বিচার যখন হবে, তখন সবাই চমকের বিপক্ষেই যাবে : আরশ
এ প্রজন্মের অভিনেতা আরশের বিরুদ্ধে অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ তুলেছেন অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমক। শুধু তাই নয়, শুটিং সেটে পুলিশও ডেকেছিলেন তিনি।
গত ৪ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় একটি নাটকের শুটিং সেটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ডিরেক্টরস গিল্ডে লিখিত অভিযোগ করেছেন নাটকটির নির্মাতা। বিষয়টি নিয়ে শোবিজ অঙ্গনে জোর চর্চা চলছে। এ ব্যাপারে আরশ খানের সঙ্গে কথা বলেছে আরটিভি।
আরটিভি : কেমন আছেন?
আরশ খান : আলহামদুল্লিলাহ, ভালো আছি।
আরটিভি : এই যে চলমান দ্বন্দ্ব, সেটার আসল কারণ কী?
আরশ খান: লাস্ট শুটিংয়ে নির্মাতা আদিফ হাসানের সঙ্গে চমকের একটু ঝামেলা হয়েছিল। সেই ঝামেলার কারণেই একপর্যায় ডিরেক্টর এবং মাসুম বাশার আঙ্কেল খেপে যান। পরবর্তীতে এই বেয়াদবির জন্য অ্যাক্টর সিকিউরিটি ও ডিরেক্টরস গিল্ডসে ওনারা অভিযোগ করেন। পুলিশ আসার পরে চমক অভিযোগ করেছিল, তখন আমি সত্যিটাই বলি। সেখানে আমার স্টেটমেন্ট বাশার আঙ্কেলের পক্ষে চলে যায়। কারণ, ওই পরিস্থিতে তিনি সঠিক ছিলেন। শুটিংয়ে তাদের সঙ্গে করা বেয়াদবি, শুটিং থেমে যাওয়া ও প্রডিউসারের লস হওয়া নিয়েই মূলত ঘটনাটা ঘটেছিল।
আরটিভি : সেদিন আসলে শুটিং স্পটে কী ঘটেছিল সংক্ষেপে বলবেন?
আরশ খান : সেদিন শুটিং সেটে চমকের ক্লোজ সিনের সময় ওর অভিনয় ভালো লাগায় প্রোডাকশন ম্যানেজার মামুন চমৎকার বলে। আর এটা কেন বলল—সেটা নিয়ে মামুনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে চমকের। সে বলে যে, আমার নাম চমক। আমাকে ছোট করে কথা বলছো। এসব নিয়ে ডিরেক্টরের সঙ্গে ঝামেলা হয়। একপর্যায়ে চমক বলে যে শুটিং করবে না। তখন আদিফ বলে যে, আপনি সকাল থেকে রিঅ্যাক্ট করছেন কিছু বলিনি, কিন্তু এখন শুটিং না করে চলে যাবেন—এর জরিমানা কে দেবে। চমক তখন আদিফকে বসায় গিয়ে টাকা নিয়ে আসতে বলে। কিন্তু আদিফ চমককে শুটিং স্পটেই টাকা দিয়ে যেতে বলে। আর এতেই চমক চিৎকার করে রুমের ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে বলে যে তাকে আটকে রাখা হয়েছে।
সেটে পুলিশ আনার কারণে বাশার আঙ্কেলের সঙ্গে চমকের অনেক ঝামেলা হয়। পুলিশ এসে মাসুম আঙ্কেলকে বলে যে আপনি নাকি মারতে চেয়েছেন। ঠিক ওই মুহূর্তে আমি বাশার আঙ্কেলকে সাপোর্ট করেছিলাম। চমক তাদেরকে বলে, বাশার আঙ্কেল আমাকে হিট করতে আসলে আরশ আমাকে বাঁচায়। তখন আমি পুলিশকে জানাই, এটা ভুল ইনফরমেশন। এখানে কেউ কাউকে হিট করতে বা বাঁচাতে যায়নি। ওনারা দুজনেই চিৎকার করছিল, আমি শুধু পরিবেশটা শান্ত করার চেষ্টা করছিলাম।
আরটিভি : চমকের সঙ্গে তো আপনার ভালো বন্ধুত্ব ছিল, হঠাৎ অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ কেন আনলেন তিনি?
