি। কখনও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছে, এটা ভেবে যে আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা আমাকে এখানে এনে ফেলেছে। কখনও আমাদের সংস্কৃতি আমার মুখে হাসি ফুটিয়েছে, টিভিতে চেনামুখ দেখে ভালো লেগেছে। আমি ভারতীয় হিসাবে গর্বিত, ততটাই গর্বিত ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অংশ হিসাবে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা মহান, শক্তিশালী দেশ। দেশে ফিরতে তর সইছে না। আমার জীবনকে রক্ষা করার জন্য ধন্যবাদ। আমার মতো নিরপরাধী, যারা চক্রান্তের বলি হয়েছে তারা যেন সুবিচার পায়, সবসময়।’
এরইমধ্যে ক্রিসানকে মাদকচক্রে ফাঁসানোর অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন মুম্বাইয়ের বাসিন্দা অ্যান্থনি পল (৩৫) ও রাজেশ বুভাত (৩৫)। পল মালাদ এলাকায় একটি বেকারির দোকান চালান। অন্য দিকে, রাজেশ ওরফে রবি আবার নাম করা ব্যাংকের সহকারী ম্যানেজার।
এপ্রিলের ১ তারিখে দুবাইয়ে বিমানবন্দরে মাদকসহ গ্রেপ্তার হন ক্রিসান। পুলিশ জানতে পেরেছে, হলিউডের এক ওয়েব সিরিজে কাজের সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দেওয়া হয়েছিল ক্রিসানকে। তার মা প্রেমিলা পেরেইরাকেও ঠকানো হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত অ্যান্থনি পলই নাকি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল প্রমীলার প্রতি। তাই ফাঁসিয়েছে তার কন্যাকে। কী রকম?
জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ জানতে পারে, অতিমারির সময় প্রতিবেশী প্রমিলার সঙ্গে বচসা বেধেছিল পলের বোনের। প্রেমিলা পশুপ্রেমী। লকডাউনের মধ্যে পথকুকুরদের যত্ন করতেন খাওয়াতেন— এ নিয়েই সমস্যার সূত্রপাত। বোনের সঙ্গে একবার চড়াও হয়েছিলেন পলও, প্রেমিলার সঙ্গে হাতাহাতিতে তিনিও অংশ নেন বলে জানা যায়।
ওই ক্ষোভ থেকেই পল ফাঁদ পেতেছিলেন ক্রিসানকে বিপদে ফেলতে। ক্রিসানও পা দিয়েছিলেন সেই ফাঁদে। প্রে যখন বুঝতে পারেন তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা চলছে তখন তিনি দুবাইয়ে। অবশেষে বিষয়টি দুবাই পুলিশকে জানান তিনি। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত। সেখানকার পুলিশ উল্টো তাকেই গ্রেপ্তার করে বসে। তবে আশার কথা হচ্ছে মুম্বাইয়ের পুলিশ এরই মধ্যে মূল অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, তদন্তের সময় বোঝা যায়, সবটুকুই প্রতিশোধস্পৃহা থেকে পাতা পরিকল্পিত ফাঁদ। যাতে ধরা দিয়েছিলেন কর্মসন্ধানী ক্রিসান। বুধবার (২৬ এপ্রিল) মুক্তি দেওয়া হলো ক্রিসানকে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেশে ফেরার কথা জানিয়েছেন মুম্বাই পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মী গৌতম।
মন্তব্য করুন