আরশ খান : দেখেন এই যে পুরো ঘটনাটা বললাম, এই ঘটনার সাক্ষী আছে প্রায় ৩০-৪০ জন। এটার বিচার যখন হবে, তখন সবাই কিন্তু চমকের বিপক্ষেই যাবে। সেখানে জরিমানার বিষয় আছে, ও চাচ্ছে এখন এটা ঘুরিয়ে ফেলতে। মাসুম আঙ্কেলের বিরুদ্ধে যদি এমন একটা অভিযোগ আসতো, সেটা তো কেউ বিশ্বাস করতো না। সেখানে সুযোগ পেয়েছে—যে আমি তো এখানে ওকে সাপোর্ট দেইনি। চমকের বিপক্ষে বলেছি, এটা ইজি ওয়ে। আমি ওকে নিয়ে এটা বলে দিলে সেটা নিয়েই আলোচনা হবে। হয়েছেও কিন্তু সেটাই। আসল ঘটনা যেটা নিয়ে হয়েছে, সেটা নিয়ে কোনো আলোচনাই নেই, আলোচনা হচ্ছে আমাকে নিয়ে। অথচ সেদিন ঝামেলার সময় আমার কোনো ভূমিকাই ছিল না। আমি শুধু পুরো বিষয়টা শান্ত করেছি।
আরটিভি : আপনাদের বন্ধুত্ব কত দিনের?
আরশ খান : আমাদের বন্ধুত্ব একদম কাজের শুরু থেকেই। প্রায় দুই বছর হবে। আমি নিয়মিত কাজ করছি দেড় বছর ধরে। তবে আগে হয়তো ছয় মাসে একটা কাজ করতাম। ওই সময় থেকেই চমকের সঙ্গে আমার পরিচয়।
আরটিভি : ব্যক্তিগত এই দ্বন্দ্বে আপনার ক্যারিয়ারে কতটুকু প্রভাব ফেলেছে?
আরশ খান : ক্যারিয়ারে কোনো প্রভাব পড়েনি। আমার চরিত্র নিয়ে কথা উঠেছে। আমরা শোবিজে কাজ করি। কারণ, আমরা সবার কাছ থেকে একটা সম্মান পাই। রাস্তায় বের হলে, দর্শকরা দৌড়ে এসে ছবি তোলে, অটোগ্রাফ চায়, আমাদেরকে সামনে পেয়ে অনেকে কেঁদে দেয়, এই জিনিসগুলোই তো ভালো লাগা। এর মানে আমরা সম্মানটা পাই। সেই সম্মান নিয়ে ও কথা বলেছে।
আরটিভি : শিল্পী সংঘ থেকে যদি বিষয়টি নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেবেন?
আরশ খান : অবশ্যই নেব। আমার সংগঠনকে জানিয়েছি। যদি সেখান থেকে কোনো রেসপন্স না আসে, তাহলে এটা নিয়ে আমি কথা বলব। ধরুন একটা সেটে কারও সঙ্গে ঝামেলা হলো, সেখানে ও যদি আমাকে কোনো কারণ ছাড়া একটা চড়ও বসিয়ে দিতো, তা-ও ব্যাপারটা আপসে আসার মতো ছিল। যেখানে কথা বলেছে আমার চরিত্র নিয়ে, এটা তো হালকা করে দেখার কিছু নেই। কারণ, আমি এতোটুকু নার্ভাস না, ভীতুও না। যতগুলো সংগঠন আছে, সব জায়গাতে আমি সামনা-সামনি চমকের সঙ্গে বসে কথা বলব।
আরটিভি : শুটিং স্পটে চমককে থ্রেট দেওয়া হয়েছে, মূলত এ কারণেই তিনি ভয় পেয়ে পুলিশ ডেকেছিলেন?
আরশ খান : মিথ্যা কথা। শুটিং স্পটে চমককে কে থ্রেট দেবে। দেখেন, পতাকার যিনি ডিজাইনার ওনার স্ত্রী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই ভদ্রমহিলা ৫০ বছর ধরে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। আপনার কি মনে হয় উনি মিথ্যা কথা বলবেন। ওনার স্টেটমেন্টের ভিডিও আমার কাছে আছে। আগামী ১৩ তারিখে সংগঠনের বিচারটা হয়ে যাক। আমি সেটা সবাইকে পাঠিয়ে দেব। উনিও আসবেন সেদিন। বাশার আঙ্কেল এতোদিন ধরে কাজ করছেন, তিনি কি মিথ্যা কথা বলবেন। ওনাদের কি স্বার্থ আছে যে, একটা ছেলে কোনো মেয়েকে অসম্মান করেছে তাকে সাপোর্ট করবে।
আরটিভি : আপনি চমকের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন, এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কি?
আরশ খান : আসলেই তো এরকম কিছু হয়নি। আমি এখন পর্যন্ত ওই জায়গা থেকে কারও কাছে হেল্প চাইনি, কাউকে ফোনও করিনি। সেখানে যারা ছিলেন তারা সবাই কিন্তু আমার কথা বুঝতে পেরেছেন—আমি কি বলেছি। যদি এমন কোনো ঝামেলাই হতো তাহলে এতক্ষণে তো আমি ঠিক থাকতে পারতাম না। দেশের আইন তো এতো দুর্বল না যে, একজন মেয়েকে অসম্মান করা হলে তারা এখনও চুপ করে থাকবে। এটা পিঠ বাঁচানোর জন্য একটা শর্ট টার্ম। একটা পুরুষের নামে নেগেটিভ কিছু বলে দিলাম এবং আমি বেঁচে গেলাম। এটা তো এতো সহজ না।
আরটিভি : শুটিং স্পটে ঢুকেই ঠিক কী কারণে অভিনেত্রী চমক ঝামেলা করেছিলেন?
আরশ খান : শুধুমাত্র ফোন দেওয়ার কারণেই ঝামেলা করেছে। ওর কথা হচ্ছে—আমি অসুস্থ, আমাকে এতোবার কেন ফোন দেওয়া হয়েছে। শুটিংয়ের প্রথম দিন শট শেষ করার পর চমক নিজের গাড়িতে আমাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়েছে। যদি আমার চরিত্রে কোনো সমস্যাই থাকতো তাহলে তো ও আমাকে নিজের গাড়িতে বাসায় দিয়ে আসতো না কিংবা ও এতোদিন ধরে কাজ করতো না। আর হঠাৎ ওই দুর্ঘটনার পর বলছে যে, আমি ওকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছি। বিষয়টা কেমন হয়ে গেল না।
আরটিভি : চমক জানিয়েছেন শুটিং স্পটে ক্ষতি হতে পারে সেই ভয় থেকে পুলিশ ডেকেছিলেন, এ ব্যাপারে কী বলবেন?
আরশ খান : একটা শুটিং স্পটে কি হতে পারে, এতো মানুষের মাঝে কে ক্ষতি করবে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কখনও এমন হয়েছে? এখন কিন্তু সবার আলাদা সংগঠন আছে। সবাই কি আইন ব্রেক করে ওকে একসঙ্গে আক্রমণ করবে। এই ভয়ে চমক নিজের ল-ব্রেক করে সংগঠনের বিপক্ষে গিয়ে পুলিশ ডেকে ফেলল, এটা তো ঠিক না। আমি সংগঠনের সবার সঙ্গে কথা বলব। আশা করছি, তারাই এটা সমাধান করতে পারবেন। বিচারটা হয়ে যাওয়ার পর যখন প্রমাণ করে ফেলব, তখন সবাইকে ফোন দেব।
আরটিভি : এতো ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
আরশ খান : আপনাকেও ধন্যবাদ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য।
মন্তব্য করুন